পোয়ারো বলল, অবশ্যই এসে যায়। কোনো কোনো লোকের তত ভালো লাগতে পারে।
এখানকার মানুষদের সামান্যতমও বিচার বুদ্ধি নেই কেন এটাই বুঝতে পারি না, তারা কেন চিন্তা করে না সারা বিশ্ব এখন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে।
সারা বিশ্বের মানুষ এখন আত্মহত্যা করার জন্য ব্যস্ত, তারা কেনই বা এটা উপলব্ধি করে না। এইসব মন্তব্য করছিল আলেক লেগি।
ভেবে দেখলো পোয়ারো, তার এ প্রশ্নের উত্তর না দিলেও চলবে। এজন্য সে দ্বিধাগ্রস্তভাবে মাথা নাড়ল।
আলেক লেগি যেন ফেটে পড়ল–আমি যদি কিছু না করি তাহলে বেশ দেরি হয়ে যাবে। উত্তেজনায়, ক্রোধে তার মুখটা ভারী হয়েছিল। সে বলল, আচ্ছা, তাই তো আপনি যেন কি ভাবছেন, অবশ্য আমি জানি। বলল পোয়ারোকে, আমার স্নায়ুকোষগুলো দুর্বল, নিউরোটিক রোগী আমি। সেইসব অকর্মণ্য ডাক্তাররা যারা উপদেশ দিয়েছে, বিশ্রাম, সমুদ্রের বায়ুসেবন, স্থান পরিবর্তনের জন্য। সেই কারণেই এখানে এসেছি আমি আর শেলি। একটা মিল কটেজ ভাড়া নিয়েছি তিন মাসের জন্য। তাদের প্রেসক্রিপসন অনুসারেই আমি কাজ করছি।
এখানে আমি সূর্যস্নান করি, মাছ ধরি, ঘুরে বেড়াই
পোয়ারো বিনীতভাবে বলল, ঠিক, আপনাকে আমি দেখেছি সানবাথ নিতে। সব ঠিক হয়ে যাবে তাহলে, যদি ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রাখেন।
যেন আলেক লেগি কোনো মজা পেল, বলল ভালো কথা,-আপনার কাছ থেকে এ যেন অভাবনীয় কিছু পাওয়া। আচ্ছা যাই হোক, জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো, এদেশে কি দেখতে চাই আমি?
হেসে ফেলে বলল পোয়ারো–এবিষয়ে কিছু সন্দেহ নেই যে আপনি বল প্রয়োেগ ও অপ্রীতিকর কিছু দেখতে চান।
তেমনি গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বরে আলেক লেগি বলল, আমি চাই প্রত্যেকটি দুর্বলচিত্তের মানুষকে বের করে দেওয়া হোক এখনই। তারা যেন নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে না পারে। ধরুণ একটা প্রজন্ম, কেবলমাত্র বুদ্ধিমান লোকদের নিঃশ্বাস নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তাহলে চিন্তা করে দেখুন পরিস্থিতিটা কি হবে।
শুষ্ক কণ্ঠে পোয়ারো জানালো, তাহলে রোগীদের সংখ্যা ভীষণভাবে বেড়ে যাবে সাইক্রিয়াট্রিক ওয়ার্ডে।
আপনাকে জানিয়ে রাখলাম মিঃ লেগি, যদি কেউ ফুলের বাগান করে তাহলে গাছের শিকড় সমেত ফুল চাইবে সে। কারণ ফুলের গাছ বাঁচতেই পারে না শিকড় না থাকলে। ফুলের বাগান সম্ভব কি শিকড় নষ্ট করে দিলে, লেথাল চেম্বারের একজন প্রার্থী হিসাবে আপনি কি লেডি স্টাবকে বিবেচনা করবেন?
অবশ্যই তাই। আলেক লেগি মতামত জানালো।
কি লাভ বলুন ওর মতো মহিলা থেকে। কি অবদান আছে তার সমাজে? তিনি আর কিছুই ভাবতে পারেন না, দামী গহনা আর ভালো পোশাক ছাড়া। তাহলে কি করে তিনি ভালো মহিলার পায়ে পড়েন।
শান্তভাবে পোয়রো বলল, আপনি আর আমি নিশ্চয়ই বুদ্ধিমান লেডি স্টাবস-এর থেকে। দুঃখের অনুভূতি দেখিয়ে মাথা নেড়ে বলল আবার, আমার সত্যিই ভয় হয়, দামী দামী গহনার মতো আমরা কেবল শোভাবর্ধন করেই চলবে না তো? মিসেস অলিভার এবং ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটেন পুনঃপ্রবেশে বাধা পেল মিঃ আলেক, না হলে সে প্রচণ্ড ক্রোধে চিৎকার করতে যাচ্ছিল, শোভাবর্ধন মানেটা
অবশ্যই আপনার মার্ডার হান্ট-এর ক্ল-গুলো দেখা উচিত, আসুন মঁসিয়ে পোয়ারো, এক নিঃশ্বাসে বলল মিসেস অলিভার। তাদের অনুসরণ করল পোয়ারো বাধ্য ছেলের মতোই।
তারা তিনজন একটা ছোট্ট সুসজ্জিত অফিস ঘরে গিয়ে প্রবেশ করল হলঘর পার হয়ে।
মারাত্মক সব অস্ত্র রয়েছে আপনার। বাঁ দিকে লক্ষ্য করল ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন একটা টেবিলের দিকে দৃষ্টি ফেলে। একটা ছোট পিস্তল পড়ে ছিল টেবিলের ওপর, একটা সিসার পাইপ, একটা নীল রঙের বিষের বোতল লেবেল আঁটা, একটা লম্বা কাপড়ের টুকরো, আর একটা হাইপোডারমিক সিরিঞ্জ।
মিসেস অলিভার বলল, ঐগুলো অস্ত্র, আর সন্দেহভাজন ব্যক্তি হলেন এরা। আগ্রহ সহকারে পড়তে লাগলো পোয়ারো একটা ছাপানো কার্ড তার হাতে তুলে দিতেই।
অনুমিত অপরাধী :
এস্টেল গ্লাইন : — সুন্দরী এবং রহস্যময়ী যুবতী, অতিথি
কর্নেল ব্রান্ড-এর — স্থানীয় গ্রামবাসী, যার মেয়ে
যোয়ান — বিবাহিতা
পিটার গেই-এর সঙ্গে — তরুণ এ্যাটম বিজ্ঞানী
মিস উইলিং — হাউস-কীপার
কোয়েট — খানসামা
মায়াস্টেভিস্কি — ভ্রমণরত মেয়ে
এস্টেবান লওয়ালা — অনাহুত অতিথি
না বোঝার ভান করে চোখ পিটপিট করে মিসেস অলিভারের দিকে তাকিয়ে পোয়ারো বলল, দারুণ সব চরিত্রের মিলন। আবার সে নম্রভাবে বলল, যদি ম্যডাম আপনি আমাকে অনুমতি দেন তবে জিজ্ঞাসা করি জানতে পারে প্রতিযোগীদের কী করতে হবে?
ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন বলল, উল্টে দেখুন কার্ডটা। পোয়ারো সেটা উল্টে দেখল, কার্ডের উল্টোদিকে ছাপানো ছিল :
নাম আর ঠিকানা :
সমাধান :
খুনীর নাম, মোটিভ, সময় ও স্থান, অস্ত্র, সিদ্ধান্তে আসার কারণ।
ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন তাড়াতাড়ি ব্যাখ্যা করে বলল, প্রত্যেককে এই কার্ড দেওয়া হবে প্রবেশ করা মাত্র। একটা নোটবই এবং পেনসিলও দেওয়া হবে কু-গুলো কপি করার জন্য।
ক্লু থাকবে ছটি, দেখে যান একটার পর একটা ক্লু, সন্দেহজনক জায়গায় লুকানো থাকবে ট্রেজার হান্টের অস্ত্রগুলো। একটা ফটো–এই হল প্রথম ক্লু।
এখান থেকে শুরু করতে হবে প্রত্যেককে।
সেই ছোট্ট প্রিন্টটা তার কাছ থেকে নিয়ে ক্রু কুঁচকে পোয়ারো পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। তার বিস্ময় ভাবটা থেকেই গেল উল্টে পাল্টে দেখার পরেও।