মন্তব্য করলো পোয়ারো, দারুণ কৌতূহলের ব্যাপার তো। উৎসাহভরে সে আরও বলল, আপনি একটু আগে বললেন, আপনার মনে হচ্ছে যে আগামীকাল নকল খুনের পরিবর্তে আসল খুন–এটা আপনি ভাবলেন কি করে তাহলে এটা কি প্রতারণা? একটু বিশদভাবে বলবেন, এর কি ব্যাখ্যা হতে পারে?
মিসেস অলিভার বললেন, ব্যাপারটা বোঝানো খুবই কঠিন–এককথায় বলতে হয় ঐ খুনের পরিকল্পনাটা আমার। আমারই পরিকল্পনা, এবং আমারই ভাবনা–অবশ্য সব কিছুই ঠিক হিসাব মতোই। লেখক-লেখিকারা একেবারে কোনো উপদেশ সহ্য করতে পারে না, তাদের সম্বন্ধে যদি আপনার সম্যক ধারণা থাকে তবে। যদি কেউ বলে ভলো হয়েছে, তবুও এটা করলে বা ঐটা করলে ভালো হয় না। অথবা যদি বলে এর পরিবর্তে বিকে শিকার করলে হতো, না হলে ডি-র পরিবর্তে ই খুনী হলে আমার ভালো হত। যাই হোক, তোমারাই তাহলে নিজে লেখনা কেন? এতই যদি জান, এটা আমার বলতে ইচ্ছা হয়।
পোয়ারো মাথা নেড়ে বলল, এটাই কি ঘটতে চলেছে?
না, তা ঠিক নয়–তবে এই ধরনের বিশ্রী প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সাধারণ এবং মামুলি পরিবর্তনটা আর বিশেষ লক্ষ্য না করেই, চিন্তা না করেই আমি মেনে নিয়েছি।
পোয়ারো বলল, তাই নাকি? অল্পস্বল্প পরিবর্তন সেটা কি খুবই আপত্তিজনক?
বলল মিসেস অলিভার–আমি ঠিক সেইভাবেই বোঝাতে চাইছি। আমি অনুমান করতে পারছি অবশ্যই এর খারাপ দিকটা। তার ফলে খুবই চিন্তিত আমি।
কে দিয়েছে এইসব পরিবর্তনের প্রস্তাব? জানতে চাইলো পোয়ারো।
মিসেস অলিভার জানাল-ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি। আমার পায়ের নিচের মাটি সজাগ থাকতে, যদি একজন কেউ হতো, তাহলে আমার চিন্তার কিছু ছিল না।
আপনার কোনো ধারণা আছে, সেই একজন কে হতে পারে? প্রশ্ন করলো পোয়ারো।
মাথা নেড়ে অলিভার জানাল, যে ব্যক্তিই হোক সে অতি চতুর এবং সাবধানী।
সীমিত হওয়া উচিত চরিত্রগুলি, পোয়ারো বলল, এবং সেই চরিত্রগুলির নোক কে কে?
স্যার জর্জ স্টাবস, এই জায়গার মালিক, বৈশিষ্ট্যহীন, বিত্তবান আর কাজের বাইরে সে ভীষণ বোকা। লেডি স্টাবস–হ্যাটি, বয়সে কুড়ি বছরের ছোট হবে স্বামীর থেকে, অপূর্ব সুন্দরী কিন্তু বাকশক্তিহীন–(মাছের মতো) তার বোধশক্তি সাধারণ মানুষের অর্ধেক এবিষয়ে আমি নিশ্চিত। গহনা আর পোশাক ছাড়া আর অন্য কোনো ভাবনা নেই, টাকার জন্য জর্জকে বিয়ে করেছে।
মাইকেল ওয়েম্যান, আরেকজন, বয়সে যুবক এবং সুপুরুষ, একজন আর্কিটেক্ট সে।
একটা টেনিস প্যাভিলিয়ন তৈরি করছে সে জর্জ-এর জন্য আর ফলি মেরামত করছে।
সেটা আবার কি ফলি–মুখোশধারী? জানতে চাইলো পোয়ারো।
না, এটা একটা স্থাপত্য শিল্প, জানালো অলিভার। সেক্রেটারি হাউসকিপার হলেন মিস ব্রেউইস।
সাহায্যকারী হিসাবে সেই সঙ্গে আরও কিছু লোক আছে। নদীর ধারে তরুণ দম্পতি আলেক লেগি আর তার স্ত্রী শেলি। আর আছেন মাস্টারটন-এর এজেন্ট ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন। মাস্টারটন এবং বৃদ্ধা মিসেস ফোলিয়াট তারাও অবশ্য থাকছেন, তারা লজে থাকেন। নাসের মালিক ছিলো তার স্বামীর প্রজারা। আজ তারা মৃত অথবা যুদ্ধে নিহত। ডেথ-ডিউটি না দিতে পেরে তাদের উত্তরাধিকারীরা জায়গা বিক্রি করে দেয়।
পোয়ারো একটা তালিকা তৈরি করল এইসব চরিত্রগুলির। কেবল তার নামগুলিই হাতে এল এই মুহূর্তে। এবার সে অগ্রসর হলো প্রধান বিষয়ে।
কার মাথা থেকে উদ্ভূত মার্ডার হান্ট। জানতে চাইলো পোয়ারো।
অলিভার উত্তর দিল, আমার মনে হয় মিসেস মাস্টারটন-এর আইডিয়া। তিনি স্থানীয় এম.পি.র স্ত্রী, তার সংগঠন খুব ভালো। তিনি একটা সামাজিক উৎসব করতে বলেন এখানে স্যার জর্জকে।
প্রশ্ন করলো পোয়ারো, আমি যে এখানে হাজির হবই আপনি ভাবলেন কি করে?
মিসেস অলিভার বলল, এটা খুব সহজ কথা। আপনাকে বিতরণ করতে হবে মার্ডার হান্ট-এর পুরস্কার। সবাই শিহরিত হয়ে উঠেছিল আপনার নাম প্রস্তাব করতেই।
সবাই কি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল, জানতে চাইলো পোয়ারো।
সবাই শিহরিত হয়েছিলো–একথাই তো বললাম, ভাবলেন মিসেস অলিভার-যুবকদের মধ্যে দু-একজন জিজ্ঞাসা করেছিল কে এই পোয়ারো? অবশ্য এখানে সেকথা বলার প্রয়োজন নেই।
সকলেই সম্মত ছিল? একজন কেউও আপনার প্রস্তাবে বিরোধিতা করেনি? পোয়ারো প্রশ্ন করল।
মাধা নেড়ে অলিভার না জানাল।
অবশ্যই সেটা দুঃখজনক–আমার উপস্থিতি কাম্য হওয়া উচিত নয় একজন বহু অপরাধীর কাছে। বললো এরকুল পোয়ারো।
বিষণ্ণ গলায় মিসেস অলিভার বলল–হয়তো আপনি ভাবছেন সমস্তটাই আমার কল্পনা এবং এটাই আমার ধারণা।
আশ্বাসপূর্ণ কণ্ঠে বললো পোয়ারো, শান্ত হন।
আমি যুগপৎ আগ্রহী এবং মুগ্ধ। এখন আমরা কোনখান থেকে শুরু করব একথাই ভাবছি।
তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিসেস অলিভার বলল, চলুন আমরা এখন বাড়িতে ফিরে যাই, চায়ের সময় হয়ে গেছে। এরপরে আপনি সেখানে সবার সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন।
পোয়ারো এখানে এসেছিল যে পথে ঠিক তার বিপরীত পথ ধরে তাকে নিয়ে এলেন মিসেস অলিভার।
বলল মিসেস অলিভার, এই পথে আমরা অতিক্রম করি বোট-হাউস। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে যেন ভেসে উঠল চোখের সামনে বোট-হাউস–সেটা যেন ভাসছে নদীর বুকে, দূর থেকে দেখে তাই মনে হলো। মিসেস অলিভার বলল, এখানেই নিয়ে যাওয়া হবে দেহটা। দেহটা অর্থাৎ মার্ডার হান্ট-এর জন্য।