পোয়ারোর দৃষ্টিতে পড়ল যেন শেলি লেগির কণ্ঠস্বরে সন্দেহের আভাস। পোয়ারো প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে জিজ্ঞাসা করলো, ম্যাডাম আপনি কি গতকাল বিকালে চায়ের আসরে ছিলেন?
ভ্রূ তুলে পোয়ারার দিকে তাকাল শেলি, বলল চায়ের আসরে? দ্রুত বলল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই, জ্যোতিষীর ছদ্মবেশে একভাবে বসে থাকা কি বিরক্তিকর আপনি তো জানেন না?
আমার মনে হয় ম্যাডাম, একটু আগে আপনি এখানে কিছু একটা খুঁজতে এসেছিলেন! বলল পোয়ারো। দেখুন তো এটা খুঁজছিলেন কিনা? পোয়ারো তাকে একটা সুদৃশ্য সোনার টুকরো দেখালো হাতে করে।
ঠিক বলেছেন, হ্যাঁ, আমি তো এটাই খুঁজছিলাম, শেলি বলল। মঁসিয়ে পোয়ারো ধন্যবাদ, আর আপনি কোথা থেকে এটা পেলেন? জানতে চাইলো শেলি লেগি।
পড়েছিল এই ফলির মেঝের ওপর, পোয়ারো বলল।
এটা হয়তো ফেলে দিয়ে থাকবে, বলল মিসেস লেগি।
পোয়ারো প্রশ্ন করলো, গতকাল কি?
হয়তো আগে কোনো একদিন হবে, না না, কালকে নয়। বললো শেলি।
জোর-এর সঙ্গে পোয়ারো বলল, না ম্যাডাম গতকাল বিকালেই, কারণ আমি তখন আপনার কব্জির ব্রেসলেটে এটা দেখেছিলাম, গতকাল যখন আপনি টেন্টে আমার ভবিষ্যতের কথা বলছিলেন।
আর কেউ বোধহয় পোয়ারোর মতো এভাবে মিথ্যে কথা জানে না। আসল কথাটা হল, এইভাবে অন্যের কাছ থেকে, মিথ্যে চাপ দিয়ে তার পেটের কথা বার করে নিতে জানে সে। আর ফলও হলো তাতে।
ঠিক মনে করতে পারছি না আমি, বলল শেলি লেগি। আমি যে এটা হারিয়েছি তা আজ সকালবেলায় আমি লক্ষ্য করলাম।
মিসেস শেলি লেগি পোয়ারোকে আর একবার ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুতগতিতে ফলি থেকে বেরিয়ে গেল।
ভাবতে থাকলো পোয়ারো অপসৃয়মান শেলি লেগির দিকে তাকিয়ে–এই ফলির ভেতরে গতকাল বিকেল চারটের সময়, নিশ্চয়ই কারো সঙ্গে আপনি দেখা করতে এসেছিলেন, বোট-হাউসে যাওয়ার পথে।
পোয়ারো আরো একবার শুনতে পেল কারো পায়ের শব্দ। স্বগতভাবে সে বলল, মিসেস লেগি তার সঙ্গেই দেখা করতে এসেছিল এখানে, যেই আসুক না কেন। সে অস্ফুট স্বরে বললো, আবার ভুল করলাম আলেক লেগিকে আসতে দেখে।
শুনতে পেয়েছিল কথাটা আলেক লেগি। প্রশ্ন করলো, কি বলছিলেন যেন মঁসিয়ে পোয়ারো, ভুল কি ব্যাপারে?
পোয়ারো বলল, জানেন আমার বিশেষ একটা ভুল হয় না, তবে আমি এখানে আপনাকে আশা করিনি।
প্রশ্ন করল আলেক, তাহলে আপনি কাকে দেখবেন আশা করেছিলেন?
পোয়ারো জানালো, আমি মনস্তত্ববিদ, আশা করেছিলাম, একটি যুবকের দেখা পাব এখানে, প্রায় কিশোর বয়েসেরই হবে সে। আমার মনে হয় সে আপনার বন্ধুই হবে, সে ফিরে গেছে ইয়ুথ হোস্টেলে, সেখানে গিয়ে তাকে খুঁজে বার করতে হবে, যদি আপনি তার দেখা পেতে চান।
আপনি তাহলে এজন্যই এখানে এসেছেন, পুরস্কার বিতরণের জন্য নয়। অবশ্য আমার সেটা আগেই বোঝা উচিত ছিলো, বলল আলেক লেগি। ফিরে তাকালো সে পোয়ারোর দিকে। তার মুখটা অপ্রসন্ন এবং শুকনো। বলল সে, ফাঁদ পেতে ইঁদুর ধরবেন ভেবেছেন আপনি, অথচ কিছু করতে পারবেন না আপনি। আপনি কি জানতে চান, সেটা কি জানেন? আপনি আপনার প্রমাণ পেয়ে গেছেন, এটা আমার ধারণা।
তারপর সে ফিরে চলল এলোমেলো পায়ে, পেছন ফিরে তাকাল না একবারের জন্যও। বড় বড় চোখ নিয়ে এরকুল পোয়ারো তার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
অস্ফুটস্বরে পেয়ারো উচ্চারণ করলো, সবই যেন কেমন রহস্যময় মনে হচ্ছে, এতে প্রচুর খোরাক আছে, রহস্য ও কৌতূহলের। আমার প্রয়োজনীয় প্রমাণ আমি পেয়ে গেছি। আমি কি পাইনি? কিসের প্রমাণ? খুনের?
চমৎকার চেহারার সুপারিনটেনডেন্ট বল্ডউইন বসেছিলেন হেলমাউথ পুলিস স্টেশনে। ইনসপেক্টর ব্লান্ড বসেছিলেন তার বিপরীত দিকের আসনে।
ব্লান্ড বললো, তার টুপিটা ঠিকই আছে, এই ধরনের টুপিই তিনি পড়তেন, ঈষৎ লাল রঙের, তার পরিচারিকা জানিয়েছে। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে, গতকাল তো তিনি পরেছিলেন কালো রঙ-এর টুপি। নদী থেকে আপনি উদ্ধার করেছেন। ঠিক এ ধরনের চিন্তা আমরাও করেছিলাম।
বল্ডউইন বললো, তবু এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না। কারণ নদীতে টুপিটা যে কেউ ফেলে দিতে পারে।
অবশ্যই, ইয়ট থেকে বা বোট-হাউস থেকে যে কেউ ফেলে দিতে পারে। বলল ব্লান্ড। বল্ডউইন অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো, ইয়ট? তিনি এখনো সেখানেই আছেন, জীবিত অথবা মৃত।
আর তার মৃতদেহটা কি সেখানেই পড়ে আছে, আপনার মতামত কি? এটা বলার কারণ হলো যে নদীতে জোয়ারভাটা খেলে গিয়ে থাকতে পারে ইতিমধ্যেই, সেরকম যদি হয়, ব্লান্ড জানতে চাইলো।
বল্ডউইন বলল, হ্যাঁ, আমি ওয়াটার ওয়েটের সঙ্গে আজ সকালে কথা বলেছি। আমি জোয়ারভাটার ব্যাপারে সব সময়ই তার সঙ্গে আলোচনা করে থাকি; সে জানিয়েছে যদি এই সময় সেই হেলেমে গিয়ে থাকে নদীতে পুরো জোয়ার ছিল তখন, পূর্ণিমার সময়। অতএব একথা বোঝা অসম্ভব নয় যে, তার মৃতদেহ নিশ্চয়ই কোরনিশ উপকূলে ভেসে গেছে হয়তো, নদীর জোয়ারের টানে। তবে এটা বলা সম্ভব নয় যে ঠিক মৃতদেহটা কোথায় গিয়ে পড়েছে। তবে আবার ভাটার টানে যে কোনো দিন মৃতদেহটা ফিরে আসতে পারে।
ব্লান্ড বলল, আর সেটা যদি না হয়, তবে খুবই মুশকিল হবে তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়াটা।
বল্ডউইন জিজ্ঞেস করলো ব্লান্ডকে, আপনি নিশ্চিত যে তিনি নদীর দিকেই গিয়েছিলেন?