আচ্ছা আপনার টেন্টে যারা তরুণ, ভবিষ্যৎবাণী জানার জন্য ভিড় করেছিল–আপনার এই আধঘণ্টা অনুপস্থিতিতে তাদের কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো মিসেস লেগি? জানতে চাইলে ইনসপেক্টর ব্লান্ড।
হ্যাঁ, সেইজন্যই আমি একটা কার্ড ঝুলিয়ে রেখে গিয়েছিলাম টেন্টের বাইরে যে আমি আবার সাড়ে চারটেয় ফিরে আসছি। বললো মিসেস লেগি।
তার প্যাডে নোট করে রাখল ইনসপেক্টর ব্লান্ড, মিসেস লেগির বক্তব্যটা। তারপর মিসেস লেগির দিকে ফিরে তাকে ধন্যবাদ জানালো।
দরজা খুলে সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এরকুল পোয়ারোর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল মিসেস লেগির।
ইনসপেক্টর ঘরের শিলিং-এর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত সে নাকি টেন্টে ছিলো, একথা মিসেস লেগি বলেছে। অপরপক্ষে মিসেস ফোলিয়াট এর কাছে জানা গেছে, ফোলিয়াট বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারেট পর্যন্ত টি-টেন্টে সাহায্য করেছিলো, সেই আধঘণ্টা সময়ের মধ্যে সে মিসেস লেগিকে দেখতে পায়নি। এবার একটু থামল ইনসপেক্টর। আবার বলে যেতে লাগলো, বোট-হাউসে মারলিনের জন্য ফল আর কেক নিয়ে গিয়েছিল মিস ব্রেউইস, লেডি স্টাবস-এর নির্দেশ অনুসারে, একথা ব্রেউইস বলেছে। অথচ মিসেস ফোলিয়াটের বক্তব্য অনুযায়ী মিস ব্রেউইস স্বইচ্ছায় বোট-হাউসে গিয়েছিল ঐগুলি নিয়ে। আবার লেডি স্টাবস-এর পক্ষে একাজ করা অবিশ্বাস্য এবং স্বভাববিরুদ্ধে, মাইকেল ওয়েম্যান-এর বক্তব্য।
পোয়ারো একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করে বলল, কারো সঙ্গে কারো বক্তব্যের মিল নেই। অবশ্য এটাই সবসময় হয়ে থাকে। অতএব মিঃ ব্লান্ড, আপনি কি সিদ্ধান্ত নিলেন?
গভীর স্বরে ব্লান্ড বললো, আমার এরকম মনে হয় যে, মারলিন টাকার এমন কোনো দৃশ্য দেখে ফেলেছিলো যে, সে জানতই, তাকে খুন হতেই হবে।
পোয়ারো বলল, আমি আপনার ধারাণার বিপক্ষে যাচ্ছি না। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মারলিন কি দেখেছিলো?
ইনসপেক্টর বললো, হয়তো মারলিন কোনো খুনের দৃশ্য অথবা খুনীকে দেখেছিল?
পোয়ারো প্রশ্ন করল, খুন? কাকে করা হয়েছিল?
আপনার কি মনে হয় মিঃ পোয়ারো? লেডি স্টাবস জীবিত অথবা মৃত? জানতে চাইলো ব্লান্ড।
উত্তর দেবার পূর্বে কিছু একটা চিন্তা করলো পোয়ারো। তারপর বলল, লেডি স্টাবস মৃত বলেই আমার ধারণা। তাহলে শুনুন একথা আমি বলছি কেন? লেডি স্টাবস যে মৃত একথা মিসেস ফোলিয়াট মনে করেন। তিনি ভান করেই বলুন অথবা সত্যিই বলুন, মিসেস ফোলিয়াট বিশ্বাস করে লেডি স্টাবস মৃত। হয়তো তা আমরা জানি না, সেটা মিসেস ফোলিয়াট-এর পক্ষে জানা সহজ।
এরকুল পোয়ারো পরদিন সকালবেলায় ব্রেকফাস্ট-এর টেবিলের সামনে এসে বসলো। অলিভার তখনো অনুপস্থিত ছিলো। পূর্বদিনের দুর্ঘটনার ক্ষত এখনো সে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কেবলমাত্র এক কাপ কফি পান করে মাইকেল ওয়েম্যান বাইরে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলো। ব্রেকফাস্ট টেবিলে কেবলমাত্র স্যার জর্জ এবং তার বিশ্বাসী-সহকারিণী মিস ব্রেউইসকে হাজির থাকতে দেখা গেল।
সম্ভাষণ জানালো স্যার জর্জ, সুপ্রভাত সঁসিয়ে পোয়ারো, সমস্ত ব্যাপারটা যেন কেমন অবিশ্বাস্য। কোথায় এখন আছে হ্যাটি? বললো স্যার জর্জ।
মিসেস ব্রেউইস বলল, ইনস্টিটিউটে তদন্ত হবে আগামী বৃহস্পতিবার।
পোয়ারার দিকে তাকিয়ে উত্তেজিতভাবে স্যার জর্জ বললো, তদন্ত! তার মানে? কিসের তদন্ত হবে? আচ্ছা মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি কি ভাবছেন সে মৃত, তাই নাকি?
স্যার জর্জকে পোয়ারো বললো, ওসব চিন্তা মাথায় আনার এখন সময় নয়, অনেক দেরি আছে।
স্যার জর্জ বললো, ঠিকই আছে সে আপনি এরকম ভাবছেন তো, আমিও এই কথাই বলছি, বলে নিজের মনে মাথা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে গেল জর্জ।
পোয়ারো ভাবতে লাগল। টোস্টে মাখন লাগাবার সময়, যদি সন্দেহজনকভাবে স্ত্রী খুন হয়, তবে স্বভাবতই স্বামীকে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। আবার একইভাবে স্বামী খুন হলে স্ত্রীকে সন্দেহ করা হয়। অথচ এক্ষেত্রে মনেই হয় না যে তার স্ত্রীকে খুন করতে পারে স্যার জর্জ। যতটুকু সে জেনেছে এখনো পর্যন্ত, স্যার জর্জ সম্বন্ধে ভাবলো পোয়ারো–তার থেকে মনে হয় স্ত্রীকে জর্জ খুবই ভালোবাসে। খুবই মর্মাহত হয়েছে জর্জ তার স্ত্রীর নিরুদ্দেশ হওয়ার ব্যাপারে। খুনের যা ধরন এতে পোয়ারোর মনে হয় এখানে দুটি খুন হয়েছে।
অকস্মাৎ বলে উঠল মিস ব্রেউইস পোয়ারার চিন্তায় বাধা দিয়ে, ওদের বিয়েটা কি দুর্ভাগ্যজনক, একথা কি আপনার মনে হয় সঁসিয়ে পোয়ারো?
পোয়ারো উত্তর দিল, নিশ্চয়ই দুর্ভাগ্যজনক, বিশেষ খারাপ প্রভাব ছিলো স্যার জর্জ-এর উপর লেডি স্টাবস-এর। যেমন লেডি স্টাবস-এর প্রত্যাশা ছিল কেবল স্বামীর কাছ থেকে মূল্যবান উপহার পাওয়া–বেশি করে, অনেক বেশি করে।
ঠিকই, উনি যে উচ্চাকাঙ্খী স্যার জর্জকে দেখে তা মনে হয় না। বলল মিস ব্রেউইস। অতএব যদি তিনি মনে করতেন অনেক কিছু করতে পারতেন। মঁসিয়ে পোয়ারো, সত্যিই তিনি একজন উল্লেখযোগ্য মানুষ। অথচ কখনো তাকে বুঝতে পারেননি তার স্ত্রী। যে মেসিন থেকে তার কোট এবং দামী দামী অলঙ্কার বেরিয়ে আসেমিসেস স্টাব স্যার জর্জকে সেইরকম একটা মেসিন মনে করতেন। অথচ অন্য কোনো মেয়েকে যদি তিনি বিয়ে করতেন তবে অবশ্যই সেই মেয়ে তার যোগ্যতার প্রশংসা করতো।…আবেগে মিস ব্রেউইস-এর কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে গেলো। পোয়ারো মেয়েটির দিকে তাকালো, তার নিয়োগ কর্তার প্রেমে পড়ে গেছে মিস ব্রেউইস, তার আবেগ ভরা কথা, ভাব ভঙ্গীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বোঝা যাচ্ছে।