আসলে স্টিফেন তার বিবাহিতা স্ত্রীকে এখনও বিচ্ছেদ দেয়নি বলেই তার চিন্তা।
ভেনেসিয়া জিজ্ঞাসা করল, কেন সে বিচ্ছেদে রাজি নয়।
আসলে সিসিলি তাকে বিচ্ছেদ দিতে চায় না, সে কিন্তু কারণ থাকলে বিচ্ছেদে রাজি। যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে ভেনেসিয়া স্টিফেনকে বিয়ে করতে চায়। স্টিফেন জানে তারা দুজনে সুখী জীবন কাটাতে পারবে।
স্টিফেন একটা সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল। ভেনেসিয়া তাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে চাইল। স্টিফেন তীব্র প্রতিবাদ করে উঠল।
ভেনেসিয়া বিদায় নিল। মুখ ঘুরিয়ে স্টিফেনকে বিদায় জানাতে গিয়ে দুজনের দৃষ্টিতে অনেক না বলা কথা বলা হয়ে গেল।
গলি থেকে বেরোনোর মুখে তার হাত থেকে চাবুকটা পড়ে যেতে একটা লোক তাকে তা তুলে দিল। সে একটু আনমনা ছিল কিন্তু বাড়িতে গিয়ে মনে হল লোকটাকে সে চেনে। ওই বেঁটে লোকটাই প্লেনে তাকে তার আসনটা ছেড়ে দিয়েছিলো। আদালতে ওরা বলাবলি করছিল–ও নাকি গোয়েন্দা। এই চিন্তার সঙ্গে সঙ্গেই তার একটা চিন্তা মাথায় আছড়ে পড়লো। ওই লোকটা এখানে কি করতে এসেছে।
.
১৩.
অ্যান্টোয়েনের দোকানে
বিচারবিভাগীয় তদন্তের পরের দিন সকালে জেন বেশ ভীতভাবে দোকানে ঢুকল যিনি নিজেকে অ্যান্টোয়েন বলে পরিচয় দেন, তার নাম আর্নল্ড লীচ। তিনি জেনকে অত্যন্ত ভৎর্সনা করলেন। অনেক বকুনি খেয়ে জেন রেহাই পেল। বাইরে এসে দেখল তার বন্ধু গ্ল্যাডিস তাকে ডাকছে।
গ্ল্যাডিস তাকে ভরসা দিল। সে ঘরে ঢুকতেই একজন মেহেদী রং-এর চুলওয়ালা মহিলা তার নিজের মুখটা কুৎসিত দেখাচ্ছে এটা বারবার বলছিলেন। মহিলাটির চুল বাঁধার জন্য জেন এলো এবং তিনি কি করতে চান। ভদ্রমহিলা জেনের কাছে তার প্লেনের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলেন। জেন কে নানারকম প্রশ্ন করে ভদ্রমহিলা জানালেন সেটা কি ঘটেছিল।
এরপর সেই আসত জেনের কাছে গল্প শোনার জন্য উদ্যোগী হয়ে চুল বাঁধতে আসত। একসপ্তাহে ধরে এই গল্প বলে জেন হাঁফিয়ে উঠেছিল। মাঝে মাঝে মনে হত কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে তাকে কয়েক ঘা কষিয়ে দেবে।
শান্তি পাবার উপায় খুঁজে না পেয়ে জেন তার প্রভুর কাছে মাইনে বাড়ানোর কথা বলল। তিনি বললেন খুনের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ার পরেও তাকে যে কাজে রাখা হয়েছে এটাই বড়ো কথা। জেন এত রেগে গেল এবং বলল যে সে অন্য জায়গাতে কাজ পেতে পারে। তার প্রভু বলল, তুমি যে ওখানে আছ তা লোকে জানবে কি করে, এমন কিছু তালেবর তুমি নও। সে বলল, আদালতে কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, তাদের একবার বললে তারা খবরটা ছাপিয়ে দেবে।
জেনের দাবী মানা হল, জেনে এরপর ঘটনাটিতে রং চড়িয়ে বলল। নরম্যান গেলের সঙ্গে তার আলাপ বাড়তে লাগল। তাদের দুজনের মধ্যে অনেক মিলই একরকম মনে হতে লাগল। তার বন্ধু গ্ল্যাডিস একদিন তার ব্যাগ থেকে গেলের একটা চিঠি উদ্ধার করল। জেন বলতে বাধ্য হল সে একটা দাঁতের ডাক্তার, যার সঙ্গে তার লা পিনেতে দেখা হয়েছিল। গ্ল্যাডিস জেনের সঙ্গে গেলের সম্পর্ক জেনে খুব আনন্দ পেল, নানারকম ঠাট্টা তামাশা করল।
ওই চিঠিটার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় ডিনার খাবার অনুরোধ করেছিলো। জেন হোটেলে খেতে গিয়ে তার একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। প্রথমে জেন তাকে চিনতে পারেনি। তারপর জানা গেল যে ওটি জ্যা জ্যাপ। গ্ল্যাডিস একটা নীতিবাক্য তাকে শুনিয়েছিল–যদি তোমার পিছনে একজন ঘোরে দেখবে নিশ্চিত আরো একজন আসছে। জেন ফরাসিদের একবারে বিশ্বাস করে না।
আপনি এখনও ইংল্যান্ডে আছেন তাহলে, জেন বললো, তার নিজের বিশ্রী ধারণার কথা ভেবে নিজেকেই অভিসম্পাত দিতে লাগলো। হ্যাঁ, বাবা এডিনবরায় গিয়েছেন একটা বক্তৃতা দিতে তাই বন্ধুবাবন্ধবদের সঙ্গে আমাকেও থাকতে হলো। কিন্তু আগামীকাল আমরা ফ্রান্সে ফিরে যাবো।
ও আচ্ছা।
আচ্ছা পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, তাই না। জা জ্যাপ বললো।
না কাগজে তো কিছু লেখেনি। হয়তো ওরা হাল ছেড়ে দিয়েছে। জ্যা জ্যাপ বললো, না, না, ওরা এতো সহজে ছাড়বে না। নিঃশব্দে কাজ করে ওরা অন্ধকারে কাজ সারে। জা দুপ বললেন, যে খুনের কথা ভাবলে খারাপ লাগে। জ্যাঁ জ্যাপ বললেন কে এই কাজ করেছে সেটা তিনি ভাবেননি কারণ ভদ্রমহিলাকে কুৎসিত বললে কম বলা হয়।
জেন বললো, আপনি একজন সুন্দরী মেয়ের চেয়ে একজন কুৎসিত মহিলাকে খুন করতেই বেশি ভালোবাসেন। মোটেই না, একজন মহিলা যদি সুন্দর হয়–আপনার তাকে ভালো লাগবে– সে আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে–হিংসেয় পাগল করে তুলবে। আপনি তখন হয়তো বলবেন, দাঁড়াও ওকে আমি খুন করবো, তবে শান্তি।
এতে শান্তি পাওয়া যাবে? তা তো আমি জানি না, মাদমোয়াজেল কোনদিন কুৎসিত বুড়ীকে কে খুন করতে যাবে।
মেয়েদের নিয়ে জ্যাঁ জ্যাপ আলোচনা করছিলেন। তার মতে ইংরেজরা তার স্ত্রীর প্রতি নজর কম দেয়। এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে করতে তিনি বললেন যে লেডি হরবেরিল তার ধাত আমাদের জানা আছে। যেমন সুন্দর–তেমন খরচসাপেক্ষ। জুয়ার টেবিলে এদের বেশি দেখা যায়–উত্তেজনা ভালোবাসেন এরা। যাই হোক, ওঁকে দেখে আমার খুব ভালো লাগেনি। মিয়কার একেবারে পাক্কা ইংরেজ। সুন্দর ছাঁটের পোশাক অবশ্য একটু পুরুষালি ঢঙের। এমনভাবে হাঁটেন, যেন তারা দুনিয়াটাকে কিনে রেখেছেন। ইংল্যান্ডের কে কোথায় থাকে সব নখদর্পণে। আর জেনকে তার খুব ভালো লেগেছে। তার মনে হয় যে ভগবান মাঝে মাঝেই এইরকম যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন।