কোনো ভাবাবেগ বোঝা গেল না মিসেস অলিভারের মধ্যে। এরই মধ্যে কিন্তু দুদুটো খুন হয়ে গেছে, এটা আমি সাহসের সঙ্গে বলছি, বলল সে।
পোয়ারো সংশোধন করে বললো, তিনটে।
অলিভার প্রশ্ন করলো তিনটে খুন? কে হল, তৃতীয় শিকার?
পোয়ারো বললো, সে একজন বৃদ্ধ তার নাম মারডেল। আর সে মারডেলের মৃত্যুর ঘটনা ব্যাখ্যা করে জানালো।
জানতে চাইলো অলিভার, আপনি বলছেন তাহলে, এটা দুর্ঘটনা নয়? তাহলে বলুন দয়া করে কে খুন করেছে তাকে?
পোয়ারো বলল, এত খবর টেলিফোনে দেওয়া যায় না ম্যাডাম।
মিসেস অলিভার বলল, তাহলে ফোন ছেড়ে দিই?
না, আপনাকে আমি আরও দুটি প্রশ্ন করতে চাই, বলল পোয়ারো।আপনি কি প্রথমে সেই মেয়েটির মৃতদেহের জায়গাটা নির্দিষ্ট করার জন্য বোট-হাউসটাই মনোনীত করেছিলেন, আপনার মার্ডার হান্টের পরিকল্পনার সময়? এটা আমার প্রথম প্রশ্ন।
অলিভার বলল, না, প্রথমে আমি আমার হাউসটা বেছে নিই। এখন আমার তার নামটা মনে পড়ছে না। কে যেন আমাকে পীড়াপীড়ি করতে লাগল যে মৃতদেহটা যেন ফলিতেই অবিষ্কৃত হোক। কি অদ্ভুত পরিকল্পনা। আর লোকেরাও কি বোকা! আমি রাজী হইনি অবশ্য প্রথমে সেই প্রস্তাবে।
অবশ্য আপনি শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছিলেন সেই বোট-হাউসটাকেই, বলল পোয়ারো।
আচ্ছা! এবার আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, চূড়ান্ত কু লেখা আছে কমিকস-এ, আমাকে আপনি বলেছিলেন, একথা কি আপনার মনে আছে, আর সেগুলো মারলিনকে পড়তে দেওয়া হয়েছিল তার সময় কাটাবার জন্য।
অলিভার বলল, অবশ্যই মনে আছে বইকি!
বলুন এবার তাহলে সেটা ঠিক এইরকম ছিল : ডেরিনের সঙ্গে অ্যালবার্ট বেড়াতে যায়। অরণ্যে জর্জি গোর্জি ভ্রমণার্থীদের চুমু খায়। সিনেমায় মেয়েদের চিমটি কাটে পিটার।
আহত কণ্ঠে বলল মিসেস অলিভার, আশ্চর্য তো, আমি কেন ওসব নোংরা কথা লিখতে যাব বলুন?
না, অতি প্রাঞ্জল ছিল আমার ক্লু। রহস্যময় স্বরে নিচু গলায় বলল অলিভার-ভ্রমণার্থীর ঝোলা ব্যাগ দেখুন।
আশ্চর্য! তাহলে এই ক্লু লেখা কমিকসটা সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়, এবং অন্য মতলব ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তার পরিবর্তে, বলল পোয়ারো। তাহলে বোট-হাউসের মেঝের উপর সেই ঝোলা ব্যাগটা নিশ্চয় পাওয়া গিয়েছিলো? অলিভার জানতে চাইলো।
আঃ, অন্য একটা ঝোলা ব্যাগ সেটা, আর সেটাই আমাকে ভাবাচ্ছে, বলল পোয়ারো।
মারলিনের হতে পারে সেটা, তবে সেটা হাওয়া উচিত ছিলো সেই যুগোস্লাভিয়ান স্ত্রীর। আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি? বললো অলিভার।
পোয়ারো বলল, অবশ্যই বুঝেছি, সে চেষ্টা করলো আর একবার কুয়াশায় অন্ধকারে ডুব দেওয়ার জন্য।
তবে শুনুন, বিষে ভরা একটা ওষুধের বোতল ছিল সেই ঝোলাব্যাগের মধ্যে, গ্রাম্য লোকেরা তাদের স্ত্রীকে হত্যা করে থাকে যা খাইয়ে। লক্ষ্য করুন, নার্সের ট্রেনিং নিতে সেই যুগোস্লাভিয়ান স্ত্রী এখানে এসেছিল। নার্সটি তখন বাড়িতে ছিল, যখন কর্নেল ব্লান্ড অর্থের জন্য তার স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে। আর বিষের বোতলটা তখন হাতে পেয়ে সরিয়ে ফেলল সেই নার্সটি। পরে সে ব্ল্যাকমেল করতে আসে কর্নেল ব্লান্ডকে। আবার নার্সটিকে হত্যা করল সেই কর্নেল ব্লান্ড। জিজ্ঞাসা করল অলিভার, এটা আপনার উপলব্ধি হলো মঁসিয়ে পোয়ারো?
না, কিছুতেই নয়, বলার সঙ্গে সঙ্গে সে আবার বলল, ম্যাডাম, জানেন কি এটাই আমার আনন্দ যে কেউ পুরস্কৃত হলো না, মার্ডার হান্ট এমনই নির্লিপ্ত সহজ সরল সে।
তবে অনেক দেরিতে, একজন পুরস্কার পেয়েছিল অবশ্য, এক বৃদ্ধা মহিলা সেদিন প্রায় সাতটার সময় উল্লিসিত হয়ে বোট-হাউসে ছুটে আসে তার আবিষ্কৃত কু বলার জন্য, অবশ্য তখন আবিষ্কৃত হয়ে গেছে মারলিনের মৃতদেহ। অবশ্য পুরস্কৃত করা হয়। বলল মিসেস অলিভার, আরো বলল সে, সে ভয়ঙ্কর যুবকটি বলেছিল, আমি নাকি ড্রিঙ্ক করি মাছ খাওয়ার মতো, কখনো তাকে আর ক্যামেলিয়া গার্ডেনে দেখা যায়নি।
পোয়ারো বলল, ম্যাডাম আপনি আপনার এই কাহিনী হয়তো একদিন আমাকে বলবেন।
মিসেস অলিভার বলল, আমি আমার লেখার মধ্যে এই ঘটনার রূপ দেওয়ার চিন্তা করছি। পোয়ারো অবাক হয়েছিল বছর তিনেক পরে মিসেস অলিভারের লেখা, দ্য ওম্যান ইন দ্য উড, এই বইটা পড়ে। তার বইটা পড়ে কিছু কিছু ঘটনা এবং চরিত্র যেন পরিচিত মনে হচ্ছিল, অস্পষ্টভাবে।
ইনসপেক্টর ব্লান্ড এবং চীফ কনস্টেবল কৌতূহলী চোখে তাকাল এরকুল পোয়ারের দিকে। চীফ কনস্টেবলের ধারণা, এই ছোটোখাটো চোহারার বেলজিয়ান ভদ্রলোকটি হয়তো একসময় যাদুকর ছিল, এখন তার বয়স হয়েছে অতএব সেই আগের কর্মকুশলতা হয়তো আর নেই। তাকে বোঝালো ইনসপেক্টর ব্লান্ড যে, এরকুল পোয়ারো উপস্থিত ছিল সেই দুর্ঘটনা স্থলে, সেজন্য তার পর্যবেক্ষণ আমাদের কাজে লাগাতে পারে। এছাড়াও তারা এই কেসে এগোতে পারেনি এক পাও, তদন্তের কাজ সেই তিমিরেই পড়ে আছে। পুলিশের আর কোনো উপায় নেই, অন্ধকারে দেওয়ালে পিঠ দিয়ে পোয়ারোর পরামর্শ নেওয়া ছাড়া।
চীফ ইনসপেক্টর বস্তুতপক্ষে আজ তার নৈশভোজের পাটিতে যাওয়া বাতিল করে দিয়ে অপেক্ষা করছিল এরকুল পোয়ারোর জন্য একমাত্র মিঃ রান্ড-এর জেদ-এর খাতিরেই।
শেষ পর্যন্ত তাহলে আপনি এখানে এলেন মঁসিয়ে পোয়ারো? করমর্দন করে চীফ ইনসপেক্টর বলল। আপনার অপেক্ষায় আমরা সবাই বসে আছি অসহায় অবস্থায়।