মিসেস টাকার এবার বলল, অতীতে বহু বছর ধরে মিঃ ফোলিয়াটের পরিবারের সমস্ত কিছু দেখাশুনা করত আমার বাবা, তাদের সমস্ত কিছু আমার বাবার জানা ছিল। আর তারাও খুব পছন্দ করতেন তাকে। মিসেস ফোলিয়াট এই তো সেদিন বাবার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার জন্য অনেক টাকা খরচ করলেন।
ব্যাপারটা পোয়ারোর মনে দাগ কেটে গেল। মিসেস ফোলিয়াট-এর যে উদ্দেশ্যই থাকুক না কেন এই আর্থিক সাহায্যের পেছনে। আচ্ছা আপনার বাবা কি সেই জেটির বৃদ্ধ লোকটি? আমার যেন মনে পড়ছে আমি কথা বলেছি তার সঙ্গে। আচ্ছা তার নাম যেন কি?
মারডেল স্যার। বিয়ের আগে ঐ পদবী ছিল, বলল মিসেস টাকার।
আমার যদি ঠিক মনে থাকে, আপনার বাবা ছিলেন ন্যাসে হাউস-এর প্রধান মালি। বলল পোয়ারো।
না, সেটা হল আমার সব থেকে বড় ভাই। আমরা মোট এগারজন ভাই-বোন, সব থেকে ছোট আমি। বহুবছর ধরে আমি ন্যাসেতে কাজ করে আসছি, অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলল সে।
পোয়ারো মৃদু গলায় বলল, ফোলিয়াটদের নাম সব সময়ই শোনা যায় ন্যাসে হাউসে।
তাকে কথাটা বলেছিল বৃদ্ধ মারডেল। অতএব মারলিন মারডেলের নাতনি। আমি এখন দেখতে পাচ্ছি–পোয়ারো ভাবলো এক মুহূর্ত নীরব থাকার পর। কিন্তু ভেতরে সে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলো ভীষণভাবে।
আপনার বাবা নদীতে ডুবে মারা গেছেন, আপনি বলছেন?
এটা একটা দুর্ঘটনা বলতে পারেন স্যার–বলল মিসেস টাকার।
পোয়ারো বিস্মিত হয়ে বলল, দুর্ঘটনা, ঠিক তা নয়, যেটা আপনি ভাবছেন, এটা আমি আশঙ্কা করি। পোয়ারো উঠে দাঁড়াল এবং বলল অনেক আগেই আমার ধারণা করা উচিত ছিলো। আসলে আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিলো মারলিনের মৃত্যু।
বাইরে বেরিয়ে এলো পোয়ারো মিসেস টাকারকে তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য সমবেদনা জানিয়ে, তারপর ভাবল সে, আমি কি নির্বোধ। এতদিন যে পথে চলেছি তা বেঠিক। মেরিলিন-এর ফিসফিস আওয়াজ শুনে তার ভাবনা থেমে গেল। সে পোয়ারোর কাছে এসে বলল, সমস্ত কিছু মা জানে না। সেই কটেজের লেডির কাছ থেকে মারলিন স্কার্ফটা পায়নি। সে কিনেছিল টরকোয়ে থেকে। শুধু তাই নয়, সেন্ট, লিপস্টিক, সবই সে সেখান থেকে কিনত। সিনেমায় যেত দিদি মাঝে মাঝে। মেরিলিন হাসল দাঁত বার করে, বলল, মা এসবের কিছুই জানে না। তাও তিনি জানতেন না, এসব কেনার জন্য মারলিন যে কোথা থেকে টাকা পেত। আমাকে বারণ করে দিয়েছিল দিদি এসব কথা কাউকে বলতে।
পোয়ারো তার হাতে পাঁচ শিলিং গুঁজে দিল, এবং তাকে বলল, তুমি খুব চালাক মেয়ে। তারপর তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে দাঁড়াল সে নিকটবর্তী একটি পাবলিক টেলিফোন বুথ-এ। ইনসপেক্টর ব্লান্ডকে ফোন করতে হবে।
ফোনে প্রশ্ন করল ব্লান্ড, মঁসিয়ে পোয়ারো। কোথা থেকে কথা বলছেন আপনি? পোয়ারো উত্তর দিল ন্যাসেকম্ব থেকে। জানতে চাইলো পোয়ারো, আচ্ছা কি রকম দেখতে ছিল, টিয়েন ডি সৌউসার ইয়টটা?
উত্তর দিল ব্লান্ড, আপনি যেরকম ভাবছেন সেটা নয়। কোনো খোপটোপ আমরা দেখতে পাইনি সেই ইয়টে লুকিয়ে রাখার মতো চোরাই জিনিসপত্র আর কি?
পোয়ারো বলল, আপনার ভুল হচ্ছে, আমি জানতে চাইছি যে ইয়টটা বড় ছিল না ছোট?
ইনসপেক্টর ব্লান্ড, একগাল হেসে বলল, শুধু বড় নয় স্যার বেশি রকমের সৌখীন এবং বিসালবহুল সেই ইয়ট, মঁসিয়ে পোয়ারো আপনি এর থেকে কি বুঝতে পারলেন?
ডেড ম্যানসন ফলি একজন বিত্তবান লোক ইটিয়েন এবং অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি সে, বলল পোয়ারো।
জানতে চাইলে ব্লান্ড, কেন, কি ব্যাপার স্যার?
পোয়ারো বলল, আমার শেষ উপলব্ধি এটাই। আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি অবশেষে, অত্যন্ত বোকা ছিলাম আমি একটু আগে পর্যন্ত। তারপর সে ফোনটা কেটে দিল। এবার মিসেস অলিবারের পোন নম্বরটা ডায়াল করলো পোয়ারো।
মিসেস অলিভার ফোনে উত্তর দিল আমি খুব খুশী হয়েছি যে, আপনি আমাকে ফোন করেছেন। তবে আপনি ফোন করেছেন মঁসিয়ে পোয়ারো কি মনে করে? অলিভার জানতে চাইল।
পোয়ারো বলল, আপনার মার্ডার হান্টের কয়েকটি চরিত্র সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে চাই মিসেস অলিভার। ম্যাডাম, সেই এ্যাটম বৈজ্ঞানিকটি কে?
উত্তর দিল অলিভার, আলেক লেগি।
অর্থাৎ শেলি লেগির স্বামী! আলেগ লেগি! একজন বৈজ্ঞানিক কি সে? জানতে চাইলে পোয়ারো।
বস্তুত, সেই বৈজ্ঞানিক। হারয়েল নয়, তারা ছিল হেসলে হলিডে কটেজে। বলল অলিভার।
আর আপনার মনে মার্ডার হান্টের এই চরিত্রটা উদয় হয়, ন্যাসে হাউসে তার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরেই–তাই নয় কি? প্রশ্ন করলো পোয়ারো, অথচ তার স্ত্রী যুগোস্লাভিয়ান হয়তো?
মিসেস অলিভার বলল, না না, একজন খাঁটি ইংরেজ শেলি।
পোয়ারো বলল, আচ্ছা তাই নাকি? তাহলে আমি এখন অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি।
অলিভার প্রশ্ন করল, এত বিলম্ব হয়ে গেল?
সময় তো একটু লাগবেই, কেউ কখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে না সব সময় হঠাৎ করে, পোয়ারো নিজের সমর্থনে বলল। আবার বললো পোয়ারো, পুলিশ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
আক্ষেপের সুরে জানালো অলিভার, পুলিশের কথা বলছেন তো, এখন যদি একজন মহিলা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রধান হত।….
বুঝতে পারলো পোয়ারো সেই সুপরিচিত উক্তির কথা, তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আমি অতি বিশ্বস্ততার সঙ্গে বলছি যদিও কেসটা খুব জটিল তবুও এখন আমি সিদ্ধান্তে এসে গেছি।