কিন্তু কেন? জানতে চাইলেন ব্লান্ড।
পোয়ারো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই, তবে তিনি এটুকুই বলেছেন যে লোকটি খুব খারাপ, তার প্রকৃতিটা একটু অস্বাভাবিক।
আপনি কি সত্যি বলে মনে করেন লেডি স্টাবস-এর ভয়টা? প্রশ্ন রাখলো ব্লান্ড।
এটা যদি সত্যি না হয়, তবে বলতে হয় লেডি স্টাকস একজন অত্যন্ত চতুর মহিলা। পোয়ারো বলল শুকনো গলায়।
ব্লান্ড জানালো এই কেসের সম্বন্ধে কিছু ধারণা আমার মনে শুরু হচ্ছে, সে আবার বলল অস্থিরভাবে পায়চারী করতে করতে, ঐ অভিশপ্ত মহিলার ভুলের জন্যই এই অঘটন; এটা আমার মনে হয়।
আপনি কি মিসেস অলিভারের কথা বলছেন? জানতে চাইলো পোয়ারো।
ঠিক তাই, আমার মাথায় উনি একগাদা রোমাঞ্চকর ঘটনা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন।
আর আপনি সেগুলোকে সত্যি ভাবছেন, বললো পোয়ারো।
না, সবগুলো নয়, তবে দু-একটা সত্য ঘটনার মতো শোনায়। অবশ্য সব কিছু নির্ভর করছে–সে থেমে গেলো–পুলিশ কনস্টেবল হপকিন্সকে আসতে দেখে।
কনস্টেবল বলল, স্যার কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না লেডি স্টাবসকে। কোথাও নেই তিনি।
ব্লান্ড বিরক্ত হয়ে বলল, সেটা জানতাম আমি। তাকে খুঁজে বার করার জন্য আমি তোমাকে বলেছিলাম। তুমি সেখানে খবর নাও যেখানে উৎসব-এর প্রবেশ ফি-র টিকিট বিক্রি হচ্ছে, যে লেডি স্টাবস ওখান থেকে বেরিয়ে গেছেন কিনা? আর জেনে এসে তিনি পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেছেন অথবা গাড়ি নিয়ে।
ঠিক আছে স্যার, বললো হপকিন্স।
আর কি ভাবতে পারি বলুন এছাড়া, কোথাও যখন তাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে মনে হচ্ছে তিনি হয়তো এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।
তবে আমি জানতে চাই কেন? এবার বলুন তো এই ডি সৌউসা লোকটি সম্বন্ধে কি জানেন?
পোয়ারো লোকটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিবরণ জানালো এবং বলল, মনে হয় উৎসবে মেতে আছে সে এখনো, আপনি তার সঙ্গে দেখা করতে চান, স্যার জর্জকে জানাবো?
এখন নয়, কাজগুলো আগে সেরে নিই, শেষবার কখন আপনি দেখেছিলেন লেডি স্টাবসকে?
ব্লান্ড জানতে চাইলো।
পোয়ারো মনে করার চেষ্টা করলেন। খুবই মুশকিল সঠিক সময় মনে করা, তার উত্তরে সন্দেহ প্রকাশ পেলো, হয়তো বিকেল চারটের সামান্য কিছু পূর্বে। বাড়ির কাছেই তাকে দেখেছিলাম অনেক লোকের সঙ্গে। তিনি ছিলেন কি এখানে আসার সময় যার নাম ডি সৌউসা।
তবে তিনি ছিলেন না বলেই আমার মনে হয়, অন্তত তাকে আমি দেখিনি, স্যার জর্জ তাকে জানায় তার স্ত্রী হয়তো অন্য কোথাও আছেন। বললো পোয়ারো।
ইনসপেক্টর ব্লন্ড বললো, যাতে লোকটার সঙ্গে তার দেখা না হয় এজন্য লেডি স্টাকস হয়তো অন্য কোথাও গিয়েছেন।
পোয়ারো সম্মতি জানিয়ে বলল, সেটাই বোধহয়। একথা চিন্তা করুন, যদি তাকে খুঁজে না পাওয়া যায়?
ব্লান্ড দৃঢ়তার সঙ্গে বলে উঠল, তা হতে পারে না। কারণ, একথা কেন আপনার মনে হলো?
কারণটা কেউ জানে না, তবে সবাই জানে তিনি অন্তর্হিত হয়েছেন, বললো পোয়ারো।
একটা অশুভ ইঙ্গিত রয়েছে আপনার কথায় মিঃ পোয়ারো, ব্লান্ড বললো।
হা, হয়তো অশুভ হতে পারে। স্বীকার করল পোয়ারো। ইনসপেক্টর ব্লান্ড বেশ জোরের সঙ্গে বললো–এখানে আমরা এসেছি মারলিন টাকারের খুনের সন্ধান করতে।
তাহলে যে কোনো কারণেই হোক, আপনার এই ডি সৌউসা লোকটির প্রতি এত কৌতূহল কেন? আপনি কি মনে করেন মারলিনকে সে খুন করতে পারে?
হঠাৎ একটা অস্বাভাবিক কথা বলে ফেলল ইনসপেক্টর ব্লান্ড। সেই ভদ্রমহিলা?
একটা সূক্ষ্ম হাসি খেলা করে গেল পোয়ারোর মুখে–তাহলে কি আপনি মিসেস অলিভারকে বোঝাতে চাইছেন?
মঁসিয়ে পোয়ারো, সত্যি কথা চিন্তা করে দেখুন–কোনো অর্থ নেই মারলিন টাকারকে হত্যা করার। হত্যা করা হয়েছে একটি অপরিণত জড়বুদ্ধি সম্পন্ন কিশোরী মেয়েকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে, মেয়েটি অপরিচিত বটে, সম্ভাব্য মোটিভের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি অকুস্থল থেকে। বলল ব্লান্ড।
আর আপনাকে একটা মোটিভের কথা বলেছে মিসেস অলিভার তাই না? প্রশ্ন করলো পোয়ারো।
তিনি শুধুমাত্র একটা কথাই বলেননি, কম করে ডজনখানেক কথা বলেছেন, কিছু কথা তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন : হয়তো মারলিন জেনে থাকবে গোপন প্রেমের কথা, অথবা হয়তো সে কাউকে হত্যা করার দৃশ্যটা দেখে থাকবে, অথবা সে জানত এ বাড়ির কোথাও ধনরত্ন লুকানো আছে : নয়তো সে ডি সৌউসা লোকটাকে মধ্যাহ্নভোজের সময় নদীর বক্ষে কোনো অপরাধমূলক কাজ করতে দেখে থাকবে, আর সে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেছে বোট-হাউসের জানালা দিয়ে, সেইজন্যই হয়তো মেয়েটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে আমি জানি না, একডজন মোটিভের মধ্যে কোনটা সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। ভদ্রমহিলা তার খুড়তুতো ভাহকে ভয় করত, একথাও আমি শুনেছি। হয়তো ডি সৌউসা এমন কিছু গোপন কথা জানতে যেটা প্রকাশ হয়ে পড়লে লেডি স্টাবস-এর সমূহ ক্ষতি হতে পারে। সেই গোপন কথাটা তার, স্বামীর কানে প্রবেশ করুক এটা লেডি স্টাবস চাননি। অথবা সেই লোকটির নিজস্ব কোনো ভীতি ছিলো এমনও হতে পারে।
কোনোরকম দ্বিধা না করেই পোয়ারো বলে উঠল, অবশ্যই লোকটা নিজে ভীত ছিল।
হুম, ইনসপেক্টর ব্লান্ড বললো, তাহলে আমি এই তরুণ-যুবকটির সঙ্গে কথা বলতে চাই, যদি এখনো সে এখানে থাকে।
.
ইটিয়েন ডি সৌউসা মৃদু প্রতিবাদ করে উঠলো, এখানে কেন আপনারা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছেন। আমি এই খুনের সঙ্গে জড়িত নই কোনোমতেই। আপনারা আমার জবানবন্দী কেন চান, অবাক হয়ে আমি এটাই ভাবছি।