হ্যাটি বলেছিল লোকটা বদ প্রকৃতির এবং অনেক কুকাজ সে করেছিল। ব্লান্ড-এর কথা অনুযায়ী তার স্বামী জর্জকে লেডি স্টাবস নকি সৌউসা সম্বন্ধে বলেছিল, সে অনেক লোককে খুন করেছিল।
এই ব্যাপারটা উল্লেখযোগ্য বলে ধরা যায়। নতুন করে আবার পরীক্ষা করে দেখতে হয় এইসব তথ্যগুলো।
আবার ভাবলো পোয়ারো–অনেক লোককে খুন করেছিল ইটিয়েন ডি সৌউসা।
ইটিয়েন যেদিন ন্যাসে হাউসে এসেছিল–সেদিন সম্ভবত দুইজনকে খুন করেছিল একজন লোক। এমন জোর দিয়ে এই কথাটা মিসেস ফোলিয়াট বলেছিলেন যে-কারোর কর্ণপাত করা উচিত নয় হ্যাটির এরকম নাটকীয় মন্তব্যে। কথাটা পোয়ারোর বেশ কানে বেজেছিলো।
তাহলে কি মিসেস ফোলিয়াট…। ভাবলো এরকুল পোয়ারো ভ্র কুঞ্চিত করে। আমি কেন ফিরে আসছি সর্বদাই মিসেস ফোলিয়াট-এর প্রসঙ্গে..আমার এখন আর এই চেয়ারে বসে থাকা উচিত নয়। ডেভনে ফিরে যেতে হবে এখনি ট্রেনে করে এবং দেখা করতে হবে মিসেস ফোলিয়াট-এর সঙ্গে।
এরকুল পোয়ারো ন্যাসে হাউসের বিরাট দরজার সামনে অল্পক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে রইল। এখন মিসেস ফোলিয়াট বাড়িতে নেই, বেরিয়েছে হয়তো পরিচর্যা করতে অথবা তার কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। অনেক প্রতিবেশী বন্ধু আছে তার। অনেক বছর ধরে সে এখানে আছে তার এই বাড়িতে।
ফেরিঘাটের সেই বৃদ্ধ লোকটি পোয়ারোকে বলেছিল, ফোলিয়াটারই সর্বেসর্বা ন্যাসে হাউসে, একথা তার এখন মনে পড়ল।
ফোলিয়াট পোয়ারোকে দেখে প্রশ্ন করলো। আপনি মঁসিয়ে পোয়ারো? পোয়ারো ভাবলো এক মুহূর্তের জন্য যেন সে মিসেস ফোলিয়াটের চোখে এক অজানা ভয়ের ছায়া দেখতে পেল। হয়তো এটা তার কল্পনাও হতে পারে। ম্যাডাম ভেতরে আসতে পারি? বিনীতভাবে পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল।
মিসেস ফোলিয়াট নিজেকে সংযত করে নিয়েছিলো ততক্ষণে–বলল, অবশ্যই আসতে পারেন। আপনার জন্য একটু চা করে নিয়ে আসি কেমন? এই বলে সে ড্রইংরুম থেকে নিষ্ক্রান্ত হল।
ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখছিল ততক্ষণে পোয়ারো সময় কাটানোর জন্য। এই সময় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো দেওয়ালে টাঙানো একটা ফটোগ্রাফ। চায়ের ট্রে নিয়ে যখন মিসেস ফোলিয়াট ঘরে এসে প্রবেশ করলো, সেই ফটোটার দিকে নির্দেশ করে পোয়ারো জানতে চাইল, ম্যাডাম, ওই ফটোটা কি আপনার স্বামীর?
সংক্ষিপ্ত উত্তরে সম্মতি জানালো মিসেস ফোলিয়াট এবং বলল, দেখুন মিঃ পোয়ারো, আমার কোনো আকর্ষণ নেই ফটোর প্রতি। জীবন্ত ছিল যেটা অতীতে, আজ তা মৃত। সকলেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত, অতীত ভুলে যাওয়ার জন্য। কেটে ফেলা উচিত মরা গাছের মতোই।
পোয়ারো আশ্চর্যবোধ করল, ভাবল, কত নম্র; ভদ্র ও সৌজন্যময় ভদ্রমহিলার বাইরের রূপটা অথচ অন্তরটা কত কঠিন; কি নিষ্ঠুর। এখন পোয়ারোর মনে পড়ল, প্রথম যেদিন তাকে বাগান পরিচর্যা করার সময় মৃত গাছগুলিকে যেভাবে নির্দয়-এর মতো কেটে দিতে দেখেছিল, অতএব মনে হয় শুধু সে মরা গাছই কেটে বাদ দেয় না, মৃত মানুষ তার আপনজন হলেও সে তাকে জীবন থেকে বাদ দিয়ে দেয়।..
মিসেস ফোলিয়াট পোয়ারোর হাতে চায়ের কাপ দেবার সময় বলল, আমি ভীষণ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আপনাকে দেখে। ভাবতেই পারিনি যে, আপনি আবার এখানে ফিরে আসবেন।
এখান দিয়ে কি আপনি অন্য কোথাও যাচ্ছিলেন?
না, মহাশয়া আমি আংশিকভাবে আপনার কাছেই এসেছি। পোয়ারো জানাল। যেহেতু কোনো খবর নেই মিসেস লেডি স্টাবস-এর এটা প্রথম কথা।
সত্যিই, খুব দুঃখের ব্যাপার, খুব মর্মাহত হয়েছে মিঃ জর্জ, জানাল মিসেস ফোলিয়েট।
পোয়ারো জানতে চাইল, আচ্ছা জর্জ কি এখনো বিশ্বাস করেন যে, তার স্ত্রী জীবিত আছেন?
মিসেস ফোলিয়াট খুব শান্তভঙ্গীতে মাথা নাড়ল, বলল সে, তিনি বোধহয় সে আশা ত্যাগ করেছেন, এটা আমার মনে হয়।
পুলিশ কি এখনো খোঁজ করছে তার স্ত্রীকে? পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল।
আমি ঠিক বলতে পারব না, জানাল ফোলিয়াট, তবে মনে হচ্ছে পুলিশ খোঁজ করছে। আর দেখা হয় না জর্জের সঙ্গে। তিনি এখন লন্ডলে কাটাচ্ছেন বেশিরভাগ সময়।
আর যে মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে? ধরা পড়েছে কি খুনী? জানতে চাইলো পোয়ারো।
না, আমি কিছু বলতে পারব না পুলিশের ব্যাপারে, বলল মিসেস ফোলিয়াট। আবার বললো সে, একেবারেই নিরর্থক।
এ যেন এক উদ্দেশ্যহীন অপরাধ, একথা বলা যায়, মেয়েটি হতভাগিনী কিশোরী-ম্যাডাম, আপনি কিন্তু এখনো বিমর্ষ হয়ে পড়েন মেয়েটির কথা মনে পড়লে। বলল পোয়ারো।
মিসেস ফোলিয়াট বলল, নিশ্চয়ই, এমন কি মরার বয়স ছিল ঐ বাচ্চা মেয়েটির? অন্তত তার থেকে আগে আমাদেরই মরা উচিত ছিল কারণ, আমাদের বয়স হয়েছে। আবার ফোলিয়াট বলল, আমার আর বেশিদিন বাঁচতে ইচ্ছা হয় না জানেন মিঃ পোয়ারো? আমার পরিবার নেই, কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। অবশ্য অনেক বন্ধুবান্ধব আছে আক্ষেপের সুরে সে বলল।
বাড়ি আছে তো আপনার, অর্থাৎ এই ন্যাসে হাউস? বলল পোয়ারো। অবশ্য সেটা স্যার জর্জ-এর সম্পত্তি কিন্তু প্রায় বেশি সময়েই তো তিনি লন্ডনে থাকেন। আর আপনার হাতেই তো এখানকার সাম্রাজ্য শাসনের ভার, তা নয় কি?
ক্ষুণ্ণ মনে মিসেস ফোলিয়াট বলল, আমি জানি না, আপনি কি বলতে চাইছেন। আমাকে দয়া করে স্যার জর্জ এখানে একটা লজ ভাড়া দিয়েছেন। আমার আর এর বেশি কিছু পাওনা নেই। তবুও সুখে, স্বস্তিতে থাকতে পারতাম যদি এরকম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা না ঘটত। অতএব এই পরিস্থিতিতে আগের শান্তি কি এখানে আর আছে বলুন?