আর সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে যায় মেয়েটি।
তার ঠিক কি করার কথা ছিল, বলুন তো? তাকে বোট-হাউসে থাকতে হবে। যেই সে দেখবে দরজার সামনে কেউ আসছে তৎক্ষণাণৎ সে মাটিতে শুয়ে পড়বে। তারপর মরার ভান করে পড়ে থাকবে গলার দড়ির ফাঁস লাগিয়ে।
তারপর শান্ত স্বরে মিস ব্রেউইস বলল, অথচ সত্যি সত্যি তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃত অবস্থায়। ইনসপেক্টর ব্লান্ড মন্তব্য করলো, একটা ঘরে একা একা আবদ্ধ থাকা খুব একঘেয়েমির ব্যাপার, বিশেষত যখন বাড়িতে উৎসব চলছে।
মিস ব্রেউইস বললো, সবাই কি সব কিছু পারে তাছাড়া মারলিন নিজেই আগ্রহ প্রকাশ করে ছিলো নকল মৃতদেহ সাজার জন্য। প্রচুর কমিক্সের রই রাখা হয়েছিল তার সময় কাটাবার জন্য।
বোট-হাউসে আমি নিজের হাতে করে প্রচুর মিষ্টি, কেক, ফল খাবারেরর প্লেটে রেখে এসেছিলাম, তার খাবার জন্য।
ফিরে তাকালেন ব্লান্ড একপলকে। তার দৃষ্টি ধারালো–তার খাবারের প্লেট আপনি নিজে রেখে এসেছিলেন? কখন?
তখন বিকেল প্রায় চারটে বেজে পাঁচ মিনিট হবে। আর বোট-হাউসে যখন পৌঁছেই–কেক ফুট আর ড্রিঙ্কস নিয়ে তখন চারটে বেজে পনেরো মিনিট হবে, এটাই আমার মনে হয়, জানালো ব্রেউইস।
তাহলে মারলিন টাকার সোয়া চারটে পর্যন্ত জীবিত ছিলো? জিজ্ঞেস করলো ইনসপেক্টর ব্লন্ড। আপনি কি তখন তাকে মৃতের ভান করে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন নাকি?
না, আমি তাকে বাইরে থেকে ডাক দিই, সে নিজে দরজা খুলে দিয়েছিলো। তারপর আমি খাবারের প্লেটটা টেবিলে রেখে এসেছিলাম। বলল মিস ব্রেউইস।
তার নোট বুকে লিখলো ইনসপেক্টর সোয়া চারটের সময়, যখন এই কথা বলল সে, এক্ষেত্রে সময়টা খুব জরুরী মিস ব্রেউইস। আবার জিজ্ঞাসা করছি, আপনি একেবারে নিশ্চিত তো সময় সম্পর্কে? ঠিকভাবেই আমি বলছি, নিশ্চিতভাবে ঘড়ি আমি দেখিনি–তাই আপনার কথামতো নিশ্চিত করে সময়টা বলতে পারব না আমি।
তবে মনে হয় সময়টা ঐ কাছাকাছিই হবে।
আচ্ছা আর একটা কথা মিস ব্রেউইস, আপনি কি কারো সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন বোট-হাউসে যাওয়ার সময় অথবা ফেরার সময়। কিংবা বোট-হাউসে কাউকে যেতে অথবা ফিরে আসতে দেখেছিলেন?
ব্রেউইস জানালো না। একটুপরে কি ভেবেই যেন মিস ব্রেউইস বলে উঠলো–তবে সেই ফলিতে কাদের যেন দেখেছিলাম।
ইনসপেক্টর জিজ্ঞাসা করলেন, ফলি?
হ্যাঁ তাই, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান একটা, ছোটখাটো সাদা। বছর এক কি দুই আগে এটা তৈরি করা হয়, বোট-হাউসে যাওয়ার রাস্তার ডান দিকে।
আমার মনে হচ্ছে সেখানে যেন একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম।
হাসছিলো একজন, আর অন্যজন বলে উঠলো চুপ করো।
আপনি কি জানেন মিস ব্রেউইস ওরা দুজন কারা? সে উত্তর দিল, না, রাস্তা থেকে ফলির সামনেটা দেখা যায় না।
ইনসপেক্টর ভাবল, যারাই দাঁড়িয়ে থাকুক না কেন ফলির সামনে, তাদের খুঁজে বার করা এই কেসের পক্ষে জরুরী। যদি তাদের খুঁজে বার করা যায় তবে তারা বলতে পারবে তারা কাউকে বোট-হাউসে যেতে বা আসতে দেখেছিল কিনা? প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলো ইনসপেক্টর। অন্তত তদন্তের কাজে আমাদের সুবিধা হয় যদি আপনি মেয়েটির সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন ব্যক্তিগতভাবে। মিস ব্রেউইস বলল, না, আমি মেয়েটির ব্যাপারে কিছুই জানি না, এবং সত্যি কথা বলতে গেলে বলতে হয়, আজ এই উৎসবে প্রথমবারই তাকে আমি দেখেছি–আজকেই।
ব্লান্ড আবার বলল–তাহলে আপনি তার ব্যাপারে সত্যিই কিছু জানেন না?
মিস ব্রেউইস বলল, তাকে যে কেউ খুন করতে পারে এ বিষয়ে কিছুই জানি না আমি।
ব্লান্ড একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, সে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে, এবার মনে হয় মেয়েটির মায়ের সঙ্গে দেখা করা দরকার।
মিসেস টাকারের চেহারা ক্ষীণাঙ্গী। টিকালো নাক, চুল সোনালি, তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে ক্ৰলেনের ফলে। তবে সে তৈরি হয়ে আছে ইনসপেক্টর ব্লান্ডের প্রশ্নের উত্তর দিতে।
সে অনুযোগ করে বলে উঠল, ব্লান্ড প্রশ্ন করার আগেও–এ ধরনের নৃশংস হত্যা কাহিনী শুনেছেন গল্পে, উপন্যাসে কিংবা খবরের কাগজে, ইনসপেক্টর আমার মেয়ে মারলিন-এর ক্ষেত্রে এরকম ঘটল কেন?
ইনসপেক্টর ব্লান্ড বলল, আমি অত্যন্ত দুঃখিত ম্যাডাম। আপনার মেয়ের সর্বনাশ কে করতে পারে বলে মনে হয় আপনার, সেই ধারণাটা আমাকে জানান।
মিসেস টাকার বলল, আমিও ভাবছি সেই একই কথা। ওর দু-একজন সহপাঠী বা সহপাঠিনীর সঙ্গে ওর মাঝেমধ্যে ঝগড়া বিবাদ হলেও, এরকম নৃশংস প্রতিশোধ কেউ নেবে বলে মনে হয় না, একথা ওর স্কুলের টিচাররা বলেছে। ওর সত্যিকারের কোনো শত্রু ছিলো, একথা তো আমার মনে হয় না।
অবশ্য মাঝে মাঝে কিছু বিশ্রী ধরনের উক্তি করতো, তবে অন্য কিছু নয়, এইরকম আর কি, কোনো শত্রু ওর পেছনে লেগেছে। ও একটু সাজগোজ করতে ভালোবাসত এই যা। যদিও ও এখন কিশোরী, তবুও পূর্ণ যুবতীদের মতো সজ্জাবিলাসী হয়ে উঠেছে ও। অবশ্য সব সময় নয়। ও নিজে ওর প্রসাধন সামগ্রী কিনে আনতে, হাতে টাকা পেলেই–যেমন লিপস্টিক, সেন্ট এবং সেগুলো লুকিয়ে রাখতো। হাঠাৎ মিসেস টাকার ভেঙে পড়ে কাঁদতে শুরু করলো।
মিসেস টাকার বলল, যদি আপনি বলেন আমার মেয়েকে খুন করেছে ঐ হোস্টেলের নোংরা বিদেশীদের মধ্যে একজন কেউ, তাহলে আপনি ব্যাপারটা বুঝতেই পারবেন না। সুন্দরভাবে কথা বলে প্রায় তারা সকলেই। বিশ্বাসই করতে পারবেন না, একটি মেয়ে এমন সব শর্টস পরে। ছিঃ, কি কুৎসিত শর্টস পরিহিত মেয়ে-সঙ্গে বিকিনি। আবার নদীর ধারে কোনো কোনো মেয়ে যখন রোদে পিঠ রেখে শুয়ে থাকে–তখন অনেকেরই গায়ে শর্টসও থাকে না–আর সব গণ্ডগোলের মূল হল সেটাই। এবং আমি সেটাই বলতে চাইছি।