আপনি এখানে একজন আগন্তুক, মিঃ ডি সৌউসা-বলল ইনসপেক্টর ব্লান্ড।
আর আগন্তুক বলেই তাকে সন্দেহজনক বলে ধরে নেওয়া হবে, তাই তো? ডি সৌউসা বাধা দিয়ে বলে উঠল।
ইনসপেক্টর ব্লান্ড বলল না, সেটা নয়–আপনি আপনার ইয়টটা হেলমাউথে রেখে, এখানে চলে আসেন লঞ্চে–আর বোট-হাউসের সামনে দিয়ে আপনি এখানে এসেছিলেন, লঞ্চ থেকে ন্যাসে হাউসে আসেন।
আচ্ছা সম্মতি জানালো ইটিয়েন ডি সৌউসা।
মাথা নেড়ে বোট-হাউসে কি কাউকে নজরে পড়েছিল আপনার? তার মানে সৌউসা জানতে চাইলো, কাউকে দেখতেই হবে নাকি? না আমি দেখিনি।
দেখার সম্ভাবনা থাকতেও তো পারে, আচ্ছা শুনুন মিঃ ডি সৌউসা, নিহত মেয়েটি আজ বিকালে ঐ বোট-হাউসে ছিল। সে খুন হয়েছে সেখানেই, দুটো সময় প্রায়ই একই। আপনার লঞ্চ থেকে নামার সময় আর মেয়েটির খুন হওয়ার সময়।
সেইজন্য বলছিলাম আর কি
তাহলে আপনি বলতে চান এই খুনে আমি একজন সাক্ষী থাকতে পারি? প্রশ্ন করল ডি সৌউসা।
ব্লান্ড বলল, না, সেটা আমি বলছি না, হয়তো মেয়েটিকে আপনি দেখে থাকতে পারেন ঐ পথ দিয়ে আসার সময়, কিংবা ব্যালকনিতে অথবা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়তো দেখতে পারেন। এটা বোঝা যাবে যে, মেয়েটা আপনার আসার সময় জীবিত ছিলো।
ডি সৌউসা একটু বিদ্রূপ-এর সুরে বলল, আচ্ছা তাই বুঝি? আচ্ছা কেবল আমাকেই প্রশ্ন করছেন কেন বিশেষভাবে? আরও কত নৌকা সেখানে আরও কত লঞ্চ কত যাত্রী আসে এখানে, তারা এখানে নামে। সকলকে কেন জিজ্ঞাসা করছেন না?
অবশ্যই তাদের জিজ্ঞাসা করবো, ভয়ের কিছু নেই। তবে আপনি এখন বলুন বোট-হাউসে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলেন কিনা? ব্লান্ড প্রশ্ন করলো।
না, সেরকম কিছু দেখিনি, খুব একটা মন দিয়ে দেখিনি বটে এবং খুব কাছ দিয়ে আসিনি। জানালার সামনে কে যেন বাইরের দিকে তাকিয়েছিল, দূর থেকে দেখেছিলাম। আর আপনার কথা অনুযায়ী, মানুষটিকে আমার দেখাও সম্ভব নয়। ডি সৌউসা জানালো, আমি দুঃখিত যেহেতু আপনাকে সাহায্য করতে পারলাম না এই ব্যাপারে।
আচ্ছা ঠিক আছে, বলল ইন্সপেক্টর বন্ধুর মতো ভঙ্গিতে, লেডি স্টাবস আপনার খুড়তুতো বোন আমি জেনেছি।
সে আমার দূর-সম্পৰ্কর খুড়তুতো বোন। একথা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের দ্বীপপুঞ্জে নিজেদের মধ্যেই বিয়ে হয়। তাহলে সবাই আমরা খুড়তুতো জ্যাঠতুতো ভাইবোন সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে, জানালো ডি সৌউসা, সেইরকম হ্যাটিও আমার একজন বোন, তাকে প্রায় আমি চোদ্দো পনেরো বছর দেখিনি।
তাহলে আপনি তাকে অবাক করে দিতে চেয়েছিলেন? বলল ব্লান্ড।
তা নয়, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আমি তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম যে, খুব শীঘ্রই তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তবে পরে তাকে জানাবো, ঠিক কোন দিন যাবো, বলল সৌউসা।
তাহলে আপনি তাকে আবার একটা চিঠি লিখেছিলেন? জিজ্ঞাসা করলো ব্লান্ড।
হ্যাঁ, আমি তাই করেছিলাম, বলল সৌউসা। ইনসপেক্টর ব্লান্ড, তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবছিলো, ইটিয়েনের ব্রেকফাস্ট টেবিলে চিঠির বক্তব্যের সঙ্গে তার জবানবন্দীর অনেক পার্থক্য। এছাড়াও লেডি স্টাবস তার চিঠি পেয়ে ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলেন।
ইনসপেক্টর ব্লান্ড জিজ্ঞাসা করল, প্রথম চিঠির জবাব পেয়েছিলেন লেডি স্টাবস-এর কাছ থেকে?
ঠিক মনে পড়ছে না, তবে মনে হয় সে উত্তর দেয়েনি, সৌউসা একটু ইতস্ততঃভাবে জানাল। তবে মনে রাখা দরকার ছিলো। অবশ্য তখন আমি বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। অবশ্য আমার বোন খুব একটা ভালো চিঠি লিখতে পারতো না। এতদিনে সে হয়তো অনেক বড় হয়ে গেছে এবং দেখতেও বেশ সুন্দর হয়েছে।
ব্লন্ড জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ডি সৌউসা, আপনার বোন আপনাকে এড়িয়ে যেতে পারে এরকম কোনো কারণ আপনি জানেন–
সৌউসা জবাব দিল, হ্যাটি আনন্দ উৎসব ছেড়ে এখান থেকে চলে গেছে, আমাকে এড়ানোর জন্য এটাই আপনার ধারণা? কি অসম্ভব ধারণা আপনার?
ব্লান্ড উত্তর দিল, আমি যতদূর জানি এটার অবশ্য কোনো কারণ আছে এবং আপনিও তা জানেন। আমি যদি বলি আপনার ভয়ে সে চলে গেছে? সুতরাং আমি বলছি মিঃ সৌউসা, আপনি অনেক খবর দিতে পারেন এই বোনের ব্যাপারে। তার স্বভাব, চরিত্র এবং তার মানসিক প্রতিক্রিয়া।
অবাক হয়ে সৌউসা উত্তর দিল, বোট-হাউসে খুনের সঙ্গে হ্যাটির চরিত্রের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা জানি না। আর মেয়েটা সত্যিই খুন হয়েছে বলে তদন্ত করার ভার আপনার ওপর পড়ে গেছে–এটা আমি জানি।
ইনসপেক্টর ব্লান্ড উত্তর দিল, হয়তো কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে এই ব্যাপারে।
ডি সৌউসা কিছুক্ষণ ইনসপেক্টরকে নিরীক্ষণ করার পর বলল, আমি আমার বোনের সম্বন্ধে আদৌ কিছু জানি না। যদিও মানসিক দিক থেকে সে দুর্বল প্রকৃতির তবে তার মধ্যে খুনের কোনো ঝোঁক ছিল না বলেই যতদূর আমি জানি। একটু থামলো সে, তারপর বলল, এরপর আর আপনার কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না, এটাই আমার ধারণা। তবে এটাই আমি চাই আপনি খুনীকে সনাক্ত করার কাজে সফল হন।
ব্লান্ড প্রশ্ন করলো, আপনি দু-একদিনের মধ্যে হেলমাউথ ছেড়ে যাচ্ছেন না, এটাই আশা করছি।
আপনি বেশ নম্রভাবে কথা বলতে জানেন ইনসপেক্টর, এটা আমি লক্ষ্য করছি, জানালো মিঃ সৌউসা–অতএব আমি কি ধরে নিতে পারি এটা আপনার হুকুম?
স্রেফ অনুরোধ স্যার। জানালো ব্লান্ড।