ডি সৌউসা ধন্যবাদ জানিয়ে ব্লান্ডকে জানাল, মাত্র দুদিন হেলমাউথে থাকবো। তারপর থাকবো আমার ইয়ট এস্পেরান্স-এ। সেখানে আমাকে পাবেন, যদি আপনার আরও কিছু জিজ্ঞাসা থাকে।
ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সৌউসা কনস্টেবল হপকিন্স দরজা খুলে দেবার পর। ব্লান্ডকে খবর দিল সার্জেন্ট ফ্রাঙ্ক কোটেল, আমরা স্যার অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। বাড়ির বাইরে গেটে যেতে দেখা যায়নি লেডি স্টাবসকে। প্রবেশ ফি নিচ্ছিল দ্বিতীয় মালি তিনি কোথাও চলে যাননি। সে শপথ করে বলতে পারে।
আচ্ছা আরও অন্যান্য ফটক হয়তো আছে, প্রধান ফাটক ছাড়া, জানতে চাইলো ব্লান্ড।
হা স্যার, তা অবশ্য আছে, একটা রাস্তা আছে বটে ফেরির দিকে যাবার–তবে প্রায় একশো বছর বয়স্ক বৃদ্ধ মারডেল জানিয়েছে এবং তার কথা বিশ্বাসযোগ্য যে-লেডি স্টাবকে সে এই পথ দিয়ে চলে যেতে দেখেনি–জানালো ফ্রাঙ্ক কোটেল। সেই লোকটি তাকে আরও সংবাদ দিয়েছে যে, তার লঞ্চে একজন বিদেশী ভদ্রলোক আসে এবং তার কাছে ন্যাসে হাউসের খোঁজ নেয়। এই লোকটিকে বৃদ্ধটি পথ দেখিয়ে দেয়, কিন্তু এই পথে লেডি স্টাবসকে আসতে দেখেনি সে জোর দিয়ে বলেছে। তবে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঢাকা ডাইন পার্কের ভেতর দিয়ে একটা পথ আছে। তাহলে এই অনুমান থেকে ধরে নেওয়া যেতে পারে, তিনি এখনো এখানেই আছেন? জিজ্ঞাসা করলো ফ্রাঙ্ক কোটেল।
ব্লান্ড বলল, সেটা অবশ্য হতে পারে। তবে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা যদি ইয়ুথ হোস্টেল থেকে বেড়া ডিঙিয়ে এখানে আসতে পারে, অবশ্য এটা স্যার জর্জের অভিযোগ–তাহলে অনায়াসে বেড়া ডিঙিয়ে ওখানে চলে যেতে পারে লেডি স্টাবসও।
কোটেল বলল, তবুও স্যার মিস ব্রেউইস বলল স্যুটকেশ নেননি, এমনকি উৎসবের পোশাক পরেই গেছেন। ইনসপেক্টর ব্লান্ড চিন্তিত মুখে তাকাল, হয়তো কোনো অপ্রীতিকর সম্ভাবনা তার মনে উদয় হয়েছে। তার নামটা কি যেন, যাইহোক সেক্রেটারিকে আবার ডেকে পাঠাও ব্রুস, তীক্ষ্ণ স্বরে আদেশ দিল ব্লান্ড।
বেশ একটু অগোছালো দেখাচ্ছিল মিস ব্রেউইসকে। আপনি কি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন, ইনসপেক্টর? বলল ব্রেউইস। এখন উদভ্রান্ত অবস্থা স্যার জর্জের, লেডি স্টাবস যে সত্যি সত্যি উধাও একথা তিনি এখন বুঝে গেছেন। কিছু একটা ঘটেছে এটা তার মাথায় এখন ঢুকেছে। যদিও অবাস্তব।
মিস ব্রেউইস, হয়তো বাস্তবও হতে পারে, ভুলে যাবেন না একথা, যতই হোক আজ বিকালে একজন খুন হয়েছে। জানালো ইনসপেক্টর।
আপনি লেডি স্টাবস সম্বন্ধে নিশ্চয়ই একথা ভাবছেন না–অবশ্য নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা তার আছে। জানালো ব্রেউইস।
অবিশ্বাসের সুরে মিঃ ব্লান্ড প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা তাই নাকি! সব ব্যাপারেই তিনি অসহায় একথা তো আমি শুনেছি।
নির্বোধ সব। বলল ব্রেউইস। আমি কিন্তু সেভাবে মনে করি না। ওঁর স্বামী ওঁকে যতটা অসহায় বলে ভাবেন।
ব্লান্ড তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, আচ্ছা মিস ব্রেউইস, আপনি হয়তো তাকে বিশেষ পছন্দ করেন না। তাই নয় কি?
গলায় শ্লেষ মাখিয়ে বলল মিস ব্রেউইস, আমি তাকে পছন্দ করি বা না করি;এটা নিয়ে আদৌ মাথা ঘামাই না।
স্যার জর্জ দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করল ঠিক সেই মুহূর্তে। তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠল জর্জ, মিঃ ব্লান্ড বলতে পারেন আমার স্ত্রী কোথায়? খুঁজে বের করতেই হবে হ্যাটিকে। শুধুমাত্র আপনারা কাগজ-কলম নিয়ে লিখেই চলেছেন মাত্র, এছাড়া আর কি করছেন আপনারা এ পর্যন্ত বলুন, কিছুই করেননি! উৎসবের সব আনন্দ নিথর হয়ে আছে, আমার তো এটাই মনে হচ্ছে কোনো এক খুনী হাফ-ক্রাউন টিকিট কেটে একটার পর একটা খুন করে যাচ্ছে–এখন সেইরকমই অবস্থা।
স্যার জর্জ শুনুন, আমরা এখনই ঘটনাকে এতবেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাইছি না, মিঃ ব্লান্ড বলল–কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই আমি আপনাকে মিঃ জর্জ, আপনার স্ত্রী কি তিন সপ্তাহ পূর্বে ডি সৌউসার কাছ থেকে কোনো চিঠি পেয়েছিলেন? সেই চিঠিতে সৌউসা এদেশে আসবে বলে জানিয়েছিল, আমাদের কাছে খবর আছে।
স্যার জর্জ এর উত্তরে বিস্মিত স্বরে বলে উঠলো, না, এরকম চিঠি সে কখনোই পায়নি। হ্যাটি ওর খুড়তুতো ভাই-এর কাছ থেকে কেবলমাত্র আজ সকালেই একটা চিঠি পায়।
ব্লান্ড বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি শুনেছিলাম মিসেস স্টাবস খুব মুষড়ে পড়েছিলেন। সেই চিঠিটা পেয়ে।
স্যার জর্জ এবারেও বিস্মিত নয়নে তাকালো, আমার তো তখন তাকে দেখে কিছু মনে হয়নি, স্যার জর্জ জানালো। কেবলমাত্র ও বলেছিল, ডি সৌউসা লোকটা সুবিধার নয়। তার এখানে আসা ঠিক নয়, কারণ সে নাকি অনেক কুকর্ম করেছিল।
ব্লান্ড জানতে চাইলো, কখন সে এরকম খারাপ কাজ করেছিল।
জর্জ জানালো, সেটা ওর ছেলেবেলাকার ঘটনা, অনেকদিন আগের, কিন্তু হ্যাটি এমন ছেলেমানুষ যে, সময় সময় ভয় পেয়ে আঁতকে ওঠে, অবশ্য হয়তো এটা তার অকারণ ভীতি।
ভয়ের কথাটা ঠিকমতো ব্যাখ্যা করে বলতে পারে না, যদিও হ্যাটি ওর ভাই-এর কথা বলে, এটাও একটা মজার ব্যাপার।
তাহলে আপনি বলছেন যে স্যার জর্জ, লেডি স্টাবস আপনাকে সঠিকভাবে কিছু বলেননি।
সেটা আমি বলবো কেন, ও কি বলেছিল। স্যার জর্জ বললো।
আচ্ছা, অতএব মিসেস স্টাবস কিছু বলেছিলেন আপনাকে? তীক্ষ্ণ স্বরে ব্লান্ড এবার বলে উঠলো, তদন্তের কাজে বিশেষ সাহায্য হত স্যার, যদি আপনি পরিষ্কারভাবে জানাতেন। আর সে কথা ভেবে আপনি যদি।