জেন শর্টহ্যান্ড লিখতে পারে না বলে তিনি বললেন যে, তার সাহস আছে বুদ্ধি করে নোটবইয়ে কিছু আঁকজোঁক নিশ্চয় করতে পারবেন। আর আপনি ঘণ্টাখানেক পর তার সঙ্গে দেখা করবেন। প্রিন্স হোটেলের দোতালায়, ঠিক আছে, তখন আমরা নোটবই মিলিয়ে দেখব।
জেন তাকে অনুসরণ করলে গেল প্রতিবাদ করতে গিয়েও একঘণ্টা পরে প্রিন্স হোটেলে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিল।
মিঃ ক্ল্যান্সির বাড়িতে তারা দেখলে তার ঘর প্রচণ্ড অগোছালো। মিঃ ক্ল্যান্সি একটা ক্যামেরা ও ফিল্ম নিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। অতিথির নাম শুনে তিনি চোখ তুলে তাকালেন এবং চট করে ক্যামেরা আর না পরানো ফিল্মটা মেঝেয় ফেলে দুহাত বাড়িয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানান।
তিনি জেনকে তার সেক্রেটারি মিস গ্রে বলে পরিচয় দিলেন। এতে খানিকটা অবাক হলেন ক্ল্যান্সি। তার মনে হয় তিনি একজন চুলবাছার দোকানের সঙ্গে যুক্ত। পোয়ারো বললেন একজন দক্ষ সেক্রেটারি হিসেবে মিস গ্রেকে অমায়িকভাবে নানা ধরনের কাজ করতে হয়।
মিঃ ক্ল্যান্সি তার ভুল স্বীকার করে নিলেন এবং তিনি যে একজন বেসরকারী গোয়েন্দা তাই তার তারিফ করলেন।
তিনি তার রচনায় গোয়েন্দা উইলব্রাহাম রাইসের কথা বললেন। তিনি বললেন এই ঘটনায় তিনি রোমাঞ্চিত। তিনি মামলাটা নিয়ে অনেক ভেবেছেন। যদিও এই ঘটনাটা খুব দুঃখের, তবুও তার কাছে স্বীকার করতে বাধা নেই এটি তার পেশায় সাহায্য করেছে। তার কপালে শুধু সন্দেহ জুটেছে, যে ইনসপেক্টর বা বিচার যার কাছেই হোক, তিনি তদন্তে সাহায্য করতে চান, তাহলে ওরা তাকে সন্দেহ করবে।
এতে এরকুল পোয়ারো বললেন তাতে ওর কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না। ক্ল্যান্সি বলে চললো যে, ইনসপেক্টরকে তিনি তার পরের বইতে নাকানিচোবানি খাওয়াবেন। এই খুন তার কাছে ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে তিনি ভাবতে শুরু করেছেন। তিনি এই বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করেছেন। গল্পের নাম দিয়েছেন আকাশযানে হত্যা রহস্য। জেন বললো, মানহানি বা ওইরকম কোনো মামলায় পড়বেন না তো?
মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, সেটা বইয়ের কঠিন অধ্যায় সম্পূর্ণ অভাবিত সমাধান থাকবে একেবারে শেষ অধ্যায়ে।
পোয়ারোর উৎসুকতার জবাবে মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, প্লেনের চালক সেজে একটি মেয়ে লা বুর্জেত থেকে বিমানে উঠবে আর সাফল্যের সঙ্গে মাদাম গিজেলের আসনের নিচে লুকিয়ে থাকবে। তার সঙ্গে থাকবে এক শিশি অতি আধুনিক গ্যাস। এই শিশিটা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সব যাত্রী অচেতন হয়ে পড়বে মাত্র তিন মিনিটের জন্যে সেই সময়ে সে আসনের নীচ থেকে বেরিয়ে আসবে, আর বিষাক্ত তীরটা ছুঁড়ে দেবে, তারপর প্যারাসুট খুলে পেছনের দরজা দিয়ে লাফিয়ে পড়বে। জেন বললো, কোনো আসনের নিচে কেউ বসতে পারে না। জায়গায় কুলোবে না যে।
মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, আমার প্লেনে জায়গা থাকবে। চমৎকার–পোয়ারো বললেন। আচ্ছা মহিলাটির উদ্দেশ্য কি? এখনও পুরোপুরি ঠিক করিনি। সম্ভবতঃ গিজেলও ওই মেয়েটির প্রেমিককে সর্বস্বান্ত করলো।
মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, মেয়েটি সাপুড়ে, সে তার পোষা পাইথনের বিষ নিংড়ে নিয়েছিলো।
পোয়ারো বললেন যে, মিঃ ক্ল্যান্সি, পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন মনে করলেও তার সঙ্গে পোয়ারো আলোচনা করতে চান। মিঃ ক্ল্যান্সিকে জিজ্ঞাসা করা হল, তার মতে কে এই অপরাধ করেছে। তিনি বললেন, গল্প লেখার সময় যাকে খুশী অপরাধী করা যায় কিন্তু যখন ব্যাপারটা বাস্তবে ঘটে তখন সত্যিকারের একজন কেউ তা করেছে। পোয়ারো দুজনে একসঙ্গে কাজ করতে চান। তবে তার মতে ফরাসি দুজনের একজন খুনী কারণ ওরা মহিলাটির মতো ফরাসি এবং তারা মহিলাটির কাছে এসে বসেছিলো।
এটা খুনের উদ্দেশ্যের ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে, পোয়ারো নিশ্চিতভাবে বললেন। নিশ্চয়ই। আমার ধারণা, সমস্ত উদ্দেশ্যগুলোই বৈজ্ঞানিকভাবে নথিভুক্ত করেছেন?
আমার পদ্ধতি সেকেলে। আমি পুরানো প্রবচন মেনে চলি। অপরাধ করে কে লাভবান হচ্ছে খুঁজে বের করো। মিঃ ক্ল্যান্সি বলেন, খুব দামী কথা এটা কিন্তু এক্ষেত্রে এটা ঠিকমতো প্রয়োগ করা শক্ত। আমি শুনেছি মহিলাটির এক মেয়ে আছে, যে তার টাকাকড়ি পাবে। কিন্তু আরও অনেকেই হয়তো আরও লাভবান হবে, কারণ এটুকু আমরা জানি তাতে হয়তো এমন কেউ ছিলো যে তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলো এবং সেই টাকা শোধ দিতে চাইছিলো না। পোয়ারো মনে করেন যে তাকে কেউ খুনের চেষ্টা করেছিল এটা তিনি জানতেন। ক্ল্যান্সির মনে হয় এখন দেখতে হবে, যদি কেউ খুনের চেষ্টা করেছিল যদি হয় তাহলে আমাদের সবদিক চিন্তা করতে হবে তবে নিশ্চিতভাবে কিছু না জানা পর্যন্ত এই চিন্তাটা সুবিধার নয়।
মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, যে তিনি চ্যারিং ক্রশ রোজের থেকে বাঁকানল কিনেছিলেন, সেটা স্যরসোলেম দোকান বা মিচেল অ্যান্ডে স্মিথও হতে পারে, তবে সেটা তিনি ইনসপেক্টরকে বলেছেন।
পোয়ারো বাঁকানল কিনে দেখতে চাইলেন সেই দোকান থেকে। ক্ল্যান্সি বললেন, যে এটা পাওয়া শক্ত কারণ জিনিসটি দুর্লভ, পোয়ারো দোকানের নাম দুটো লিখতে বললো। মিস গ্রে তার খাতায় লেখার ভান করে নাম দুটো লিখে রাখলেন। পোয়ারো ও মিঃ ক্লান্সি অতিথিপরায়ণতায় খুশী হয়ে বিদায় গ্রহণ করতে চাইলেন।