আমরা সেরকম সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না যে, কোনো স্থানীয় ছেলে যে এ কাজ করতে পারে। তীক্ষ্ণ স্বরে বলল ব্লান্ড। আচ্ছা ধরুন মিঃ ওয়েম্যান, আজ বিকাল চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত আপনি কোথায় ছিলেন এটাই আমি এখন জানতে চাই।
ইনসপেক্টর সঠিকভাবে আমি কিছুই বলতে পারব না কারণ, আমি তখন টেনিস কোর্টে প্যাভিলিয়ন করতে ব্যস্ত আবার কখনো বা এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি, কিভাবে উৎসব সফল করা যায়।
আর ঠিক তখনই আমি ভাবছিলাম, টেনিস নেটের ফটোগ্রাফটা কতক্ষণে কেউ সনাক্ত করতে পারবে কারণ, টেনিস নেটের একটা অংশ মার্ডার হান্টের প্রথম ক্ল। জানালো ওয়েম্যান।
আচ্ছা সেটা কি কেউ সনাক্ত করতে পেরেছিল ইনসপেক্টর জানতে চাইলেন?
অবশ্যই কেউ একজন করেছে বলেই আমার ধারণা জানালো মাইকেল। সেটা তখন আমি লক্ষ্য করিনি। তখন আমি প্যাভিলিয়ানের ব্যাপারে নতুন চিন্তায় মশগুল ছিলাম।
ব্লন্ড প্রশ্ন করলো আচ্ছা তারপর?
আমি এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিলাম, তারপর একবার ফেরিঘাট-এ যাই তখন দেখা হয় বৃদ্ধ মারডেলের সঙ্গে এবং কিছুক্ষণ কথাও বলেছিলাম। জানালো মাইকেল ওয়েম্যান। ইনসপেক্টর ব্লান্ড বললো তাই নাকি, তাহলে সেই বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলেই পাওয়া যাবে আপনার বক্তব্যের সমর্থন।
নিশ্চয়ই, মারডেল আমার কথার সমর্থন করবে অবশ্য বিকেল পাঁচটার পর সময়টা। আপনি তো বিকেল সোয়া চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত আগ্রহী, খুবই অপ্রীতিকর ব্যাপার, ইনসপেক্টর তাই নয় কি?
মিঃ ওয়েম্যান, আমরা আশা করি সময়টা আরো সংক্ষিপ্ত করে নিয়ে আসতে পারে। জানালো ব্লান্ড।
মাইকেল বলল, খুবই নিশ্চিতভাবে বলছেন? আচ্ছা কে খুন করতে পারে এই মেয়েটিকে? জানতে চাইলো ওয়েম্যান।
আচ্ছা মিঃ ওয়েম্যান, এ বিষয়ে আপনার কোন ধারণা নেই?
না, বিশেষ সিদ্ধান্ত কিছু নেই, তবে অনুমানের ভিত্তিতে বলা যায়, হয়তো মেয়েটি ভেবেছিল, যদি সত্যি সত্যি মৃতদেহটা সেখানে পাওয়া যায়, তবে ব্যাপারটা অনেক বেশি সফল হবে।
ইনসপেক্টর বলল, আর একটা প্রশ্ন করব ওয়েম্যান। আপনি শেষবারের মতো কখন লেডি স্টাবসকে দেখেছিলেন?
হ্যাঁ, তা হবে সাড়ে তিনটে অথবা পৌনে চারটের সময়। জানালো ওয়েম্যান।
তার সম্পর্কে আপনি যদি কিছু বলেন?
জানতে চাইলো ব্লান্ড।
রুটির কোন দিকে মাখন লাগাতে হয় তা তিনি বেশ ভালোভাবেই জানেন। এটাই মাত্র আমার বক্তব্য বলল ওয়েম্যান।
একথা কি ঠিক মানসিকভাবে তার বেশি গভীরতা ছিল না? বলল ব্লান্ড।
আপনি মানসিকভাবে বলতে কি বোঝাতে চাইছেন, সেটা তার উপর নির্ভর করছে? মাইকেল বলল, তার স্নায়ুকোষগুলি অত্যাধিক সক্রিয় ছিলো যেটা অন্য কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় না, আমি তো সেটাই বলব। আমার সঙ্গে আপনার প্রয়োজন কি শেষ হয়েছে?
ইনসপেক্টর কিছুক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণ করল, মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো তারপর মাইকেল ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
এবার হপকিন্স-এর উদ্দেশ্যে ব্লান্ড প্রশ্ন করলো, আচ্ছা হপকিন্স লেডি স্টাবস আর মাইকেল ওয়েম্যানের সঙ্গে কিরকম সম্পর্ক বলে তোমার ধারণা?
লেডি স্টাবস মাইকেলের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন হয়তো এটাই আমার মনের হয়। আবার বলল ব্লান্ড, স্যার জর্জ ও তার স্ত্রীর সম্বন্ধে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ধারণা কি বলে?
তিনি সহজসিধা মানসিক ভারসাম্যহীন লোক।
হতে পারেন, জনশ্রুতি আছে, হপকিন্স বংল।
তুমি কি চিন্তা করছ আমি জানি, এটা কি তোমারও বিচক্ষণ মতামত? বললেন ব্লান্ড।
অবশ্য আমি সেটাই বলবো, জানালো হপকিন্স।
স্যার জর্জ কি পছন্দসই জানতে চাইলেন ব্লান্ড। ভালোমন্দ মিশিয়ে তিনি বেশ পছন্দ করার মতো মানুষ জানালো কনস্টেবল। তিনি ভালো স্পোর্টসম্যান, ক্ষেতখামার সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা আছে। তাকে অনেক সাহায্য করেন বৃদ্ধ লেডি।
এই বৃদ্ধ লেডি মহিলাটি কে? জানতে চাইলো ব্লান্ড।
হপকিন্স বললো মিসেস ফোলিয়াট। শুনেছি একসময় ফোলিয়াটরা এই জায়গার মালিক ছিল, এমন কি লেডি স্টাবস বিয়ের আগেই তাকে চিনতো, স্যার জর্জকে এই জায়গাটা কিনতে মিসেস ফোলিয়াটই জোর করেছিলেন। ব্লান্ড বললো, আমি মিসেস ফোলিয়াট-এর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
ও সুন্দর বিচক্ষণ মহিলা! যদি এখানে কিছু ঘটে যায়, তা তিনি পূর্বেই জানতে পারেন। জানালো হপকিন্স।
ইনসপেক্টর জানালো, আমাকে তার সঙ্গে কথা বলতেই হবে। এখন তিনি কোথায় কে জানে-ওর সম্বন্ধে আমার অবাক লাগে।
মিসেস ফোলিয়াট কথা বলছিল পোয়ারোর সঙ্গে সেই সময় বিরাট ড্রয়িংরুমে। ফোলিয়াট আক্ষেপ জানাচ্ছিল, বেচারি মারলিন এত অল্প বয়েস, অর্থাৎসবে জীবন শুধু-পোয়ারো তাকে নিরীক্ষণ করছিল কৌতূহলের সঙ্গে। মনে হচ্ছে ভদ্রমহিলার বয়স যেন দশবছর বেড়ে গেছে, বিকালে সেই মর্মন্তুদ ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পর।
সেই পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর, এই কথাটা আপনি আমাকে গতকালই বলেছিলেন ম্যাডাম। মিসেস ফোলিয়েট চমকেউঠে বলল, তাই বলেছিলাম নাকি? অবশ্য খুবই নির্মম সত্য কথাটা। অবশ্য এরকম ঘটনা ঘটতে পারে আমি ভাবতে পারিনি।
আপনার তাহলে মনে হয়েছিল, কিছু একটা ঘটতে পারে বলে? এরকম আভাস লেডি স্টাবসও আজ সকালে দিয়েছিলেন, বললো পোয়ারো।
আমাকে আর ওর কথা বলবেন না, হ্যাঁ হ্যাটি বলেছিল, আমি ওর কথা আর ভাবতেই পারি না। বলল মিসেস ফোলিয়াট। আবার জানতে চাইলো সে–আচ্ছা কি যেন বলছিল ও, খারাপ-এর ব্যাপারে?