ফার্নে বললেন মামলাটা ক্রমশই ঘোরালো হয়ে উঠেছে। একজন মহিলার পিছনে ধাওয়া করতে গিয়ে এক আমেরিকানকে পাওয়া গেল। পোয়ারো বললেন, এখানে আমেরিকান সাজা খুব সোজা।
সাঁতারের পোশাক পরা ছবিটা পোয়ারো বারবার দেখতে লাগলেন এবং বললেন যে তিনি অভিনয় করতেন বটে–তবে এইরকম ভূমিকায় একজন মহিলার অভিনয় করা সম্ভব নয়।
.
১২.
হরবেরিল চেজ-এ
লর্ড হরবেরিল খাবার টেবিল আঁকড়ে ধরে আত্মসংবরণ করার চেষ্টা করছিল। তার বয়স সাতাশ। দেখলে মনে হয় তেমন বুদ্ধি নেই, দরদী মন, রুচিজ্ঞানের কিছুটা বাড়াবাড়ি আছে, দারুণ কর্তব্য পরায়ণ আর ভীষণ একগুঁয়ে। তার খাওয়া হয়ে গেলে তিনি মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে চিন্তা করে ওপরে উঠে গেলেন। তারপর তিনি ওপরে একটা ঘরের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলেন। যতক্ষণ না ঘরের ভিতর থেকে সিসিলি হরবেরী তাকে ঢুকতে বললেন।
সিসিলি হরবেরিল বসে বসে সকালের জলখাবার খাচ্ছিলেন। তিনি শুয়ে শুয়ে চিঠির খাম খুলছিলেন। লর্ড স্টিফেন তার স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাইলেন। লেডি তার পরিচারিকা ম্যাডেলিনকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। লর্ড হরবেরিল তাঁর স্বামী, তিন বছর আগে তিনি তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করেছিলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন এখানে আবার কেন সে ফিরে এসেছে, কেননা তার পেছনে কোনো কারণ আছে। লর্ডের স্ত্রী বললেন যে ও-কারণ। লর্ড হরবেরিল মনে করেন তাদের দুজনের যা সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে তাতে একসঙ্গে থাকার কোনো মানে হয় না। শহরের বাড়িটা আর প্রচুর অর্থ সে পাবে। একটা নির্দিষ্ট পর্যন্ত সে তার ইচ্ছামতো চলতে পারবে তাহলে হঠাৎ সে ফিরল কেন?
সিসিলি বলল, তার মনে হয়েছে এটাই ভালো। তার মানে আমার ধারণা তুমি টাকার কথা বলতে চাইছো। হায় ভগবান তোমাকে কি বলে ঘৃণা দেখাবো। তোমার মতো নীচ লোক দুনিয়ায় দুটো নেই। নীচকর..তা ঠিক তুমি আর তোমার কাণ্ডজ্ঞানহীন অপচয়ের ফলে হরবেরিলর জমিদারী যখন বাঁধা রাখতে হয়েছে, তখন নীচ তো আমায় বলবেই।
সিসিলি বলেছেন যে হরবেরিলর চাষীদের নিয়ে তার যত মাথা ব্যথা। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে খুব ঝগড়া হল। এ থেকে এ জানা গেল সিসিলি হরবেরিল বাজে খরচায় বিরক্ত হলে লর্ড হরবেরিল তাকে সহ্য করতে পারেন না। লর্ড হরবেরিল তার থেকে মুক্তি পেতে চান। কিন্তু সিসিলি তা দিতে চান না। সিসিলির ব্যাবসা তার ধারদেনার জন্য লর্ড যে দায়ী থাকবেন না এটা কেন তিনি খবরের কাগজে জানিয়েছেন। এটা ঠিক হয়নি স্বীকার করে লর্ড বললেন যে, তিনি কেন আবার হরবেরিলতে ফিরে এলেন। সিসিলে মনে করেন এই মুহূর্তে এটাই ভালো বলে মনে হয়েছে।
লর্ড হরবেরিল তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন তিনি মাদাম গিজেলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন কিনা? মাদাম সিসিলি এটা অস্বীকার করতে চান এবং বললেন যে এটা ঠিক না। লর্ড বললেন, সত্যিই তিনি যদি টাকা নিয়ে থাকেন তাহলে যেন স্বীকার করেন–তদন্ত হচ্ছে। মহিলাটি লেনদেনের নথিপত্র থেকে যদি বেরিয়ে পড়ে যাতে তুমি জড়িয়ে পড়। তার জন্য আগে থেকে আইনী পরামর্শ নিতে হবে।
সিসিলি বললেন, আমি কি আদালতে দাঁড়িয়ে বলিনি যে, ওই মহিলাটির নামও আমি কখনও কানে শুনিনি। তাতে বেশি কিছু প্রমাণ হয় বলে আমি মনে করি না। যদি তুমি এই গিজেলের সঙ্গে লেনদেন করে থাকো, পুলিশ তা খুঁজে বার করবেই, এ বিষয়ে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো।
সিসিলি ভয়ানক রেগে গেল এবং সে যে খুন করেনি এটা বলল। লর্ড বললেন যে, তিনি পারিবারিক সুনাম নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত তাই সিসিলি হরবেরিল যদি এরকম কোনো কাজ করেন তাহলে তার পারিবারিক সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। লেডি মনে করেন যে, এই ভদ্রলোক তিনি মারা গেলে খুব খুশীই হবেন।
লর্ড হরবেরিলর মাথায় চিন্তা ঘুরতে লাগল, তিনি মনে করেন…ও যদি কালকেই মারা যায় আমি খুশী হবো? হ্যাঁ, তবেই তো জেল থেকে বেরোনো লোকের মতো স্বস্তি পাবো আমি। প্রথম যখন লেডির সঙ্গে তার দেখা হয় তিনি তার শিশুর মতো পবিত্রতায় ভুলে গেছিলেন আর…এখন…ও একটা ইতর, দুশ্চরিত্র, বদমাইশ, মাথামোটা…যে রূপ আমার চোখে পড়ে না।
তিনি রাস্তায় বেরোলেন। একটি সরু গলির মধ্যে ভেনেসিয়ার সঙ্গে দেখা। ভেনেসিয়াকে তিনি বললেন যে, সিসিলি এখানে আছে। শুনে ভেনেসিয়া আশ্চর্য হলেন। লর্ড স্টিফেন হরবেরিল তার কাছে মামলার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। ভেনেসিয়া বলল, না কেউ তেমন মুখ খুলছে না। আশাকরি আমি কি বলছি বুঝতে পারছ।
ভেনেসিয়া একটু হেসে স্টিফেনের প্রশ্নের উত্তরে জানালো আর যেই হোক সিসিলি খুনী নয় কারণ উভয়ে উভয়ের দিকে নজর রেখেছিল। স্টিফেন ভেনেসিয়াকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সঙ্গে তো অনেক কালের চেনা পরিচয় তাই না?
–হু! সেই ছোটোবেলায় আমরা নাচের স্কুলে যেতাম, তোমার মনে আছে!
মনে আবার নেই, ভেনেসিয়া, তোমাকে কটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে
বল–সিসিলি সম্পর্কে তাই না?
হা। আচ্ছা ভেনেসিয়া, সিসিলির কি ওই গিজেল মহিলাটির সঙ্গে কোনো জানাশোনা ছিলো। ভেনেসিয়া বললেন, তিনি জানেন না। তিনি ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে ছিলেন। তিনি এখনও লা পিনেতের গল্প শোনেননি।
ভেনেসিয়া বললেন, যে স্ত্রী-হারা স্টিফেন একা একা জীবন কাটিয়েছে, তাহলে এ ব্যাপারে সে কেন আগ্রহী?