রাস্তার সন্ধিস্থল–এই সময় গাড়ি থামাল সোফার–মেয়ে দুটি পোয়ারোকে ধন্যবাদ জানাল দুটি পৃথক ভাষায় গাড়ি থেকে নামার পর, তারপর হাঁটতে শুরু করল বাঁ দিকের রাস্তা ধরে। সোফার এবার গাড়ি চালিয়ে দিল ডানদিকের রাস্তা ধরে। অরণ্যের পথে গিয়ে পড়ল গাড়িটা একটু পরেই। অবশ্য খুব গভীর অরণ্য নয়। ওদের মধ্যে বেশ কিছু যুবতী খুব চমৎকার। হুডাইন পার্ক ইয়ুথ হোস্টেলের ব্যাপারে সোফার তার শেষ রায় দিল উপরের কথায়। আবার সে বলল, তাদের বোঝানো খুব কষ্টকর বহিরাগতদের ব্যাপারে। বেদনাদায়কভাবেই তারা প্রবেশ করে। আমাদের বন-জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তারা সব সময় প্রবেশ করে থাকে। আর এমন ভান করে যে, আপনি তাদের কি বলছেন তারা বুঝতে পারছেন না। অরণ্যের ঢালু পথ দিয়ে গাড়িটা নামছিল তখন বড় একটা গেটের সামনে এসে দাঁড়াল গাড়িটা একটু পরেই। বিরাট সাদা জর্জিয়ান হাউস, সামনেই নদী। দীর্ঘদেহী কালোচুলের খানসামা সিঁড়ির মুখে এগিয়ে এলো সোফার গাড়ির দরজা খুলতেই।
বিড়বিড় করে খানসামাটি বলল, মিঃ এরকুল পোয়ারো। পোয়ারো সংক্ষেপে বলল, হু।
স্যার, আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন মিসেস অলিভার। চলুন আপনাকে পথ দেখিয়ে পৌঁছে দিই।
মিসেস অলিভার পোয়ারোকে দেখে উঠে দাঁড়াতেই, তার কোল থেকে আপেলগুলো মাটিতে পড়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। তখন অলিভার-এর মুখে আপেল ভর্তি ছিল, কোনো রকমে অস্পষ্টভাবে সে বলল, বুঝতে পারি না কেন যে আমি সবসময় মাটিতে আপেলগুলো ফেলে দিই। মঁসিয়ে পোয়ারো কেমন আছেন? পোয়ারো উত্তর দিল, ভালো, এবং নরম সুরে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কেমন আছেন?
যেমন দেখেছিল পোয়ারো আগেরবার মিসেস অলিভারকে, এবার যেন অন্যরকম দেখাচ্ছিল–সে অবশ্য একটু আভাস দিয়েছিল ফোন করার সময়।
মিসেস অলিভার আনন্দে অধীর হয়ে বলে উঠল, জানতাম অবশ্যই আপনি আসবেন। পোয়ারো বলল, আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, কেন আমি এখানে এলাম।
মিসেস অলিভার বলল, আমি এর উত্তর জানি। সেটা হল কৌতূহল।
পোয়ারো তার দিকে তাকিয়ে দেখল তার চোখ দুটি চকচক করছে। আপনার মতো বিখ্যাত নারীর স্বতলব্ধ জ্ঞান সম্ভবত কৌতূহল।
হাসবেন না আমার জ্ঞানের কথা শুনে এর মধ্যে খুনিকে আগে ঠিকমতো চিহ্নিত করিনি?
অলিভার বলল।
পোয়ারো চুপ করে রইল, না হলে সে উত্তর দিত। সব সময় সেটাও সম্ভবত হয় না, পঞ্চমবার চেষ্টা করার পরও, সেটা না বলে সে চারিদিক তাকিয়ে দেখে নিয়ে বলল, এখানে এই বিশাল বাড়ি, সম্পত্তি, দারুণ ব্যাপার।
মঁসিয়ে পোয়ারো এ সব কিন্তু আমার নয়, আপনি কি তাই ভাবছেন। না, না এসব অন্য লোকেদের।
ওইসব লোকেরা কারা? পোয়ারো জানতে চাইল।
অস্ফুটভাবে মিসেস অলিভার বলল, না না, তারা সত্যি কেউ না। আপনি মনে করে নিন তারা খুব ঐশ্বর্যশালী। আর আমি এখানে এসেছি আমার পেশাগত কাজ করতে। অর্থাৎ বলা যায় একটা খুনের ব্যবস্থা করার জন্য।
পোয়রো তারদিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকালো। মশাই, না না এটা সত্যিকারের খুনের ব্যাপার নয়। তাকে আশ্বস্ত করার জন্য বলল মিসেস অলিভার, এখানে একটা বিরাট সামাজিক উৎসব হতে চলেছে আগামীকাল, আর সেখানে একটা খুন হতে চলেছে। আমিই করেছি সে খুনের ব্যবস্থা। বুঝলেন ব্যাপারটা ট্রেজার হান্টর মতো। এই রকম নকল ট্রেজার হান্ট দেখতে এখানকার লোকেরা এতবেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে…
এর মধ্যে একটা নতুনত্ব থাকবে তারা ভেবেছে। সেজন্য মোটা টাকার দক্ষিণা দিয়ে তারা আমাকে এখানে এনেছে। এটা একটা সাদাসিধা মজার ব্যাপার। বাস্তবিকই একটা পরিবর্তন আনা যাবে গতানুগতিক উৎসব-এর।
আচ্ছা কাজটা কিভাবে হবে? জানতে চাইলে পোয়ারো।
শিকার অবশ্যই একজন হবে। আর সব গতানুগতিক কু, সন্দেহ-বুঝলেন ভ্যাম্প, ব্ল্যাকমেইলার তরুণ প্রেমিক প্রেমিকারা, খানসামা ইত্যাদি, ইত্যাদি।
শিকার কে, খুনী কে, মোটিভ কি, কু কী এসব আপনাকে খুঁজে বার করতে হবে। তারপর পুরস্কার দেওয়া হবে।
এরকুল পোয়রা মন্তব্য করল–অভিনবত্ব! আছে। মিসেস অলিভার বিমর্ষ কণ্ঠে বলল, আসল কথা চিন্তা করার থেকে বাস্তবে এসব করা খুবই কঠিন। আপনাকে সুযোগ দিতে হবে ভাবনা চিন্তা করার, সত্যিকারের বুদ্ধিমান লোককে, অবশ্য তাদের সেরকম কিছু হওয়ার প্রয়োজন নেই আমার বইতে। পোয়ারো তার ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলল, আর আপনি কি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন এ সমস্ত ব্যবস্থাপনায় আপনাকে সাহায্য করার জন্য?
না না, কখনোই নয়, মিসেস অলিভার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন। আমি নিজেই সেসব আয়োজন করে রেখেছি। সবই প্রস্তুত আগামীকালের জন্য। একটা সম্পূর্ণ পৃথক কারণে আমার আপনাকে দরকার।
সেই কারণটা কি? পোয়ারো প্রশ্ন করলো।
মিসেস অলিভার তার চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে, সেই অতি পুরানো পরিচিত কায়দায় বললেন, আমি বোকা, খুবই বোকা। আমি সাহস করে এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি। অথচ কোথায় যেন মস্ত বড় একটা ভুল হয়ে গেছে, এটা আমি মনে করছি।
অবাক চোখে তার দিকে তাকালো পোয়ারো, বড় রকমের ভুল? কেমন করে হলো?
যদিও আমিই-এর উদ্যোক্তা….কিন্তু আমার মনে হয়–অতএব যদি আপনার ইচ্ছা হয় আপনি আমাকে বোকা ভাবতে পারেন। তবুও আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আগামীকাল যদি নকল খুনের বদলে সত্যিকারের খুন হয়; আমি আশ্চর্য হবো না।