পোয়ারো জর্জেসের কাছে জেরা শেষ করে কালো রং-এর নোটবইটা বের করলেন। ফার্নে পুলিশের দেখা নাই, সকলের গায়ে জ্বর আসে। এই জন্য বেসরকারী গোয়েন্দা পুলিশের চেয়ে অনেক বেশি খবর জোগাড় করতে পারে। আমাদের হাতে সরকারী নথিপত্র আছে, এই বিরাট কর্মকাণ্ডের আসল চাবিকাঠি কিন্তু আমাদের হাতে।
ফার্নে নোটবই বের করে লিখছেন যা সেটা পোয়ারোকে দেখালেন।
C.Z. ৫২। ইংরেজ লর্ডের পত্নী। স্বামী।
R.T. ৩৬২। ডাক্তার, হার্নে কীট।
M.R. ২৪। নকল দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন বস্তু বিক্রেতা।
x.v.B. ৭২৪। ইংরেজ। তহবিল তছরুপকারী।
G.F. ৪৫। খুনের চেষ্টা করেছিলেন। ইংরেজ।
পোয়ারো বললেন ফার্নের সঙ্গে তার মনও একদিকে এগিয়ে চলেছে।
তাদের নোটবই-এ দেখে তার গতিবিধি নির্ধারণ করলেন। প্রথম সন্দেহ ইংরেজ লর্ডের পত্নী। ইনি হলেন লেডি হরবেরিল। তিনি যে গিজেলের কাছ থেকে টাকা নেবেন এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। গিজেলের মক্কেলরা সাধারণত ওই ধরনের। কিংবা তার স্বামীর দেনা তিনি শোধ করবেন এটা হতে পারে সংক্ষেপে বলতে গেলে এই দুটোর যে কোনো একটা অবশ্যই প্রযোজ্য হবে। ফার্নের মতে ইংল্যান্ডে সবার আগে রাত্রে লেডি হরবেরিলর সাথে গিজেল দেখা করেছিলেন। পোয়ারো তার সাথে এ ব্যাপারে একমত। তারা মনে করছেন জর্জেস স্কেচ পত্রিকায় যে ছবি দেখে চমকে উঠেছিলেন তা থেকে এটাই প্রমাণ হয় সেদিন ভদ্রমহিলা লেডি হরবেরিল ছিলেন।
লা পিনেত থেকে প্যারিস পর্যন্ত মাদাম গিজেলের পিছু নিয়েছেন-এর থেকে প্রমাণ হয় তিনি খুব বেপরোয়া। পোয়ারো বললেন, এটা সত্যি হতে পারে।
ফার্নে বললেন যে বেসরকারী চিন্তাভাবনার সঙ্গে এটা খাপ খায় না। তাই তারা দুজনেই আলাদাভাবে চিন্তা করলে এটাই ঠিক হবে। কারণ কোনো কিছু ভুল সূত্র হলে তা বারবার ভুল দিকে নিয়ে যাবে।
ডাক্তার ব্রায়ান সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন। তবে তিনি ইনসপেক্টর জ্যাপের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন না।
মঁসিয়ে দ্যুপ–দুজনের সৎচরিত্রের কথা স্বীকার করলেও উভয়েই এটা মানতে রাজি নয়। একজন জালিয়াতের এক নম্বর পুঁজি হচ্ছে সুনাম, সেক্ষেত্রে এরা দুজন সন্দেহের উর্ধ্বে নয়।
x.V.B. ৭২৪ এটা খুবই অনিশ্চিত ইংরেজ। তছরুপকারী–ফার্নে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আস্থাভাজন যে কেউই তছরুপ করতে পারে। যে কেউই চুরি ঢাকার জন্য মাদাম গিজেলের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারে।
শেষের নামটি নিয়ে তারা ব্যাপক সুযোগ পাচ্ছেন–সাহিত্যিক, দাঁতের ডাক্তার, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী চুল বাঁধার সহকারিণী, পরিচারক যে কোনো লোক হতে পারে, কারণ তারা সকলেই ইংরেজ, উঁপ দুজনে ফরাসি হবার জন্য এই তালিকা থেকে বাদ।
এরপর তারা দুজন গোয়েন্দা দপ্তরে এলেন। তাদের সামনে ছিলেন সঁসিয়ে গিলস যিনি গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। তিনি পোয়ারোকে সেই মামলায় রুচি আছে জেনে অত্যন্ত প্রীত হলেন।
একটা প্রবাদ আছে, পেট ঠিক থাকলেই সেনারা দৌড়াতে পারে। তারা গিরাদ নামক একজন গোয়েন্দার কথা বললেন। উদ্যমে গিরাদের মতন আর কেউ নেই।
মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন, ফার্নের মতো একজন মনস্তত্ব বিশারদ থাকার জন্য খুশী হওয়া উচিত।
গিলস বললেন যে প্লেনের মধ্যে বাঁকানল ছুঁড়ে হত্যা তাও আবার মাদাম গিজেলের মতো পরিচিতা মহিলার এও কি সম্ভব। পোয়ারো হৈ-হৈ করে উঠলেন, এটা ঠিক বলেছেন। ফার্নেকে দেখে পোয়ারো বললেন, তার কাছে নিশ্চয়ই কোনো সংবাদ আছে। ফার্নে বললেন জেরোপুলাস নামে একজন প্রাচীন গ্রীক বস্তুবিক্রেতা জানিয়েছে খুনের তিন দিন আগে সে একটা বাঁকানল আর কটা তীর বিক্রি করেছে। তার প্রস্তাব যে সেই ভদ্রলোককে একবার জেরা করা হোক।
জেরোপুলাসের দোকানটা সেন্ট টলার স্ট্রিটে। খুবই উঁচু মানের দোকান। নানান দেশের মৃৎপাত্র, ব্রোঞ্জের দু-একটা জিনিস, নানারকম পুলিপাথর-গয়না প্রভৃতি হাজারো জিনিসে দোকানটা ঠাসা। জেরোপুলাস নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন, যে সে একটা বাঁকানল আর কটা তীর বিক্রি করেছে যা দক্ষিণ আমেরিকায় দুর্লভ। ওসব জিনিস তিনি কমই বিক্রি করেন। শ্রদ্ধেয় মঁসিয়ে দ্যুপ সব কথা জানেন। তিনি নানারকম জিনিস (সেগুলিকে তিনি বিদেশী জঞ্জাল বলেছেন) নাবিকদের কাছ থেকে একেবারে জলের দরে কেনে।
জেরোপুলাস বললেন যে, এই বাঁকানলটা আর তীরগুলো অনেকদিন ধরে আমার কাছে ছিলোতা ধরুন বছর দুয়েক আছে। ওই যে ওই থালাটার উপর ছিলো–ওর সঙ্গে ছিলো একটি কড়ির মালা, একটা লাল রং-এর ভারতীয় পাগড়ি, দু-একটা কাঠের তৈরি আস্ত হস্তি আর কটা সস্তা জেড পাথর। এই আমেরিকান ভদ্রলোকটি ছাড়া কেউ কখনো জিজ্ঞাসা করেনি ও জিনিসটা কি? ফার্নে ভদ্রলোক আমেরিকান, মানতে চাইলেন না। আমেরিকান সেই ভদ্রলোকটিকে এটা খুব প্রাচীন জিনিস এবং এরকম জিনিস বাজারে না মেলালেই চলে। তিনি দাম জিজ্ঞাসা করতে একটা বড়ো দাম, হাঁকেন। তাতে ভদ্রলোক দরদস্তুর না করে এটা নিয়ে নেন। যখন খুনের কথা তিনি পড়েন তখন তিনি নিজে সন্দিগ্ধ হয়ে পুলিশকে একথা জানান।
ফার্নে নম্রভাবে বললেন, তিনি তার কাছে কৃতজ্ঞ, সেই বাঁকানল এবং তীরটা আপনি চিনতে পারবেন। এখন সেগুলো লন্ডনে রয়েছে, কিন্তু ওগুলো শনাক্ত করার সুযোগ তাকে দেওয়া হবে।