মিসেস মাস্টারটন, এ ব্যাপারে আপনার কথা বলা দরকার চীফ কনস্টেবলের সঙ্গে। ব্লান্ড হাউন্ডের ব্যাপারে বলা প্রয়োজন, জানালো পোয়ারো।
মিসেস মাস্টারটন সঙ্গে সঙ্গে হেসে উঠলো, আমি নিজে কতকটা ব্লান্ড হাউণ্ড-এর মতো, এটা লোকে ভাবে জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো? আর আপনিও তাই ভাবছেন নিশ্চয়, আমি বাজী রেখে বলতে পারি।
পোয়ারো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো মিসেস মাস্টারটন চলে যেতেই। সে ঘুরে বেড়াতে লাগলো ঘন জঙ্গলে, অরণ্যপথে, তার যে সকল জায়গা অপ্রকাশিত সেখানেই নজর বেশি। একটা ফলির ভেতর অবশেষে ঘুরতে ঘুরতে প্রবেশ করলো পোয়ারো। বড় নিস্তব্ধ, বড় নির্জন জায়গাটা, হেলমাউথের নদীর ধারে ঘাসের উপর একটা ফলি তৈরির কথা বলেছিল মাইকেল ওয়েম্যান।
ইটিয়েন ডি সৌউসা, হেলমাউথ, ইয়ট এসপেরান্স সমস্ত কিছু যেন কি রকম ধরনের, অবশ্যই পোয়ারোর কাছে সেটা স্পষ্ট নয়। হঠাৎ পোয়ারোর নজরে চকচকে একটা জিনিস দেখা দিলো, তৎক্ষণাৎ সে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিলো সেটা। ভ্রু কুঁচকে সেটার দিকে তাকাতেই তার মনে একটা ছবি ভেসে উঠলো। এটা ছিল একটা সোনার ব্রেসলেট। তার মনে পড়ল, ম্যাডাম জ্বলেকা ওরফে শেলি লেগি। আবার সে যেন টেন্টে গিয়ে বসেছে লোকের ভবিষ্যৎ বলছে সেখানে বসে, আর এই ব্রেসলেটটা শোভা পাচ্ছে তার অঙ্গে, অতএব?
তাহলে কি এখানে, এই ফলিতে এসে বসেছিল শেলি লেগি। আর এই দামী সোনার টুকরোটা তার ব্রেসলেট থেকে খুলে পড়ে গেছে? হয়তো সে লক্ষ্য করেনি। গতকাল বিকেলের ঘটনাটা বোধহয়। এইসব আলোড়ন তুলল পোয়ারোর মনে। ইতিমধ্যে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেলোলা সে। একটা ছায়ামূর্তি ফলির সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো। তরুণ এক যুবক, মনটা তার অস্বাভাবিকভাবে বিক্ষিপ্ত একথা পোয়ারোর মনে হল। সে বলল, মাপ করবেন, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি, যুবকটির কথায় বিদেশী টান।
পোয়ারো শান্তভাবে হেসে বলল, আপনি এখানে অনাহুত, এটাই আমার আশঙ্কা, হোস্টেল থেকে কি আসছেন আপনি?
যুবকটি বলল, হ্যাঁ, রাস্তা শর্টকাট করার জন্য বনের ভেতর দিয়ে আসছিলাম, নদীর জেটিতে যাবো বলে।
এখান দিয়ে কোনো পথ নেই, আপনি যে পথে এসেছিলেন, সেই পথ দিয়েই ফিরে যেতে হবে আপনাকে, পোয়ারো তাকে বলল।
মাথা নিচু করে চলে যাবার সময় যুবকটি বললো, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। ফিরে যেতে থাকে পোয়ারো ফলি থেকে বেরিয়ে এসে। পথ চলতে চলতে সে ভাবতে লাগলো, ভুল করলাম নাকি আমি? তবে কি আমি খুনীকে দেখলাম? স্বগতভাবেই বললো সে। গতকাল উৎসবে এই যুবকটি অবশ্যই উপস্থিত ছিলো। কারো সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো সে মনে হয়। নিজেকেই সে প্রশ্ন করলো, কার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো আর কি জন্যই বা?
৪. ফলির চারপাশে ঘোরাঘুরি
যখন সে ফলির চারপাশে ঘোরাঘুরি করছিল তখন দেখল মিসেস লেগি বসে আছে এক জায়গায়। যেন লাফ দিয়ে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে যখনই পোয়ারোকে দেখতে পেল মিসেস লেগি। আপনি মঁসিয়ে পোয়ারো, চমকিতভাবে বলল সে, একেবারেই শুনতে পাইনি আপনার পায়ের শব্দ, ভীষণ চমকে দিয়েছেন আমাকে।
মনে হয়, আপনি কিছু খুঁজছেন ম্যাডাম? পোয়ারো বলল, হয়তো বা ভুল করে কিছু ফেলে গেছেন এখানে, না হয় আপনার কিছু হারিয়েছে। নিশ্চয়ই আপনি আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেননি, এটা আমার পক্ষে খুব দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।
মিসেস লেগি চেতনা ফিরে পেয়ে উত্তর দিল, কেউ কি এখানে এই সকালবেলায় কারো সঙ্গে দেখা করতে আসে?
পূর্ব নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় কখনো কখনো কেউ আসে বোধহয়। পোয়ারো উত্তর দিল।
সে আবার বলল, স্বামীরা খুব ঈর্ষাপরায়ণ হয়, সব মেয়েদেরই অভিযোগ থাকে তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে, বিশেষতঃ ইংরাজ স্বামীদের ক্ষেত্রে তো বটেই। তাহলে আপনিও কি সেই দলে? প্রশ্ন করলো মিসেস লেগি।
পোয়ারো বলল, আমি দুঃখিত ম্যাডাম, আমি কিন্তু স্বামী নই।
মিসেস শেলি লেগি উত্তর দিল, এর মধ্যে দুঃখিত হবার কিছুই নেই সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। আর আপনি যে বেশ সচেতন এবং অবিবাহিত থাকতেই পছন্দ করেন, তাও আমি নিশ্চিত রূপে জানি।
ম্যাডাম, একথা ঠিক নয়, সেটা খুবই ভয়ঙ্কর, জীবনে আমি যে ভুল করেছি, এখন আমি সেটা। বুঝতে পারছি, উত্তর দিল পোয়ারো।
শেলি লেগি বলল, আমার কিন্তু ধারণা, নির্বোধ লোকেরাই বিবাহ করে।
আচ্ছা ম্যাডাম, আপনার এখন সেই দিনগুলোর জন্য দুঃখ হয় না, সেই চেলসির দিনগুলিতে যখন আপনি ছবি আঁকতেন? প্রশ্ন করলো পোয়ারো।
আপনি দেখছি সমস্তই জানেন আমার সম্পর্কে, মঁসিয়ে পোয়ারো? বলল শেলি লেগি।
একজন লেখক আমি, এরকুল পোয়ারো বলল, আমি সবকিছু জানতে চাই মানুষের সম্বন্ধে।
ম্যাডাম, আপনার দুঃখ হয় না সেই ফেলে আসা দিনগুলোর জন্য, আবার বললো পোয়ারো। মিসেস লেগি একটা আসনে বসে বলল, ঠিক জানি না। পোয়ারো তার পাশের জায়গাটাতে বসলো। প্রথম যখন আমি এখানে ছুটি কাটাতে আসি, আমি ভেবেছিলাম সব কিছুই আগের মতো চলবে এখানে। অথচ কার্যতঃ তা হলো না। কেন জানি না, আলেক লেগি কিরকম যেন খেয়ালি; কি হয়েছে তার জানি না। ভীষণ দুর্বল ওর স্নায়ু। মাঝে মাঝে কেউ ওকে ফোন করে ভয়ঙ্কর কোনো খবর দেয়। কিন্তু ও কিছু জানায় না আর আমাকে পাগল করে তোলে এই ব্যাপারটা, হয়তো কোনো নারী ওর জীবনে এসেছে আমি সেটাই ভেবেছিলাম। না না, সেটাও নয়…। কথাগুলি ক্রমশ বলে গেল শেলি লেগি।