ঝুঁকে পড়লো পোয়ারো মিসেস ফোলিয়াট-এর দিকে। বলল, এখানে কেন আজ শান্তি বিঘ্নিত আপনি তো বেশ ভালোভাবেই জানেন সেটা। খুনের ব্যাপারে সম্ভবত সমস্ত কিছুই আপনি জানেন। কে সেই কিশোরীকে হত্যা করেছিল, হ্যাঁ সেটাও আপনি জানেন। আর হ্যাটি স্টাবসকেই বা কে খুন করেছিল তাও আপনার অজানা নয়। আর স্টাবস-এর মৃতদেহ এখন কোথায় সম্ভবত আপনি সেটাও জানেন।
প্রচণ্ড চিৎকার করে মিসেস ফোলিয়াট বলে উঠল, না, আমি জানি না, কোনো কিছুই জানি না।
আপনি হয়তো জানেন না, তবে অনুমান করতে পারেন। আমি সে বিষয়ে নিশ্চিত। পোয়ারো বলল।
আপনি অসম্ভব কথা বলছেন, আমায় মাপ করুন, বলল ফোলিয়াট।
কখনোই অবাস্তব কথা নয়–এ সম্পূর্ণ অন্যরকম–এক বিভীষিকাময় বিপজ্জনক খেলা, বলল পোয়ারো।
ফোলিয়াট প্রশ্ন করলো, কি বললেন, বিপজ্জনক? কার ক্ষেত্রে?
ম্যাডাম আপনার ক্ষেত্রে। কারণ কে খুনী আপনি বেশ ভালোমতোই জানেন, আর এইজন্যই আপনার বিপদ, সেই জানাটা আপনি যদি নিজের মনের মধ্যেই গোপন রাখেন। পোয়ারো এই সকল কথা বলছিলো। আবার সে বলল, খুনীদের আমি বেশি ভালো করেই জানি ম্যাডাম, আপনার থেকেও।
মিসেস ফোলিয়াট বলল, আমাকে আর এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না, এখানেই ইতি টানুন, কিছুই আর করার নেই।
ম্যাডাম,এটা আপনি কি করে বলতে পারেন? কোনো তদন্তই কখনো শেষ হয়ে যেতে পারে না খুনীর প্রসঙ্গে, তা আমি নিজের জ্ঞান থেকে বলতে পারি, বললো পোয়ারো।
প্রায় কঠিন স্বরে বলল ফোলিয়াট, না, আমি বলছি সব শেষ। কারণ পুলিশও হাল ছেড়ে দিয়েছে সম্পূর্ণরূপে এই ব্যাপারে।
পোয়ারো বেশ জোড়ে মাথা নাড়লো। ম্যাডাম, না না, তা নয়। আপনার এখানেই ভুল হচ্ছে। পুলিশ হতোদ্যম হয়নি, আর আমিও আশা ছেড়ে দিইনি, বললো পোয়ারো। ম্যাডাম, খেয়াল রাখবেন, আমি এরকুল পোয়ারো সম্পূর্ণ আশা ছেড়ে দিইনি।
এরকুল পোয়ারো গ্রামের রাস্তা ধরল, ন্যাসে ছেড়ে এসে। নিহত মারলিন টাকারের বাড়িতে গিয়ে তার অভিবাবকদের সঙ্গে আলোচনা করা, এটাই হল তার বর্তমান গন্তব্যস্থল।
মিসেস টাকার, মারলিন-এর মা তাকে সাদর আমন্ত্রণ জানালো, স্যার ভেতরে আসবেন না?
মিসেস টাকার তাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গিয়ে বসাল। বলল, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, আপনার নাম? বলল পোয়ারোকে।
আমি এরকুল পোয়ারো, এখন চিনতে পারছেন তো? পোয়ারো বলল, আপনার মেয়েকে যে হত্যা করেছে তার খোঁজ নিশ্চয়ই পাওয়া গেছে, আমার বিশ্বাস।
তিক্তস্বরে মিসেস টাকার বলল, না, এখনো তার নামও শোনা যায়নি, ধরাও পড়েনি। পুলিশ হয়তো নিজেদেরকে ব্যস্ত করতে চাইছে না আমরা গরীব বলে, এটাই আমার ধারণা।
পুলিশ তাদের কাজ নিয়মমাফিক করে যাচ্ছে। এটা বলা যায়, বললো পোয়ারো, তবে দেরি হওয়ার কারণ হল, কেসটা খুবই জটিল। এইমাত্র কথা বলে এলাম মিসেস ফোলিয়াট-এর কাছ থেকে। খুব গভীরভাবে তিনিও এটা নিয়ে চিন্তা করছেন। মিসেস টাকার বলল, হ্যাঁ, তিনিও বেশ ভেঙ্গে পড়েছেন, তিনি নিজের বাড়ির দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন অর্থাৎ আমার মেয়ের খুনের ব্যাপারটা নিয়ে।
পোয়ারার আর একবার মনে হল, ন্যাসে হাউস এখনো যেন মিসেস ফোলিয়াটেরই, এখানকার প্রত্যেক লোকেরই অবচেতন মনে এরকম ধারণা।
পোয়ারো প্রশ্ন করলো, আচ্ছা মিসেস টাকার, কে প্রস্তাব দিয়েছিলো, মারলিনকে মার্ডার হাটে অভিনয় করার?
তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো মিসেস টাকার, লন্ডনের লেখিকা।
এখানে তো তিনি একজন আগন্তুক মহিলা, তার ওপর তিনি মারলিনকে চিনতেনও না, অতএব…বললো পোয়ারো।
বোধহয় আমার মেয়েকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেয় মিসেস মাস্টারটনই, বললো মিসেস টাকার। আর খুশী হয়েছিল মারলিনও, অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে। পোয়ারোর মনে হল আর একবার বোধহয় কেউ আড়াল থেকে স্বনামধন্যা মিসেস অলিভার-এর মাধ্যমে তাদের ইচ্ছেটা পূরণ করবে। এরা ক্ষমতাহীন অধিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব-মিসেস অলিভার এবং মিসেস মাস্টারটন। কিন্তু মারলিন অত খুশী হলো কেন অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে? সে গরীব ঘরের মেয়ে। তবে কি সে অর্থ বা কোনো দামী জিনিসের প্রলোভনে পড়েছিলো?
পোয়ারো প্রশ্ন করল, আমার এই রকম আশঙ্কা হচ্ছে, আপনার কি জানা আছে মারলিনকে কেউ কিছু উপহার দিয়েছিল? এই ধরুন কোনো চমৎকার মহিলা।
ও হ্যাঁ, আপনি কি মিল কটেজের মিসেস লেগির কথা বলছেন? মারলিনকে সে একবার একটা লিপস্টিক উপহার দিয়েছিলো। জানালো মিসেস টাকার। আমি তখন প্রায় পাগলের মতো রেগে গিয়ে বলেছিলাম, তুমি তোমার মুখে ঐ সব নোংরা জিনিস লাগাতে পারবে না। মারলিন উত্তরে বলেছিল, তাকে লিপস্টিক দিয়েছিল লওডরস কটেজের লেডি।
পোয়ারো আরও জানতে পারে মারলিনের ছোট বোন-এর কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে যে, তার দিদিকে মিসেস লেগি একটা স্কার্ফ উপহার দেয়। অতএব এইবার বোঝা যাচ্ছে যে, মার্ডার হান্টে নিহত মেয়েটির ভূমিকায় অভিনয় করতে রাজী হয়েছিল মারলিন তার শখের জিনিসের লোভে।
আপনি কি আর কিছু হারিয়েছেন ম্যাডাম।
পরবর্তী প্রশ্ন করল পোয়ারো।
স্ত্রীর হয়ে উত্তর দিল মিঃ টাকার, হ্যাঁ, আমার স্ত্রীর বাবা, মনে হয় পা পিছলে নদীতে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি, ফেরি পেরিয়ে জেটিতে নামার সময়, ফলে তিনি জলে ডুবে মারা যান।