চোখের জল ফেলে বলল মিস ব্রেউইস, তিনিও ঠিক এরকম, ধূর্ত বেড়াল-এর মতো।
আপনি বললেন, তিনিও ঠিক একইরকম অর্থাৎ লেডি স্টাবস সম্পর্কে। পোয়ারো বলল, আচ্ছা তিনি এখনও আছেন অথবা না?
না না, কখনই তিনি মৃত নন। মিস ব্রেউইস তীক্ষ্ণ স্বরে বলল–তিনি অন্য কোনো লোকের সঙ্গে চলে গেছেন, এটাই আমার ধারণা, অবশ্যই তিনি এটা করেছেন, তিনি ঠিক এই ধরনেরই মেয়ে।
পোয়ারো বলল, এটা কি সম্ভব, হয়তো বা সম্ভব হতে পারে।
এটা শুধু এভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়, বললো মিস ব্রেউইস। অবশ্য স্যার জর্জ সেটা ভাবেন না।
পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল, অপর কোনো পুরুষের সঙ্গে কি তার সংস্রব আছে?
সর্বনাশ, তিনি অত্যন্ত চতুর মহিলা, বলল মিস ব্রেউইস। যেমন মনে করুন, তিনি সবরকম চেষ্টা করেছেন মাইকেল ওয়েম্যানকে বোকা বানানোর জন্য। তিনি ক্যামেলিয়া গার্ডেনে যান বছরের এই সময়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে, তিনি যেন টেনিস প্যাভেলিয়নে আগ্রহী এমন ভাব দেখান।
এটা শুনেছি, স্যার জর্জ অনেক কিছু করতে পারেন তার স্ত্রীকে খুশী করার জন্য, বলল পোয়ারো। অবশ্যই না, কোনো খেলা এমন কি টেনিসেও তার কোনো আগ্রহ নেই। স্রেফ বোকা বানাবার জন্য, মাইকেল ওয়েম্যানকে তার কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এই রকম আর কি। হয়তো পুরোপুরি মাইকেলকে তিনি আয়ত্ব করতেন, যদি না তার ফ্রাই বানাবার জন্য অন্য কোনো মাছ মাইকেলের থাকত–বলল ব্রেউইস।
এমন ভাব দেখালো পোয়ারো, যেন উত্তরটা মিলে গেছে। বলল, আচ্ছা তাহলে মঁসিয়ে ওয়েম্যানের ফ্রাই বানাবার অন্য মাছ আছে?
মিসেস লেগি হল তার অন্য দোসর। স্যার জর্জের কাছে এই মহিলাই তার জন্য সুপারিশ করেছিল, বলল মিস ব্রেউইস। মিসেস লেগি বিয়ের পূর্বে থেকেই তাকে চিনত। জানেন, তিনি ছবিও আঁকতেন।
আন্দাজে পোয়ারো বলল, মনে হয় মেয়েটি আকর্ষণীয়া ও বুদ্ধিমতী তরুণী। সে আজ অনেক উন্নতি করতে পারত বিয়ে না করলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাও আছে আমার মনে হয়। বলল মিস ব্রেউইস। লেডি স্টাবস বেশ ভালোরকম সময় কাটিয়েছে তার সঙ্গে, যখন থেকে মাইকেল ওয়েম্যান এখানে এসেছে। আমার ধারণা মিসেস লেগির প্রেম ছিল মাইকেল-এর সঙ্গে, আলেক লেগির সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পূর্ব। অর্থাৎ আপনার কথামতো সে কিন্তু ওয়েম্যান নন যদি লেডি স্টাবস কারো সঙ্গে চলে গিয়ে থাকেন। কারণ এখনো এখানেই আছেন ওয়েম্যান, পোয়ারো বলল।
মিস ব্রেউইস বলল, আমি নিঃসন্দেহ যে, তিনি অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। এইরকমভাবে এর আগেও তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন।
পোয়ারো ভাবতে লাগল মিস ব্রেউইসের দিকে তাকিয়ে। এই মহিলার কথা বিশ্বাস করা যায় কিনা। এটাই তার আশঙ্কা। কারণ মিসেস ফোলিয়াট অনেক বেশি জানে মিস ব্রেউইস-এর থেকে।
ঘরে প্রবেশ করল এই সময় মিসেস মাস্টারটন, তাকে দেখে সুপ্রভাত জানাল মিস ব্রেউইস।
মিসেস মাস্টারটন পোয়ারোকে দেখতে পেয়ে বলল, মঁসিয়ে পোয়ারো, সুপ্রভাত, আচ্ছা। শুনলাম তদন্ত হবে নাকি বৃহস্পতিবার? মঁসিয়ে পোয়ারো আপনার সঙ্গে সামান্য কিছু কথা বলতে চাই।
পোয়ারো উঠে দাঁড়িয়ে তাকে সাদর অর্ভ্যথনা জানিয়ে বলল, ম্যাডাম, অবশ্যই–সেটা তো খুব ভালো কথা।
মিস ব্রেউইস ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, মিসেস মাস্টারটন তখন একটা চেয়ার নিয়ে বসল।
কোনো মোটিভ ব্যতিরেকেই, বেচারী মারলিন টাকারকে কোনো বিকৃত মস্তিষ্কের লোক খুন করে থাকবে। মন্তব্য জানালো মিসেস মাস্টারটন, আর কোনো ভূমিকা না রেখেই শুরু করে দিল সে, আমার মনে হয় না মঁসিয়ে পোয়ারো, লেডি স্টাবস-এর কোনো পরিণত বুদ্ধি আছে, যদি কোনো অপরিচিত লোকও বলেন তাকে, ম্যাডাম, চলুন একটু ঘুরে আসি ঐ অরণ্যে, তাহলেই সে বেরিয়ে পড়বে তার সঙ্গে।
পোয়ারো তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি এটাই মনে করেন তাহলে, মৃতদেহ এই এস্টেটেই আছে? ঠিক তাই, এটাই আমি মনে করি মঁসিয়ে পোয়ারো, জানালো মিসেস মাস্টারটন।
পোয়ারো বলল, এর সম্ভাবনা খুব বেশি, ম্যাডাম আপনি ঠিকই বলেছেন।
মিসেস মাস্টারটন বলল, অবশ্যই আমার ধারণা ঠিক। কিন্তু এটাই খুব অস্বস্তিকর লাগছে আমার কাছে যে, খুনী এখনও আমাদের মধ্যে মিশে আছে। বুঝতে পারলেন মঁসিয়ে পোয়ারো।
ম্যাডাম, এক্ষেত্রে আমার একটা বক্তব্য আছে, কি করেই বা বোট-হাউসে প্রবেশের অনুমতি পেলো একজন আগন্তুক? তার তো চাবির প্রয়োজন ছিল? বলল পোয়ারো।
ও এই কথা। সেটা তো খুবই সহজ, মেয়েটি নিশ্চয়ই বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো, বলল মিসেস মাস্টারটন। হয়তো ঘরের মধ্যে বসে থেকে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো মেয়েটি আর সেই সময় হয়তো সে হ্যাটি স্টাকসকে খুন করতে দেখে থাকবে, তার ফলে খুনী তাকে খুন করতে বাধ্য হয়েছে।
শান্তভাবে মাথা নাড়লো পোয়ারো। তর্ক করার প্রয়োজন নেই মিসেস মাস্টারটনের সঙ্গে। একটা উল্লেখযোগ্য দিকে নজর পড়েনি মিসেস মাস্টারটনের। যদি সত্যিই মারলিন টাকার বোট-হাউসের বাইরে খুন হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই খুনী মার্ডার হান্টের পরিকল্পনা জানত, তা না হলে, মেয়েটির মৃতদেহটি আবার বোট-হাউসে রেখে, তার গলায় দড়ির ফাস পরিয়ে দিয়েছিল কেন?
পোয়ারো সে কথা না বলে বলল, তার স্ত্রী এখনো বেঁচে আছেন, এটাই স্যার জর্জ বিশ্বাস করেন। তাদের স্ত্রী সত্যই মৃত, একথা সব স্বামীরাই ভেবে থাকে, তারা বিশ্বাস করতে চায় না। এছাড়াও তার স্ত্রীর প্রতি অত্যন্ত আকর্ষণ ছিলো স্যার জর্জের, জানালো মিসেস মাস্টারটন।