মিসেস অলিভার পরিচয় করিয়ে দিলেন, মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো ইনি–আর এই মহিলাটি মিসেস ফোলিয়াট। পোয়ারোর দিকে স্থির চোখে তাকাল বয়স্কা মহিলাটি। আচ্ছা ইনিই সেই মহান মঁসিয়ে পোয়ারো? আগামীকাল আমাদের সাহায্য করার জন্য এখানে এসে যে কষ্ট স্বীকার করলেন এটা আপনার মহানুভবতার পরিচয়। আমাদের ধাঁধায় ফেলার মতো একটা সমস্যার কথা ভেবেছেন এই চতুর মহিলাটি–সেটা এমন মনোগ্রাহী হবে–
পোয়ারোও কম অবাক হলো না। এই নাতিদীর্ঘ মহিলাটির সহজ সরল আন্তরিকতায়। সে তাকে কার হোস্টেস ভেবে থাকবে, এটাই তার মনে হলো।
অত্যন্ত বিনয়ী কণ্ঠে পোয়ারো বলল, আমার পুরোনো বন্ধু মিসেস অলিভার। আমি খুবই আনন্দিত যে, ওর আমন্ত্রণে এখানে আসতে পেরেছি। খুবই চমৎকার জায়গাটা, আর এই ম্যানসনটাও অপূর্ব।
মিসেস ফোলিয়াট খুশী হলো, হ্যাঁ ১৭৯০ সালে আমার ঠাকুরদা এটি তৈরি করেন। এখানে একটা এলিজাবেথিও বাড়ি ছিল আগে। সেটা ভেঙ্গে পড়ে এবং আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ১৭০০ সাল নাগাদ। আমাদের পরিবার এখানে বাস করছে ১৫৯৮ সাল থেকে।
তার বাচনভঙ্গী শান্ত এবং সংযত। তাকে দেখলো পোয়ারো খুব কাছ থেকে গভীর দৃষ্টি দিয়ে।
সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় হল তার চেহারার মধ্যে চোখ দুটি–চায়না ব্লু।
সংশয়ভরা চোখে বাড়ির দিকে যেতে গিয়ে পোয়ারো মন্তব্য করল–আপনার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হবে এখানে আগন্তুকদের থাকতে দিলে।
মিসেস ফোলিয়াট উত্তর দিল সামান্য সময় চুপ করে থাকার পর, আবেগ মাখানো কৌতূহলে ভরা এবং পরিষ্কার ছিল তার কণ্ঠস্বর-অনেক কিছুই তো কঠিন মঁসিয়ে পোয়ারো।
ড্রয়িংরুমটা বেশ বড় ধরনের। পোয়ারো এখানে এসে ঢুকলো মিসেস ফোলিয়াটকে অনুসরণ করে। লোক ছিল প্রায় সমস্ত ঘরটা জুড়ে, মনে হচ্ছিল তারা যেন এখুনি কথা বলবে।
মিসেস ফোলিয়াট পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। জর্জ, ইনি মঁসিয়ে পোয়ারো, আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন অনুগ্রহ করে, আর উনি স্যার জর্জ স্টাকস।
এতক্ষণ উচ্চস্বরে কথা বলছিল জর্জ স্টাবস। এবার ফিরে তাকালো। বিশাল চেহারা তার। সামান্য অনুচ্চিত দাড়ির সমাবেশ তার লাল উজ্জ্বল মুখে। ঠিক যেন এক অভিনেতার মনে অস্বস্তিকর প্রভাব, ঠিক মনস্থির করতে পারেনি এখনো সে অভিনয় করবে কিনা কোনো গ্রাম্য মানুষের ভূমিকায়। তাকে কখনই নেভির লোক বলে মনে হয় না, মাইকেল ওয়েম্যানের মন্তব্য অনুযায়ী। মাইকেলের কণ্ঠস্বর হাসিখুশীতে ভরা এবং স্বভাবতই আমোদপ্রিয়। অথচ তার ছোট ছোট দুটি চোখ এবং তার দৃষ্টি ধারালো ও কঠিন।
আন্তরিকভাবে সে সম্ভাষণ জানাল পোয়ারোকে। সে বলল, আমরা বিশেষভাবে খুশী হয়েছি কারণ আপনার বন্ধু মিসেস অলিভার আপনাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে এখানে আনতে পেরেছেন। এখানে আপনি ভয়ঙ্করভাবে আকর্ষণীয় হবেন। তার চোখের দৃষ্টি কেমন উদাস হয়ে গেল একথা বলার সময়।
সে ডেকে উঠল, হ্যাটি, সাড়া না পেয়ে আবার সে উচ্চস্বরে ডাকল, হ্যাটি। তখন অদুরে একটা বড় আরাম কেদারায় বসে মিসেস স্টাবস অন্যদের সঙ্গে গল্প করতে ব্যস্ত। সে কান দিচ্ছিল না স্বামীর ডাকে উপরন্তু মুচকে হাসছিল। পোয়ারো যখন তার নিকটবর্তী হল, ছেলেমানুষের মতো অবাক হয়ে সে বলে উঠল–কি ব্যাপার! পরিচয় করিয়ে দিলেন স্যার জর্জ এগিয়ে এসে পোয়ারোর সঙ্গে। ইনি হলেন মিসেস মাস্টারটন। মাস্টারটনের চেহারাটা চমকপ্রদ, পোয়ারোকে তুলনামূলকভাবে ব্লাড হাউন্ডের কথা মনে করিয়ে দিল। সম্পূর্ণ ঝুলে আছে যেন চোয়াল দুটো, চোখ-দুটি যেন একটু রক্তবর্ণ।
জিল, শোন, মিটিয়ে ফেলতে হবে টি টেন্টের এই বিশ্রী ঝামেলাটা, জোর দিয়ে বলল, স্যার জর্জ ওদের একটু জ্ঞান থাকা উচিত এ ব্যাপারে।
পুরো শোটা তো আর বানচাল করে দেওয়া যায় না, এইসব নির্বোধ মহিলাদের ঘরোয়া মনোমালিন্যের জন্য।
তিনি ধমেক উঠলেন, আচ্ছা তুমি কি থামবে একটু। স্যার জর্জ বলল, ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন।
একটা অস্পষ্ট ঘোড়ার ছাপ, চেক স্পোর্টস পরিহিত ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন-এর চেহারায়, মনে হল যেন একটি নেকড়ে হাসছে, তার সাদা তেতো হাসি দেখলে মনে হয়। এর পর সে আলোচনার জের টানল। সে বললো, চিন্তা করবেন না আমি এর মীমাংসা করে নেব। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব, ডাচ কাকার মতো। এবার বলুন, ভবিষ্যৎবক্তার টেন্টের কি খবর? যে খালি জায়গাটা আছে ম্যাগনোলিয়ার পাশে সেখানে হবে কি? তা না হলে যেখানে হলুদ ফুলের বাগান আছে লনের একেবারে শেষ প্রান্তে, সেখানে হবে কি?
তার পরিচয় পর্ব চালিয়ে যেতে থাকে স্যার জর্জ, এরা হলেন মিঃ আর মিসেস লেগি। মিঃ লেগির চেহারা লম্বাটে ধরনের, সেঁতো হাসি রোদে পোড়ামুখে। আকর্ষণীয় লাল চুল তার স্ত্রীর মাথায়, মাথা নাড়লে সে বন্ধুসুলভ মুখে হাসি ফুটিয়ে। তারপর বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল মিসেস মাস্টারটনের সঙ্গে।
আমাদের সবাইকে ইনি পরিচালনা করেন, ইনি হলেন মিস ব্রেউইস। পরিচয় করিয়ে দিল জর্জ মিস ব্রেউইস একটা রুপোর চায়ের ট্রের পাশে বসেছিল।
ভদ্রমহিলার বয়স চল্লিশের বেশি হবে, তবে তাকে দেখে যোগ্য বলে মনে হয়। জানতে চাইল সে, কেমন আছেন সঁসিয়ে পোয়ারো। আশা করি ট্রেনে বিশেষ কষ্ট হয়নি। এসময়ে খুব কষ্টকর ব্যাপার ট্রেনে যাতায়াত করাটা। আপনাকে চা দিই এখন, দুধ, চিনি দেবো তো চায়ে?