বিরক্ত হয়ে হ্যাটি বলল, আমার মাথার যন্ত্রণা হচ্ছিল। এবার সে মেজাজ বদল করে নরম সুরে বলল, আমি ঠিক ভালো হয়ে যাব আগামীকাল দেখবে। আমি সব কাজ নিজের হাতে করব তুমি যা বলবে।
সে তো খুব ভালো কথা, প্রিয় হ্যাটি আজই কিছু নতুন পোশাক পেয়েছি, সেগুলো সকালে এসেছে। চলো আমার সঙ্গে ওপরে এসো, ওগুলো দেখবে চলো। বলল হ্যাটি।
মিসেস ফোলিয়াট দোনামনা করছিল। লেডি স্টাকস উঠে দাঁড়াল এবং জোরের সঙ্গে বলল, তোমাকে যেতেই হবে; অনুরোধ করছি, একবার চলল, দেখবে কি সুন্দর পোশাক!
জোর করে হাসার চেষ্টা করে মিসেস ফোলিয়াট বলল, আরে সে তো খুব ভালো কথা।
লেডি স্টাবস মিসেস ফোলিয়াটকে সঙ্গে নিয়ে চলে যাওয়ার পর অবাক হয়ে ভাবছিলো পোয়রো, কি অদ্ভুত এই মহিলা, অর্থের কি বিরাট অহমিকা। ভীষণ চিন্তিত নিজের হাতে কাজ করার ব্যাপারে, তারপর হঠাৎ মিসেস ফোলিয়াটের অনুরোধে তার মনোভাব পাল্টে গেল, অন্য সকলের সঙ্গে আগামীকাল কাজে যোগদানের প্রতিশ্রুতি দিল হাসিমুখে–এসব পরিবর্তনের কি মানে হতে পারে। সে কোনো তোয়াক্কা করে না সামাজিক মুখোশের। তাহলে তার এই পবির্তন কেন? তা হলে কি তার অভিনয় এটা? না, হয়তো বা তার থেকেও বেশ কিছু? হয়তো সে কোনো অসুখে ভুগছে এখন, যা অন্য কোনো নারীর মতো এখনো সে বলেনি। হয়তো সে মনে করে মানুষের সহানুভূতি দয়া তার কাম্য নয়।
ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন বলে উঠল হ্যাটির পরিত্যক্ত চেয়ারে বসে পড়ে–উনি একখানা চমৎকার জীব তাই না? সে আড়চোখে দেখল স্যার জর্জ বেরিয়ে যাচ্ছে মিসেস মাস্টারটন এবং মিসেস অলিভারের সঙ্গে। বেশ কায়দাদুরস্ত জর্জ স্টাবস। হিসাবমতো ঠিক।
তবে এসব কিছুই ভালো নয় ভদ্রমহিলার পক্ষে, কারণ এইসব গহনা পোশাক অর্থ সবই মূল্যহীন বলে মনে হবে। আজও আমি সে কথা জানতে পারলাম না যে, স্যার জর্জ কি উপলব্ধি করতে পারছেন? তার স্ত্রীর চাহিদা বাড়তে বাড়তে একসময় কোথায় পৌঁছে যাবে! এটা কোন ব্যাপার নয়, সম্ভবত তিনি একথাই ভাবেন। সাধারণত এই মোটামাথা সম্পন্ন বিত্তবানেরা বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গ পছন্দ করে না।
পোয়ারো কৌতূহল প্রকাশ করল, আচ্ছা বলুন তো উনি কোন জাতি?
দক্ষিণ আমেরিকানদের মতো তো দেখতে, তবে আমার মনে হয় উনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের লোক। চিনি আর মাদকদ্রব্য বিদেশে চালান হয়, সেইসব দ্বীপপুঞ্জের যে কোনো একটা থেকে, আর ওঁর খুব প্রিয় এ দুটো জিনিসই। হয়তো কোনো প্রাচীন পরিবার সেখানে গিয়েছিল। তা বলে এটা ঠিক নয় সেমিশ্রজাত। আমার মনে হয় এইসব দ্বীপপুঞ্জে প্রচলন আছে অন্তর্বিবাহের। যাকে মানসিক ভারসাম্যের অভাব বলে।
যুবতী মিসেস লেগি এগিয়ে এল তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য। জিমকে সে বলল, দেখ জিম, আমাদের দিকে তোমাকে আসতে হবে। সেইখানেই টেন্টটা করতে হবে, আমরা যেখানে ঠিক করেছিলাম।
একেবারে লনের শেষপ্রান্তে। ওটাই একমাত্র উপযুক্ত জায়গা।
সেরকম কিছু মনে করেন না মাস্টারটন-জিম বলল।
আচ্ছা, তাহলে তুমি বরং ওর সঙ্গে এ ব্যাপারে একবার কথা বলে দেখ। ধূর্ত শৃগালের হাসি ফুটে উঠল তার মুখে।
পুনরায় স্যার জর্জ প্রবেশ করল, বলল সে, শেলি তুমি এখানে ওঃ–তুমি এখানে। আমার দরকার আছে তোমার সঙ্গে, আচ্ছা বলল এ্যামি ফোলিয়াট কোথায়?
উপর তলায় গেছেন তিনি হ্যাটির সঙ্গে–শেলি বলল।
ওঃ তাই নাকি? স্যার জর্জকে অসহায়-এর মতো দেখাচ্ছিল। ওদিকে ব্রেউইস লাফিয়ে উঠল টিকিট লেখা ছেড়ে, এবং বলে উঠল স্যার জর্জের উদ্দেশ্যে, আমি ওঁকে ডেকে নিয়ে আসব স্যার জর্জ?
আমাদ্দা ধন্যবাদ, তারপর অস্পষ্ট স্বরে বলল, কিছু তার-এর জাল নিয়ে এসো তো?
উৎসবের জন্য? না সেজন্যে নয়। শক্ত বেড়া দিতে চাই অরণ্যে, হুডাইন পার্ক আর আমাদের এস্টেটের মাঝখানে। ভেঙে গেছে পুরানো বেড়া আর সেইপথ দিয়ে তারা ঢুকে পড়ে।
কারা?
অনধিকার-প্রবেশকারীরা। হঠাৎ স্যার জর্জ বলে ফেলল। কি আর বলব, ইয়ুথ হোস্টেলটা যেদিন থেকে চালু হয়েছে, বোর্ডাররা সেদিন থেকে আমার এখানে অনধিকার প্রবেশ করছে। অবিশ্বাস্য শর্টস মেয়েদের পরনে, এমনভাবে তাকায় তারা আমার দিকে যেন আমি তাদের আঘাত করছি। ওদের মধ্যে অর্ধেক জন ইংরাজি বলতে পারে না। ভাঙাভাঙা কথায় প্রশ্ন করবে নদী কোথায়? কোথায় ফেরি? এদিকে নয় ওদিকে যতই তাদের বোঝাবার চেষ্টা করি, কিছুতেই ওরা বুঝতে পারে না, চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইতালিও, যুগোশ্লাভিও, ডাচ, ফিনিশ, এস্কিমো ইত্যাদি নানা জাতের মানুষ তারা। একটুও আশ্চর্য হবে না, তাদের মধ্যে অর্ধেক মানুষ যদি কম্যুনিস্ট হয়। আক্ষেপের সুরে জর্জ তার বক্তব্য শেষ করল।
বলল মিসেস লেগি, এসো জর্জ, কমিউস্টিদের আলোচনা এখন আর শুরু করো না। তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেল সে। তারপর জিমের দিকে ফিরে সে বলল, জিম এসো মহৎ কাজের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়।
পুরস্কার বিতরণ করতে যাচ্ছেন মঁসিয়ে পোয়ারো। সেটা ভালো কথা, সেজন্য ভাবছি ওঁকেও আমি তাড়াতে চাই মার্ডার হান্টের ব্যাপারে।
ভালো কথা তো তুমি এখন থেকেই শুরু করে দাও।
পোয়ারো রাজী হয়ে গেল। বলল, আমি এখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করব। চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল আলেক লেগি, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, রমণী যেন ওরা মৌমাছির ঝাক। ঘুরে দাঁড়াল সে জানালার দিকে মুখ করে, মন্তব্য করল, কি মানে হয় এসমস্ত কিছুর। কার কি যায় আসে এতে, যত সব কদাকার বাগান।