না কোনো সময়েই সে আসেনি, প্রাতঃরাশ কিংবা মধ্যাহ্নভোজে, বলল মিসেস অলিভার–সেটা একটা ইডিয়ট। আমি ঠিক সেরকম বলতে চাইনি। আসলে লোকটা তার প্রাতঃরাশের টেবিলে আসেনি, তার একটা চিঠি এসেছিল।
ব্লান্ড জিজ্ঞেস করল, তাহলে সেই চিঠিই বা কার, আর লেখা হয়েছিল কাকে?
উত্তর দিল মিসেস অলিভার, সেই চিঠি লেডি স্টাবসকে লেখা হয়েছিল। সেই চিঠিটা ছিলো তার এক খুড়তুতো ভাই-এর। আর লেডি স্টাবস খুব ভয় পেয়েছিলো সে এখানে আসছে শুনে।
সে ভয় পেয়েছিল, কারণটা কি?
তা জানি না, তবে সকলেই একটা ভয়ের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলো তার চোখে মুখে।
সে চায়নি যে, লোকটা এখানে আসুক। সেজন্য আমার মনে হচ্ছে স্টাবস কোথাও লুকিয়ে আছে তার ভয়ে।
ইনসপেক্টর প্রশ্ন করল, লুকিয়ে আছে?
মিসেস অলিভার জানালো, হ্যাঁ, তাকে এখনো পর্যন্ত কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বোধহয় সে কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে, যাতে তার লোকটার সঙ্গে দেখা না হয়।
ইনসপেক্টর জানতে চাইলেন, সেই লোকটি কে?
মিসেস অলিভার উত্তর দিল, আপনি বরং জিজ্ঞাসা করুন মঁসিয়ে পোয়ারোকে।
কারণ উনি কথা বলেছিলেন তার সঙ্গে, আমি কথা বলিনি। স্টাবস তার নাম, না না ও নাম তো আমার গল্পের প্লটের।
ডি সৌউসা, তার প্রকৃত নাম, ইটিয়েন ডি সৌউসা।
মনোযোগী হয়ে উঠলেন ইনসপেক্টর, আর একটা নাম শুনে, কি বললেন, মিঃ পোয়ারোকে জিজ্ঞাসা করব?
অলিভার উত্তর দিল, এরকুল পোয়ারো তিনিও আমার সঙ্গে ছিলেন। মৃতদেহ আবিষ্কার করার সময়।
আমার আশ্চর্য লাগছে–এরকুল পোয়ারো..সেই বিখ্যাত মানুষটি, ছোটখাট চেহারার মানুষটি, বেলজিয়ান-মুখে একটা বিরাট গোঁফ?
তার কথায় সম্মতি জানিয়ে মিসেস অলিভার বলল হ্যাঁ, বিরাট গোঁফ, তাকে আপনি জানেন নাকি?
তার সঙ্গে অনেক বছর আগে একবার দেখা হয়েছিলো, আমি তখন তরুণ সার্জেন্ট ছিলাম। ইনসপেক্টর বললেন, আচ্ছা তিনি এখানে এসেছেন কেন?
মিসেস অলিভার বলল–এখানকার উৎসবে তার পুরস্কার বিতরণ করার কথা। ডেকে দেবো তাকে।
ম্যাডাম আপনি কি এর বেশি কিছু বলতে পারেন, যাতে আমাদের তদন্তের কাজে লাগবে এমন কিছু তথ্য? বললেন ব্লান্ড।
মিসেস অলিভার উত্তর দিল-না সেরকম কিছু আমি জানি না অতএব সেটা আমি বলতেও পারবো না। আপনাকে আমি জানিয়েছি যে, কেবল অনুমানের ভিত্তিতে বলেছি আর কিছু নয়।
দ্রুত বললে সে, ধন্যবাদ ম্যাডাম, পোয়ারোকে যদি এখানে আসতে বলেন, তবে অনুগ্রহীত হবো।
কৌতূহলী হয়ে হপকিন্স জিজ্ঞাসা করলো ব্লান্ডকে, অলিভার ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর স্যার মঁসিয়ে পোয়ারোকে?
তার কথায় কান দিলো না ইনসপেক্টর। তখন তার মনটাকে ভীষণ চঞ্চল করে তুলেছিলো স্যার জর্জের আর্তনাদ। স্যার জর্জ উচ্চৈস্বরে বলছিলেন, আমার স্ত্রী উধাও হয়ে গেছে মনে হয়, কোথাও সে যেতে পারে কিন্তু আমি জানি না। মিস ব্রেউইস তারপর খবর দিল-খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না লেডি স্টাবসকে। আর অলিভারের যুক্তি অনুসারে কোথাও সে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছে এই উৎসবের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য।
কনস্টেবল হপকিন্স গলা খাঁকানি দিয়ে বলল, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব স্যার, যদি আপনি ভেবে থাকেন এই ঘটনার সঙ্গে ডি সৌউসা জড়িত, তাহলে সে কে? মনে মনে ভীষণ খুশী হয়েছিল কনস্টেবল হপকিন্স, অনেকগুলো বিদেশীদের পেছনে ছোটার থেকে একজন বিদেশীকে পাওয়া গেলে ভালো হয়। তখন অন্যদিকে চিন্তা করছিল ইনসপেক্টর ব্লান্ড।
ব্লান্ড মুখভঙ্গী করে বলে উঠল–যেখানে পাও, লেডি স্টাবসকে খুঁজে নিয়ে এসো। আমি তাকেই চাই।
এই সময় ঘরে এসে ঢুকলো এরকুল পোয়ারো। শ্যেন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। দরজা বন্ধ করে।
উঠে দাঁড়াল ইনসপেক্টর ব্রান্ড এবং বললো মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার আমাকে মনে আছে বলে মনে হয় না?
একটুক্ষণ চিন্তা করে পোয়ারো বলে উঠল আচ্ছা দাঁড়ান, হ্যাঁ এইবার মনে পড়েছে আমার, আজ চোদ্দো বা পনেরো বছর আগের কথা। তখন আপনি ছিলেন তরুণ সার্জেন্ট।
ব্লান্ড বললো, ঠিকই বলেছেন মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি কি এই খুনের কেসে সাহায্য করতে এসেছেন।
হ্যাঁ, আমি এখানে সাহায্য করতে এসেছিলাম, আপনি ঠিকই ধরেছেন, তবে খুনের কেসের তদন্তের জন্য নয়, পুরস্কার বিতরণের জন্য।
আমাকে অবশ্য মিসেস অলিভার বলেছেন, বলল ব্লান্ড।
পোয়ারো বললো, তিনি আপনাকে কিছুই বলেননি। ইনসপেক্টর ব্লান্ডকে খুনের সত্যিকারের মোটিভ জানায়নি তো অলিভার, আর সে এইজন্যই ডেভনে ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছে।
ইনসপেক্টর জানাল, তিনি আমাকে সঠিকভাবে কিছুই বলেননি। তবে সম্ভব অসম্ভব সব কিছু নিয়েই তিনি আলোচনা করেছেন মেয়েটির খুনের ব্যাপারে। আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি, ওর শক্তি সত্যিই অদ্ভুত।
শুষ্ক স্বরে পোয়ারো বললো, তিনি তার রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করেন এই কল্পনাশক্তি দিয়ে।
আচ্ছা ডি সৌউসা নামে একজন লোকের কথা অলিভার বলছিলেন, তাহলে কি তিনি তাকেই অনুমান করছেন? জানতে চাইলো ব্লান্ড।
পোয়ারো জানালো, না, ঘটনা সেরকম নয়। তবে ঐ লোকটির চিঠি এসেছিল আজ সকালে প্রাতঃরাশের সময়, এর পরে অসুস্থতা বোধ করেন মিসেস স্টাবস। তিনি টেবিল থেকে উঠে যান মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে বলে। তিনি ভয়ঙ্কর ভীত হয়ে পড়েছেন, তার সেই খুড়তুতো ভাইয়ের আগমনে।