জ্যাঁ দ্যুপ
পকেটে মানিব্যাগে ইংরেজি পাঁচ পাউন্ড ও তিনশো ফ্রা, সিগারেট কেস, সিগারেট হোল্ডার, লাইটার, কলম, পেন্সিল (২), ছোটো নোটবই লেখায় ভর্তি, ইংরেজিতে লেখা চিঠি, তাতে ম্যারিয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে টোটোহান কাছাকাছি একটা রেস্তরাঁয়, ফরাসি খুচরো পয়সা।
ড্যানিয়েল ক্ল্যান্সি– রুমাল, কলম, মানিব্যাগে চার পাউন্ড, একশো ফ্রা, সাম্প্রতিক কয়েকটি অপরাধ বিষয়ক কাগজ থেকে কেটে নেওয়া অংশ থেকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। দেশের জমিজমা সংক্রান্ত দুটো চিঠি। সাক্ষাৎ বই, চারটে পেনসিল, পেনসিল কাটা ছুরি, তিনটে রসিদ আর চারখানা বিল, গর্ডন-পত্রিকা থেকে একখানা চিঠি–মাথায় লেখা এম. এস. সিনোটের। অসম্পূর্ণ ক্রসওয়াল পাজল-টাইমস পত্রিকা থেকে কাটা, নোট বইয়ের কতগুলো গল্পের বিষয়বস্তুর খসড়া, ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডের কিছু খুচরো পয়সা। কেপলাস–কোনো হোটেলের রসিদ, বিরাট একজোড়া চাবি, ওভারকোটের পকেটে-ভিসুভিয়াস হত্যার রহস্য বইয়ের পাণ্ডুলিপি, আন্তর্দেশীয় রেলের টাইম টেবিল, একটা একজোড়া সোজা টুথব্রাশ, প্যারিসের হোটেলের রসিদ।
মিসকার-হাতব্যাগে লিপস্টিক, পাউডার, দুটি সিগারেট হোল্ডার, সিগারেট কেস, এক জোড়া দেশলাই, রুমাল, দুপাউন্ড খুচরো পয়সা, একটা চাবি।
সাজগোছের বাক্সটা ঘোড়ার চামড়ায় মোড়া। নানারকম শিশি, বোতল, তুলি, বুরুশ, চিরুনি ইত্যাদি নখ পালিশ করার সরঞ্জাম, একটা ছোটো টুথ ব্রাশ, শক্ত, দাঁতের মাজন, সাবান একটা কচি। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের লেখা পাঁচখানা ইংরেজি চিঠি। দুখানা উপন্যাস, দুটো ড্যানিয়েল কুকুরের ছবি। মিস গ্রে-হাতব্যাগে লিপস্টিক, ব্রোজ, পাউডার, একটা দরজার চাবি, তোরঙ্গের চাবি পেনসিল, সিগারেট কেস হোল্ডার, মোড়া দেশলাই, ফরাসি প্রবাদবাক্যের একটা ছোট্ট বই, ছোটো একটা ব্যাগে একশো ফ্রা ও দশ শিলিং ফরাসি এবং ইংরেজি মিলিয়ে কিছু খুচরো পয়সা, নাচের আসরের টিকিট।
কোটের পকেটে–প্যারিসের পোস্ট কার্ড, দুটো রুমাল, সিল্কের মাথায় বাঁধার রুমাল, গ্ল্যাডির একটা চিঠি, এক শিশি অ্যাসপিরিন।
লেডি হরবেরিল-হাতব্যাগে দুটো লিপস্টিক, রুজ, পাউডার, রুমাল, তিনটে নোট, ইংরেজি ছ-পাউন্ড খুচরো পয়সা, একটা হীরের আংটি, ফরাসি ডাকটিকিট, দুটো সিগারেট হোল্ডার বাক্সে জোড়া লাইটার।
সাজগোছের বাক্সে-সাজসজ্জার এলাহি সরঞ্জাম, নখ রং করার হাজারো উপকরণ। ছোট্ট একটা শিশিতে বোরিক পাউডার।
পোয়ায়োর পড়া শেষ হওয়া মাত্র জ্যাপ বললেন, বোরিক পাউডার না ছাই, এই বোতলের সাদা বোরিক পাউডার নয়–কোকেন।
জ্যাপ বললেন যে একজন মহিলা যদি কোকেন নিয়ে ঘুরে বেড়ান তার মানসিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা আছে। পোয়ারো বললেন যে এগুলো পড়ে বোঝা যায় কে খুনী? জ্যাপ বললেন কে খুনী পোয়ারো তা বলতে পারবেন? পোয়ারো বললেন, হ্যাঁ। জ্যাপ বললেন, যে পোয়ারো তাকে বোকা বানাচ্ছেন।
ফার্নের মতে এই তালিকা থেকে বেশি দূর এগোনো যাবে না।
পোয়ারো বললেন যে এই আমলার কিছু বিশেষ জিনিস সঙ্গে মিলিয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে। তিনি বললেন এগুলোর মধ্যে থেকে তিনি কিছু খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনাটির অনেক কিছু আছে যা তার কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিন্তু তার একটা বিশেষ সন্দেহ আছে।
জ্যাপ বললেন, তিনি লন্ডনের ওদিকে কাজ করবেন। ফার্নেকে প্যারিসে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হলো যেখানে তার সাথে পোয়ারো থাকবেন।
ফার্নে কাল সকালে ক্রয়ডনে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় নিলেন।
পোয়ারো একটা পত্রিকায় লা পিনেত-এ হরবেরিলর কাউন্টেস এবং মিঃ রেমন্ড ক্যাবেলসা দুটো ছবি দেখলেন। এই সেই পথ ধরে এগোনোর কথা ভাবলেন।
.
০৯.
এলিস গ্রেঞ্জার
সকাল ৮-৪৫ মিনিটে বিমানে পোয়ারো ও ফার্নে প্যারিস চলেছেন। ফার্নে ও পোয়ারো ছাড়া কামরাটায় আরো মাত্র পাঁচ-সাতজন যাত্রী। ফার্নে পকেট থেকে একটা ছোট্ট বাঁশের টুকরো বের করে, বার তিনেক সেটাকে ঠোঁটের কাছে তুলে যে কোনো একটা নিশানা করে বললেন, তার বিভিন্ন ভঙ্গিমা সবসময়েই কোনো না কোনো যাত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করল। শেষবার সত্য বলতে কি, প্লেনের সব লোকের দৃষ্টি যেন তার উপর আটকে গেলো।
ফার্নে নিরুৎসাহ হয়ে ধপ করে বসে পড়লেন। আর পোয়ারোকে বললেন যে, পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া ভালো, পোয়ারো এতে একমত। তার এই হাতেকলমের পরীক্ষার ফল হল প্রতিবার কেউ না কেউ তাকে দেখে ফেলেছে। সবাই না হলেও কিন্তু একটা সফল খুনের ব্যাপারে যেখানে সেখানে এটা কার্য নয়। সেক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত ভাবেই নিশ্চিত হতে হবে কেউ আপনাকে দেখতে পাবে না, পোয়ারো বললেন।
ফার্নে বললেন, সেটা সাধারণ অবস্থায় অসম্ভব।
এরকুল পোয়ারো বললেন যে এমন কোনো মনস্তাত্বিক মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছিল যাতে প্রত্যেকের দৃষ্টি অঙ্ক কষে সেদিকে পড়েছিলো।
ইনসপেক্টার জ্যাপ এই বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন। মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন যে, তার মনে হয় এই ঘটনায় চাক্ষুষ অন্যপথে চালিত হতে পারে, তাই মনের চক্ষু খোলা থোক। মাথার ভেতর ক্ষুদ্র কোষকে কাজের সুযোগ দেওয়া হোক।
ফার্নেকে তিনি বোঝালেন যে আপনার বন্ধু গিরাদ থাকলে আমার পাগলামিতে কান দিত না। এই বলে তিনি কতগুলো অসংলগ্ন কথা বললেন। মিনিট কয়েক পর জানা গেল তিনি চোখ বুজে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছেন।