জেরোপুলাস বললেন ডেস্কের ওপর একাট মাপ করে দেখলেন এইরকম মোটা, হালকা রং-এর চারটে তীর ছিলো। যাতে লম্বা লম্বা তীক্ষ্ণ কাটা, ডগাগুলোর একটু রং চটে গেছিল যাতে লাল সিল্কের ফেঁসো জড়ানো ছিলো। ফার্নে বললেন, ওই তীরগুলোর একটাতে কালো ও হলদে রং-এর ফেঁসো জড়ানো ছিল না–আপনি ঠিক বললেন, না মঁসিয়ে, এটা জেরোপুলাস জানালেন। ফার্নে একপলক তাকিয়ে হাসলেন, পোয়ারো হাসির কারণ খুঁজে পেলেন না।
তিনি একটু দোনামনা করে বললেন, খুব সম্ভবত আমাদের মামলার সঙ্গে এই বাঁকানল আর তীরের কোনো সম্পর্ক নেই। পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনা বোধহয় নেই। তবুও ওই আমেরিকান সম্পর্কে যতদূর সম্ভব খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন।
জেরোপুলাস বললেন, অনেক আমেরিকান আসে যায়। তাই তাকে ভালো করে দেখেননি। এবং বললেন সে নাকে কথা বলে। ফরাসি বলতে পারে না। চিউইংগাম চিবোচ্ছিল। কচ্ছপের খোলার চশমা বেশ লম্বা আর বয়স বেশি বলে মনে হল না।
তবে কোনো আসবাবপত্র পাওয়া না গেলে ফার্নে বললেন, আমরা বুনো হাঁসের পেছনে ঘুরে মরছি।
মঁসিয়ে জেরোপুলাসের বক্তব্য থেকে দু-একটা মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। তারা দুজনে ক্যপুনিকাস বুলেভার্ডে যাওয়া ঠিক করেন। পোয়ারোর মত মেনে নিয়ে ফার্নে বলেন যে ইউনিভার্সাল এয়ারলাইন্সের অফিস থেকে তারা কিছু কিছু তদন্তের কাজ সেরে রেখেছে। দরকারী কোনো খবরই ওরা দিতে পারেনি।
পোয়ারো ফার্নেকে বললেন, তা বেশ কিন্তু কোনো কিছুর জবাব নির্ভর করে তার প্রশ্নের উপর। কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে তা নিশ্চয়ই জানেন না।
আপনি জানেন কি?
তা–আমার একটা নির্দিষ্ট চিন্তা আছে। ফার্নে বললেন–এর বেশি আর কিছু বলতে তিনি রাজি নন।
যথাসময়ে তারা ক্যপুনিকাস বুলেভার্ডে পৌঁছে গেলেন। এই অফিসটি ছোটো। একজন ছোটো ছেলে বসে টাইপ করছে ও একজন চটপটে লোক বসে কাজ করছে। ফার্নে পরিচয় দিলে সেই ভদ্রলোক, জ্বলে পরো উঠে দাঁড়ালেন। ছেলেটিকে সরিয়ে দেওয়া হল। পোয়ারো তার কাছে কিছু গোপনীয় কথা জিজ্ঞাসা করলেন। জ্বলেপোরোকে মাদামের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন এ প্রশ্নের জবাব তিনি দিয়েছেন। কিন্তু তবুও তিনি বললেন যে মাদাম ১৭ তারিখ টেলিফোন করে আসন সংরক্ষণ করেন। তিনি সকাল ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনের টিকিট চেয়েছিলেন কিন্তু প্লেনে আর জায়গা ছিল না বলে তাকে ১২ টার প্লেনের টিকিট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটা রহস্যজনক মনে হয়।
আমার এক বন্ধু কয়েক মিনিটের সিদ্ধান্তে ইংল্যান্ড যাওয়া মনস্থ করেছিল। আর ওই ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনেই সে ইংল্যান্ডে গিয়েছিল। প্লেনের অর্ধেক আসন খালি ছিলো সেদিন। মিঃ পোয়ারো খাতাপত্র ঘেঁটে বললেন, সম্ভবতঃ আপনার বন্ধু দিনটা ভুল করেছেন। আগের দিন বা তার আগের দিন হলে
মোটেই না। এটা ওই খুনের দিনই। কারণ আমার বন্ধু বলেছিল যে, সে যদি সকালের প্লেনে জায়গা না পেত, তাহলে সেই প্রমিথিউস বিমানের একজন যাত্রী হতে পারত।
এটা শুনে মিঃ পোরোর রহস্যময় মনে হয়। তিনি এটা জানার জন্য লা বুর্জেতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান কারণ তার মতে ওরা সবসময় নির্ভুল কাজ করে না।
পোয়ারোর সন্ধানী দৃষ্টিতে পোরো বেশ অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। তার কথা পোয়ারোর বিশ্বাস হল না।
পোয়ারো তাকে পরিষ্কার ভোলাখুলি বলতে বললেন। তিনি বললেন, তার কথা তিনি ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। মিঃ পোয়রাকে বলা হল তিনি যদি কোনো কথা চেপে যান বা মিথ্যে বলেন তাহলে তিনি ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছেন তা ধরা হবে।
এটা শুনে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। পোয়ারো বললেন যে, কত টাকা আপনি পেয়েছেন। কে দিয়েছে। কোনো ক্ষতি হবে ভাবিনি-মানে আমার ধারণাই ছিলো না–একবারও বুঝতে পারিনি যে–কত টাকা এবং কে দিয়েছে, ও পা-পাঁচ হাজার ফ্রা। লোকটাকে আগে কখনও দেখিনি। আমি…আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেল।…মিঃ পোরো বললো।
পোয়ারো বলল, একজন লোক ভেতরে এসে বলল যে সে ইংল্যান্ডে যাবে। সে মাদাম গিজেলের কাছে ধার নিতে যায়। সে কিছু না জানিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চায়। তার বক্তব্য এতে সে ভালো ফল পাবে। সে বলল সে জানে যে মাদাম পরের দিন ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন। তাকে শুধু এটুকু কাজ করতে হবে মাদামকে জানাতে হবে যে সকালের সব আসন ভর্তি এবং প্রমিথিউস বিমানের দু-নম্বর আসনটা তাকে দিতে হবে। সে শপথ করে বলছে, মঁসিয়ে এতে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে সে বোঝেনি। এতে আর অসুবিধে কি? এই কথা সে ভেবেছিল। আমেরিকানরা ওইরকম হয় এরকম উদ্ভট কাজের রীতি ওদের।
আমেরিকান ভদ্রলোকের চেহারার বর্ণনা জানালেন–লম্বা, একটু কোল কুঁজো, পশুর শিং এর ফ্রেমওয়ালা চশমা আর অল্প ছাগলদাড়ি।
তার আসনটা মাদামের আসনের পাশে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ভদ্রলোকের নাম ছিল সাইলাস হারলার।
কাগজে দেখা গেছিল ওই নামে কোনো লোক প্লেনে ছিল না। তাই মিঃ পোয়রা আর এই কথাটা পুলিশকে বলেনি।
মঁসিয়ে পোয়ারো জানালেন যে তিনি যে এই তথ্যটা পেয়েছেন কিভাবে। প্রথমতঃ তিনি আজ সকালে শুনেছেন একজন লোক খুনের দিন প্রায় ফাঁকা প্লেনে লন্ডন গেছেন আবার এলিস বলেছিলো সকালের প্লেনে কোনো জায়গা নেই। এই পরস্পর বিরোধী মন্তব্য তার মনে আছে। প্রমিথিউস বিমানের পরিচারিকাটি বলেছিলো যে এর আগে মাদাম গিজেলকে সকালের প্লেনে যেতে দেখেছে–সুতরাং সকাল ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনে যাওয়াই তার অভ্যাস ছিল। কিন্তু কেউ একজন চেয়েছিলো তিনি, ১২টার প্লেনে যান। এমন কেউ যে আগে প্রমিথিউস যাবার ঠিক করে রেখেছিল। কেন ওই কেরানীটি বললেন যে, সকালেই সব আসন ভর্তি হয়ে গেছে? ভুল না ইচ্ছাকৃত মিথ্যে? আমি শেষেরটাকে বেছে নিয়েছিলাম আর সম্পূর্ণ সঠিক আমি।