পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল, কেউ হয়তো বা খুন হতে পারে?
একজন তরুণ যুগোস্লাভিয়ান এ্যাটম সাইনটিস্ট-এর প্রথমা স্ত্রী, যে একজন ভ্রমণরত মেয়ে, অলিভার বলল।
পোয়ারো চিন্তিতভাবে তাকালো।
এ্যাটম সাইনটিস্ট তাকে হত্যা করেছে এটা আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে। কিন্তু বাস্তবে এত সহজে সমাধান করা সম্ভব নয়।
অবশ্যই, আপনি যখন জড়িত, বললো পোয়ারো। মিসেস অলিভার হাসলো, পোয়ারোর প্রশংসায় সে বলল, তাকে খুন করেছে আসলে অন্য একজন–অবশ্য তার মোটিভ অভূতপূর্ব আমার বিশ্বাস হয় না, যদিও পঞ্চম কু-তে সেটা পরিষ্কারভাবে বোঝানো হয়েছে, তবুও এখানকার লোকেরা সেটাকে ঠিকভাবে মেনে নেবে কি না? মিসেস অলিভারের প্ল্যানের সারবস্তু বাতিল করে দিয়ে পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু আপনি কি করে করবেন উপযুক্ত দেহের ব্যবস্থা।
মিসেস অলিভার বলল, গাইড গার্ল। আর একটা চরিত্র হল শেলি লেগি, কিন্তু এখন তারা তাকে টুপি পড়া অবস্থায় জ্যোতিষীর ভূমিকায় সাজাতে চায়। মারলিন টাকার নামে এই গাইড গার্ল ব্যাকশক্তিহীন আর শাসকষ্টের টানে ভুগছে।
বাখ্যা দিতে গিয়ে সে বলল, কাজটা খুবই সোজা। মাটিতে পড়ে যাবে সে কারো পায়ের শব্দ শুনলেই, আর দড়ির ফাস পরিয়ে দেবে মেয়েটির গলায়।
বেচারা তাকে একা একা থাকতে হবে সেখানে বোট-হাউসে তাকে আবিষ্কার না করা পর্যন্ত, আমি অবশ্য এক বাণ্ডিল কমিকস্-এর ব্যবস্থা করে রেখেছি তার জন্য। খুনীর একটা ক্ল পাওয়া যাবে বস্তুতপক্ষে–অতএব এইভাবে সব ঠিকঠাক কাজ হয়ে যাবে।
সম্মোহিত করার মতো আপনার উদ্ভাবতী ক্ষমতা, এটা চিন্তার ব্যাপার, ঘটনাটা আপনি যে ভাবে সাজিয়েছেন। বলল পোয়ারো।
এটাতে কোনো অসুবিধা নেই, অর্থাৎ চিন্তা করার ব্যাপারে–বলল মিসেস অলিবার।
মুশকিলের কথা হচ্ছে বেশি চিন্তা করেন আপনি এবং ব্যাপারটা সেজন্য জটিল হয়ে পড়ে। সেজন্য আপনাকে বাদ দিয়ে দিতে হবে কতকগুলো ব্যাপার এবং সেটাই হল চিন্তার বিষয়। আসুন এবার আমরা এই পথ দিয়ে যাব।
তারা এগিয়ে যেতে থাকে নদীর ধারে খাড়াই আঁকাবাঁকা পথ ধরে, পিছন ফিরে একটি যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল কিছুটা দূরে, পরনে তার ফ্ল্যানেলের ট্রাউজার এবং সবুজ রঙ-এর শার্ট। তাদের দিকে এগিয়ে এলো সে ঘুরে দাঁড়িয়ে।
মিসেস অলিভার পরিচয় করিয়ে দিল, মিঃ মাইকেল ওয়েম্যান এবং ইনি মাঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো।
পোয়ারোর সঙ্গে পরিচয়-এর সময় তাচ্ছিল্যের ভঙ্গীতে মাথা নাড়ল সে। পোয়ারো ঠিক লক্ষ্য করল।
যুবকটি তিক্তস্বরে বলল, অভূতপূর্ব সুন্দর একটা বোট-হাউস নদীর ধারে, কিন্তু উপায় আছে নাকি এর সৌন্দর্য দেখার। কেটে ফেলতে হবে কম করেও কুড়িটা গাছ। হয়তো তাহলে নদীর বুক থেকে বোট-হাউসের সৌন্দর্য অবলোকন করা যাবে। মোটেই উপযুক্ত নয় জায়গাটা। মিসেস অলিভার বলল, হয়তো অন্য আর জায়গা ছিল না।
মুখ বিকৃত করে ওয়েম্যান বলল, কোনো সৌন্দর্যবোধ নেই এইসব পুঁজিপতিদের। আবার ইনিই একটা ফলির ফরমাশ দিয়েছেন। কোথায় সেটা বসানো হবে, এখানে এই জঙ্গলের ভিতর ছিমছাম একটা পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে জায়গাটা পরিষ্কার করে। তার ফলে এখানকার লোকেরা ফলির স্থাপত্যশিল্পের কদর উপলব্ধি করতে পারবে। বরদাস্ত করা যায় না যে, ঐ লোকটি এমন একটি সুন্দর জায়গার মালিক হয়ে বসে থাকবে।
মনে মনে ভাবল পোয়ারো, এই যুবকটি একেবারে জর্জ স্ট্যাবস-এর বিপরীত। নদীর ধারের মাটি ক্রমশ নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে, আলগা হয়ে যাচ্ছে মাটি, জায়গাটি খুব শীঘ্রই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। তার থেকে নতুন করে বাঁধানোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। বোট-হাউস-এর সামনে নদীর ধারটা। এটাই আমার মতামত, কিন্তু আমার কথায় কান দেয় না ঐ জেদী বৃদ্ধ মানুষটা।
যাক খবর কি তোমার টেনিস প্যাভিলিয়নের? জানতে চাইলো মিসেস অলিভার।
যুবকটির কণ্ঠস্বর গোঙানির মতো শোনালো। সে বলল–তিনি এক ধরনের চাইনিজ প্যাগোডা চান। আবার সেই সঙ্গে যদি ড্রাগন-এর ব্যবস্থা করা যায়। কারণ লেডি স্টাবস নিজেকে সাজিয়ে তুলতে ভালোবাসেন চাইনিজ টুপি মাথায় দিয়ে। আচ্ছা এটা কি একটা স্থাপত্য শিল্প? যার কাছে অর্থ নেই তার হয়তো ইচ্ছা করে কোনো জিনিস সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে, আবার যার অর্থ আছে? সে একটা বীভৎস কিছু করে।
আমি আপনাকে গভীরভাবে সমবেদনা জানাচ্ছি, আমি অনুভব করি আপনার ব্যথাটা কোথায়? পোয়ারো বলল, গম্ভীর স্বরে।
মাইকেল বলল, আসল কথা হল টাকা থাকলেই সুন্দর কিছু করা যায় না, রুচি পছন্দ থাকা দরকার। আবার সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করার মনও দরকার।
তাহলে বেশ তো এমন লোক পাকড়াও করো যে টাকা খরচ করবে, এছাড়া কখনই–তুমি কাজ পাবে না, বলল মিসেস অলিভার। মিসেস অলিভার তারপর বাড়ির দিকে চলতে লাগল। তাকে অনুসরণ করলো পোয়ারো এবং আর্কিটেক্ট যুবকটি নিরুৎসাহভাবে।
একজন ছোটখাট চেহারার বয়স্ক মহিলা নদীর ধারে আগাছা ছাঁটাই-এর কাজে ব্যস্ত–সে সম্ভাবষণ জানালো তাদের উঠে দাঁড়িয়ে।
মহিলাটি বলল, বহু বছর ধরে এখানকার সব কিছুই অবহেলিত। এমন একজন লোককে পাওয়া যায় না আজকাল যার আগাছা সম্পর্কে জ্ঞান আছে, তারা জানে না সেগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করতে পারলে কত সুন্দর করে তোলা যায় জায়গাটাকে। এই পাহাড়ী জায়গাটা মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রঙিন ফুল ফুটে আলো হয়ে উঠবে, কিন্তু এবছর খুব হতাশ হতে হচ্ছে–প্রাণহীন সমস্ত গাছকে গত হেমন্তে কেটে ফেলা হয়েছিল।