ওয়ারবারটন হাসল কি ভেবে।
এই ফটোগ্রাফের কৌশলটার মধ্যে যে একটা নতুনত্ব আছে, স্বীকার করতেই হবে, তাই না? বলল ওয়ারবারটন। তার ওষ্ঠাধারে একটি তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। আপনি যদি এর সম্বন্ধে একবার জানতে পারেন, তাহলে ব্যাপারটা দেখবেন খুব সাদাসিধা।
কিন্তু পোয়ারোকে খুব অসন্তুষ্ট দেখালো, যেহেতু সে ব্যাপারটা জানে না। সে বলল, জালের আবরণ দেওয়া জানালা।
হ্যাঁ, স্বীকার করছি আমি অনেকটা দেখতে সেইরকম। তবে এটা একটা টেনিস নেট। বলল ওয়ারবারটন।
একটা স্বস্তিজনক শব্দ উচ্চারণ করে পোয়ারো আবার একবার দেখল ম্যাপটা। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, সেই রকমই বটে। বলল পোয়ারো।
আপনি জিনিসটাকে কিভাবে দেখেছেন সবটাই তার ওপর নির্ভর করে। ওয়ারবারটন একথা বলে হাসল।
হ্যাঁ, কথাটা নির্ভেজাল সত্য। বলল পোয়রো।
দ্বিতীয় ক্লু পাওয়া যাবে টেনিস নেটের ঠিক মাঝখানে একটা বাক্সর ভিতর থেকে। এই বোতলটা খালি অবস্থায় পাওয়া যাবে বাক্সের মধ্যে আর এখানে এই আলগা কর্কটা, জানাল ওয়ারবারটন।
মিসেস অলিভার বলল, এটা একটা স্কুটপড বোতল। সুতরাং কর্কটা সত্যিই একটা ক্লু–এটা বুঝতে পারছেন।
ম্যাডাম, আমি জানি, আপনি আপনার ক্রাইম স্টোরিতে থাকেন সবসময়ই। তবু ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছি না আমি–জানালো পোয়ারো।
মিসেস অলিভার তার কথায় বাধা দিয়ে বলল, হা হা, নিশ্চয়ই এটা একটা ম্যাগাজিন সিরিয়ালের মতো একটা সারাংশ। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটনের দিকে তাকিয়ে–পেয়েছেন লিফলেটগুলো?
প্রিন্টার্স-এর কাছ থেকে সেগুলো এখনো আসেনি, তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সন্ধ্যা ছটায় দেবে। আমি নিজে যাব গাড়ি নিয়ে সেগুলো আনার জন্য। বলল ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন।
হায় ভগবান! দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিসেস অলিভার, আর সে পোয়ারোর দিকে তাকালো।
আচ্ছা তাহলে আমিই আপনাকে বলছি এই নাটকের সারাংশ। মঁসিয়ে পোয়ারো, অসুবিধা হল এই যে আমি ঠিক ভালো করে গল্প বলতে পারি না লিখতে খুব দক্ষ আমি, কিন্তু কেমন যেন জট পাকিয়ে ফেলি মুখে বলতে গেলে। আর কখনও আমি আমার প্লট কাউকে বলি না একমাত্র সেই কারণে। সে যাই হোক, মিসেস অলিভার আবার বলতে শুরু করলেন একটু থামার পর :
আচ্ছা বলি-গল্পটা এরকম : একজন তরুণ এ্যাটম বিজ্ঞানী পিটার গেই, তাকে সেন্দহ করা হয় একজন কমিউনিস্ট হিসাবে। সে বিয়ে করে যোয়ান ব্লান্ড নামে একটি মেয়েকে। সবাই জানে যে তার প্রথম স্ত্রী মৃত, কিন্তু আসলে সে মৃত নয়। সে একজন সিক্রেট এজেন্ট।
অথবা তা নয়, কিন্তু তার আবির্ভাব ঘটতে দেখা যায়। এটা আমি বোঝাতে চাইছি যে, সে হয়তো সত্যিকারের একজন ভ্রমণবিলাসী মেয়ে। লওয়োলা নামে এক ব্যক্তি, তার সঙ্গে এই প্রথমা স্ত্রীর হয়তো কোনো সম্পর্ক থাকতেও পারে, হয়তো সেই জন্য সেই লোকটি তার সঙ্গে দেখা করতে আসবে, অথবা এটাই হতে পারে যে, সে তার ওপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য আসবে। তারপর একটা চিঠি পাওয়া যাবে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য-চিঠিটা হয়তো খানসামা লিখে থাকবে, অথবা হাউস-কীপার। এর মধ্যে সে ও রিভলবারটা উধাও হয়ে যাবে। ব্ল্যাকমেইল করার জন্য কে সেই চিঠি লিখে ছিল ধরুন সেটা আপনি জানেন না, অথবা কেই বা হাইপোডারমিক সিরিঞ্জটা নৈশভোজের টেবিলে ফেলে গিয়েছিল, যদিও সেটা তারপর উধাও হয়ে…।
তার গল্প শেষ করল ঠিক এই জায়গায় এসে মিসেস অলিভার। সহানুভূতির সঙ্গে সে অনুভব করল পোয়ারোর প্রতিক্রিয়া এবং বলল, আমি হয়তো ঠিকমতো গল্পটা বলতে পারিনি এবং আপনিও ঠিক বুঝতে পারেননি, এটা আমি জানি। আমার মাথায় এখন সব ঠিকমতো আসছে না এটাই সত্য কথা। এই গল্পের সারাংশের ছাপানো লিফলেট যখন আপনি পাবেন তখন দেখবেন বিষয়বস্তু আপনার কাছে জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে যাবে। গল্প শেষ হবার পর অলিভার বলল, আচ্ছা যাই হোক, আসলে কাহিনী বিশেষ কিছুই নয়, তাই না? অর্থাৎ আপনার কাছে বিশেষ কিছু নয় অত্যন্ত চমৎকার সব প্রাইজ, আপনার কাজ তো পুরস্কার বিতরণ করা। রিভলবারের আকারে তৈরি রুপোর একটা সিগারেট কেস প্রথম পুরস্কার, এই অভিনব পুরস্কারের ব্যবস্থার কারণ, সমাধানকারী কত না চতুর তা বোঝনোর জন্য।
সমাধানকারী সত্যিই চতুর হয়ে থাকে, নিজের মনে ভাবলো পোয়ারো। তবে তার মনে বিশেষ সন্দেহ আছে, সমাধানকারী পাওয়া যাবে কিনা। তার কাছে মনে হচ্ছে মার্ডার হান্ট-এর সমস্ত প্লট আর কার্যকলাপ হয়তো কুয়াশাচ্ছন্ন হয়েই থাকবে।
মিসেস অলিভার পোয়ারোর হাত চেপে ধরে প্রশ্ন করলো, ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন যখন লিফলেটগুলো আনতে চলে গেল, এর মধ্যে কিছু পেলেন কি আপনি? অথবা অন্য কিছু চিহ্নিত করতে পারলেন?
একেবারে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে সকলকে এবং সব কিছুই, বলল পোয়ারো।
জিজ্ঞাসা করল অলিভার, স্বাভাবিক? হয়তো এটা ঠিক কথা নয়। আপনি যেমন বললেন।
লেডি স্টাবস, অবশ্যই স্বাভাবিক নয় এবং মিঃ লেগিকে দেখে স্বাভাবিক মনে হয় না। মন্তব্য করলো পোয়ারো।
হা হা, মিঃ লেগি ঠিক আছে, অলিভার অধৈৰ্য্য হয়ে বলল, তবে একটুতেই সে খুব নার্ভাস হয়ে পড়ে।
কথাটা যদিও মেনে নিল পোয়ারো তবুও তার বক্তব্যকে সমর্থন জানাতে পারল না।
সবার অল্পবিস্তর উত্তেজনা বা নার্ভ ফেল করার সম্ভাবনা থেকেই যায়, এরকম একটা কিছু মনোরঞ্জক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে গেলে। আচ্ছা সেটা যাই হোক, আপনি কেবল একটু আলোকপাত করুন–বলল পোয়ারো।