মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন যে, তিনি কি কিছু খুঁজেছেন, মাদাম গিজেল বা তার পরিবারের কোনো ছবি।
এলিস বললেন, তার কোনো পরিবার ছিল না। পোয়ারো তার মেয়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বললেন একটা মেয়ে ছিল। তাকে তিনি খুব ছোটো বয়সে দেখেছিলেন। তারপর আর দেখেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান মেয়েটি তার বিবাহের পূর্বের সন্তান। তিনি খুব সন্দরী ছিলেন। বাচ্চাটার একটা বন্দোবস্ত হবার পর, মাদামের জলবসন্ত হয়। তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বেঁচে ওঠেন এবং সমস্ত ব্যবস্থা করে মাদাম ব্যাবসা নিজে দেখতে থাকেন। তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি তার মেয়েকে দিয়ে গেছেন। মাদাম নিঃসঙ্গ ছিলেন। তিনি তার টাকার থেকে খুব কম খরচ করতেন। তিনি বিলাসী ছিলেন না। মাদাম যে তাকেও দয়া করে টাকাপয়সা দিতেন।
ফার্নে যাবার আগে জর্জেস-এর সঙ্গে কিছু কথা বলে যেতে চান। পোয়ারো তখন এলিসকে জিজ্ঞাসা করলেন কে তার কত্রীকে খুন করেছে বলে মনে হয়। তার মনে হয় না কে খুন করেছে বা তার ধারণা নেই, একথা তিনি বললেন। এলিস পুলিশের লোককে অন্য কথা বলতে পারেন এটা বলতে তিনি খুব রেগে যান। পোয়ারো বললেন পুলিশকে খবর দেওয়া এক জিনিস আর কোনো বেসরকারী ব্যক্তিকে বলা এক জিনিস। পোয়ারো বললেন যে তিনি একজনকে যখন সন্দেহ করছেন যতক্ষণ না সন্দেহের অবকাশ হচ্ছে ততক্ষণ সে অপরাধী।
এলিস গ্রেঞ্জার, তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে ভেবে ভীষণ রেগে গেলেন। পোয়ারো বললেন মাদামের খুনের ব্যাপারে আপনি প্রত্যক্ষভাবে না হোক, পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন। আপনি হয়তো মাদামের ভ্রমণসূচীর যথাযথ বিবরণ কাউকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বললেন তিনি তা করেননি। পোয়ারো বললেন তাকে বিশ্বাস করলেও, তার মতে অপরাধমূলক মামলায় আমরা দেখেছি সাক্ষীদের জেরা করার সময় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু গোপন করে।
মঁসিয়ে ফার্নে বললেন যে তিনি একটু মুশকিলে পড়েছেন। তিনি জানেন না কি করলে মাদাম খুশী হতেন। মাদামের বিশ্বস্ততাকে তিনি হারাতে চান না। তার পরলোকগতা কত্রীর পক্ষে বিশ্বাস রেখে বললেন। তিনি বললেন যে মাদাম তার প্রতি খুব সদয় ছিলেন। একথা স্বীকার করতে লজ্জা নেই যে তিনি নিঃসহায় এক মহিলা ছিলেন, যার একটি সন্তান ছিলো, তিনি বাচ্চাটাকে ভালো খামারে মানুষ করতে পাঠান। তখন তিনি মাদাম যে সন্তানের মা সেটা বলেন, এবং আরো বলেন যে ছোট্ট মেয়েটির জন্য তিনি ভালো ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে হয়তো কোনো ভালো ব্যাবসা বা পেশায় লেগে যাবে। তাছাড়া মাদামের মৃত্যুর পর সব টাকাকড়ি সেই পাবে। তার ধারণা মতো শিশুটির বাবা একজন ইংরাজ নির্দিষ্ট কিছু নয়। তবে এলিস মনে করেন মাদামের ব্যবসায়িক লেনদেনে তিনি ইংরাজ সমাজের উঁচুতলার লোকদের বেশি শোষণ করতেন।
এলিস বললেন তার মেয়ে পাঁচবছর হলো মারা গেছে। তিনি কয়েক মিনিট পর একটা ছোটো নোটবই দিলেন। যেটা মাদামের একান্ত দরকারী ছিল। তিনি চলে যাবার পর এলিস সেটা খুঁজে পান। মাদামের কোন নির্দেশ না থাকায় সেটাকে তিনি পুড়িয়ে ফেলতে পারেননি। এলিস যখন মাদামের মৃত্যু সংবাদ শুনলেন এটা জানতে চাইলে। এলিসকে বললেন যে তিনি মারা যাবার পর পুলিশের কাছে তিনি কাগজ পোড়ানোর কথা স্বীকার করলেও তিনি অনেক পরে ওগুলো পোড়ান। তিনি বললেন যে পোয়ারো, যেন একথা পুলিশকে না বলেন। এলিসকে পোয়ারো বললেন যে মাদামের কাগজ পুড়িয়ে তিনি ভালো মন নিয়েই কাজ করেছেন।
সেই নোটবইটা মাদামের ব্যক্তিগত স্মারকলিপি, ওতে মাত্র কয়েকটা সংখ্যা লেখা আছে। উপযুক্ত দলিল ও ফাইলপত্র ছাড়া সংখ্যাগুলো একেবারে অর্থহীন–এটা, এলিস বললেন।
নোটবইতে সময়, স্থান, যোগাযোগ করার কথা লেখা ছিল। এলিসের মত ছিল এটা প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু এটা খুব মূল্যবান জিনিস মনে হল মিঃ পোয়ারোর কাছে। এলিসের অভিমত নিয়ে তিনি এই ডায়েরিটা পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলেন এবং এটাও বলেন যে তাকে যেন পুলিশ কোনো দোষারোপ না করেন এটা যেন তিনি দেখেন।
মাদামের আসন সংরক্ষণের জন্য তখন এলিস যে ইউনিভার্সাল এয়ারলাইন্সের অফিসে ফোন করেছিলেন সেটা যে ২৪ ক্যপুনিকাস বুলেভার্ডে তার ছোট্ট নম্বরটা পোয়ারো লিখে রাখেন।
১১. কে ওই আমেরিকান
১১.
কে ওই আমেরিকান
বুড়ো জর্জেসকে জেরা করায় সে খুব রেগে গেল। বুড়ো দেখল যে সত্যি জানার জন্য এই লোকটি অত্যন্ত উদগ্রীব এবং কথাটি মিথ্যে হলেও তার মনের মতো হওয়া চাই। জর্জেস বললেন, মাদাম যেদিন ইংল্যাণ্ড যান তার আগের দিন একজন মহিলা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এই ভদ্রমহিলাকে আমি ছবি দেখলে চিনতে পারব এমন কথাও দিতে পারছি না। কারণ চোখে আমি ভালো দেখি না।
পোয়ারো ও ফার্নের এই জেরার ফলে বৃদ্ধ খুব রেগে যাচ্ছেন এটা বুঝতে পেরে বললেন যে তার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। জর্জেস খুব রেগে গেছিল, তার মনে হল, মাদাম যদি প্লেনে খুন না হতেন তাহলে জর্জেসকেই খুনী বলে মনে করা হত।
জর্জেসকে জিজ্ঞাসা করা হল ভদ্রমহিলা কি খুব সুন্দরী। জর্জেস একটা ঢোক গিললো। পোয়ারোর ধারণা সাঁতারের পোশাকে তাকে খুব সুন্দর দেখাবে। এই বলে স্কেচ পত্রিকায় সাঁতারের পোশাক পরা দুজন মহিলার ছবি দেখালেন। জর্জেস ছবি দেখে কিছুটা চমকে উঠলেন। পোয়ারো বললেন আমি উত্তর পেয়ে গেছি।