প্যারিসে পৌঁছে তারা মাদাম গিজেলের অফিসে এসে পৌঁছলেন। দ্বাররক্ষী পুলিশ দেখে খুব বিরক্ত হলো। ফার্নে গিজেলের অফিসের ঘরে গেলেন। তিনি পোয়ারোকে বুঝিয়ে দিলেন যে ফরাসি পুলিশ প্রথম থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করেছেন। এখানে আমাদের কাজে লাগাতে পারে এটা মনে করে তারা সিলমোহর খুলে মাদামের ঘরে ঢুকলেন।
মাদাম গিজেলের অফিসের ঘরটি ছোটো গুমোট, এর কোণে একটা পুরানো আমলের সিন্দুক, বেশ বড়ো গোছের একটা টেবিল আর অনেকগুলো ছোবড়া বের করা গদি আঁটা চেয়ার। একটিমাত্র জানলা তাও মনে হয় কোনদিন ভোলা হয়নি।
পোয়ারোর টেবিলের তলা থেকে একটা থলি বার করলেন যেটা দারোয়ানদের ডাকার জন্য ব্যবহার করা হয়। সেই ঘর থেকে কোনো ব্যক্তিগত জিনিস পাওয়া গেল না।
সিন্দুকটার দিকে নজর দিয়ে বোঝা গেল ওটা ঠিক শক্তসামর্থ নয়। ফার্নে রায় দিলেন ওটা খুব পুরানো আমলের। ওটা যে খালি এবং যেটা তার ঝি করেছে এ সম্পর্কে দুজনে নিশ্চিত। তারা দুজনে ওই সহকারিণীর সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক। ফার্নের মতে তিনি কোনো সাহায্য করবেন না। এই ঘরের একটা জিনিস খুব অর্থপূর্ণ।
মিঃ পোয়ারো বললেন, এই ঘরে ব্যক্তিগত কোনো জিনিসের চিহ্নমাত্র নেই। আমার কাছে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। মাদাম গিজেলের ভাবালুতা বলে কোনো জিনিস ছিল না।
এলিস গ্রেঞ্জার নামক সহকারিণীর সঙ্গে দুজন দেখা করলেন। তিনি খুব দুঃখপ্রকাশ করলেন এই বলে মাদামকে বিষ দিয়ে খুন করা হয়েছে। তিনি বললেন যতখানি সম্ভব পুলিশকে অবশ্যই সাহায্য করবে। মাদামের কোনো শত্রু আছে যে এ বিষয়ে সে সন্ধিগ্ধ। এলিস রায় দিল টাকা সুদে খাটাবার সূত্রে মাদামের মক্কেলরা মাঝে মাঝে খুব অযৌক্তিক ব্যবহার করত। তারা মাদামকে শাসাত না। তারা গজগজ করে অনুযোগ করে অত টাকা দিতে পারবে না বলে অভিযোগ জানাত। পোয়ারো বললেন মাঝে মাঝে তারা হয়তো টাকা ফেরত দিতে পারত না। এলিস গ্রেঞ্জার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল তারা শেষ পর্যন্ত টাকা দিয়ে দিত। মাদাম গিজেল খুব কড়া লোক নয় ন্যায়কার্য করতেন, এটা এলিসের মত। এলিস অধৈর্য হয়ে উঠল। এখন বলা হল প্রভাবিত মানুষদের তার দুঃখ হয় কিনা। তার মতে নিজের সামর্থ্যের বাইরে যদি কেউ দেনা করে এবং শোধ না দেয় তাতে মাদামের কোনো দোষ নেই। মাদাম নিজের দেনা সসম্মানে মিটিয়ে দিতেন। তাহলে তার পাওনা আশা করাটা বিচিত্র নয়। তার অনেক দয়ামায়া ছিল। তিনি অনেক দাঁতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন। তার মতে, মাদামকে তিনি বোঝেননি।
ফার্নে বললেন যে, মাদাম টাকা আদায়ের কি ব্যবস্থা করেছিলেন তা কি জানেন না। এলিস কিছু বলতে অস্বীকার করায় ফার্নে বললেন যে, তাহলে তিনি ব্যাবসার কাগজপত্র কেন পুড়িয়ে ফেলেছেন। এলিস বলল, মাদামের সেরকম নির্দেশ ছিল যে তিনি দুর্ঘটনায় পড়লে এবং যদি অসুখে পড়ে তাহলে যেন কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পোয়ারো বললেন, নিজের ঘরের সিন্দুকের কাগজপত্র কোথায় গেল। এলিস বোঝাতে চাইলেন ওখানেই কাগজপত্র আছে। কিন্তু সেখানে মোটেই কাগজপত্র ছিল না। সিন্দুকটা বড়ো পুরানো কাঠের কোনো নবীশ ওটা অনায়াসে খুলে ফেলবে। কাগজপত্র বোধহয় মাদামের শোবার ঘরে ছিল।
এলিস বললেন যে হ্যাঁ মাদামের শোবার ঘরে কাগজপত্র থাকত। এলিস শোবার ঘরে গিয়ে একটা তরঙ্গ খুলে একটা পুরানো আমলের পশমের পোশাকের বিরাট পকেটের মধ্যে থেকে বের করে সেখানে কাগজপত্র ছিলো এটা বললেন। ওগুলো একটা বড়ো খামে সীলমোহর করা ছিল।
ফার্নে বললেন, তিন দিন আগে তিনি অন্য সুরে কথা বলেছিলেন কেন।
তিনি বললেন, কাগজগুলো কোথায় ছিল তখন প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়নি।
ফানে বললেন, তার কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল না। তিনি তাকে বোঝালেন মাদামকে খুন করার পেছনে যারা ছিলেন তাদের কারো সম্বন্ধে ওই কাগজে লেখা ছিল। এলিস নিশ্চয় কাগজগুলো পোড়ানোর সময় চোখ বুলিয়েছে। তিনি যেন আদালতকে সেটা জানান। পুলিশকে যথেষ্ট সাহায্য করবে, হয়তো এর থেকে খুনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো প্রয়োজনীয় তথ্যও পাওয়া যেতে পারে। তাহলে কি ধরে নেবোকাগজপত্রগুলো হারিয়ে ফেলার আগে সেগুলোয় আপনি একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলেন। এলিস বললেন, তিনি কিছু না দেখে সীলমোহর পর্যন্ত না খুলে সেটা পুড়িয়ে দিয়েছেন।
.
১০.
একটি ছোট্ট কালো মলাটের বই
ফার্নে একমুহূর্ত তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর সে মিথ্যে কথা বলছে না বুঝে হতাশভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনি খুব বিশ্বস্ততার কাজ করেছেন এটা বললেও এটা দুঃখের বিষয় জানাতে দ্বিধা করলেন না। ফার্নে মাদাম গিজেলদের মক্কেলদের নাম জিজ্ঞাসা করায় এলিস বললেন, মাদাম কখনো তার মক্কেলদের নাম উচ্চারণ করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তার মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ত। তিনি নিজের ব্যাবসা নিয়ে নিজে থাকতেন।
এলিস বললেন…একটা চিঠি এসেছে। মাদাম চিঠিটা খুললেন। একটুকরো হাসি হেসে বললেন, কী বোকা! কী বোকা! ভেবেছে বিনা জামিনেই আমি ওদের টাকা ধার দিয়ে দেব। সঠিক তথ্যই হচ্ছে জামিন বুঝলে এলিস। এরকম কিছু কথা তিনি বলতেন।
মাদামের মক্কেলরা এ বাড়িতে আসতেন তাদের কাউকে তিনি দেখেছেন কি না তা এলিসকে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন যে মাদামের মক্কেলরা সন্ধ্যাবেলায় আসায় তাদের কাউকে তিনি কখনো দেখেননি, তিনি বললেন ইংল্যান্ড যাবার আগে তিনি প্যারিসেই ছিলেন না, তিনি প্রতিবার সেপ্টেম্বরের মত দোভিল, লা পিনেত, প্যারিস প্লেজ আর উইমারা গিয়েছিলেন। এলিস বললেন যে এবছর মাদামের ব্যাবসা ভালোই যাচ্ছিল। তিনি সকালের টিকিট না পাওয়ায় বেলা ১২টার প্লেনে আসন মিলল। তিনি বললেন অন্যবারের মতো যাবার আগের দিনই তিনি জানতে পারেন মাদাম ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন। ফার্নে তার পকেট থেকে সাক্ষীদের ছবি বার করলেন; জিজ্ঞাসা করলেন এদের কাউকে সে চেনে কিনা। এলিস বলল, না, তবে তিনি জর্জেসকে দেখতে বললেন। জর্জেস আবার চোখে দেখতে পায় না। এলিসকে তারা দুজনে কিছু বলতে ভুলে গেছেন কিনা জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল, সে সবকিছুই বলেছেন।