ঠিক আমার বইয়ে যেভাবে লেখা ছিল, খুনটা সেইরকম ভাবেই হয়েছে, মিসেস অলিভার কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, প্রশ্ন করলো আবার, কিন্তু কেন, কে খুন করলো তাকে? আর এরকম ঘটলই বা কেন?
পোয়ারো বলল, আমারও সেই একই প্রশ্ন? পোয়ারো এ ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল যে মিসেস অলিভারেরও একই প্রশ্ন।
আর অলিভার যে প্রশ্নের উত্তর দেবে, সে উত্তর তার নিজস্ব নয়। কারণ যে মেয়েটি নিহত হয়েছে সে এ্যাটম বিজ্ঞানী নিহত যুগোস্লাভিয়ার প্রথমা স্ত্রী নয়। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সের একটি গ্রাম্য মেয়ে। পৃথিবীতে তার কোনো শত্রু ছিলো না, যতদূর জানা যায়।
ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর ব্লান্ড স্যার জর্জের স্টাডি টেবিলের পেছনে বসেছিলো। তাকে বোট-হাউসে নিয়ে এসেছিলো স্যার জর্জ। আর তার সঙ্গে এখন সে বাড়িতে ফিরে এল। ফটোগ্রাফিক ইউনিট নিচে বোট-হাউসে তাদের কাজে ব্যস্ত। সবেমাত্র এসে পৌঁছেছে ম্যাডিক্যাল অফিসার এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট-এর লোকেরা। স্যার জর্জ জিজ্ঞাসা করল, উৎসব চলবে না কি বন্ধ করে দেবে?
স্যার জর্জ এখনো পর্যন্ত কি করছেন? জিজ্ঞাসা করল ব্লান্ড। না, কিছুই বলিনি, তবে এরকম একটা কানাঘুষো চলছে যে এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, এছাড়া কিছু নয়। এখানে কেউ সন্দেহ করছে না এটাই আমার মনে হয়, যে এখানে কোনো খুন হয়েছে। স্যার জর্জ বলল।
অতএব চলবে দিন যেমন চলছে। তারপর কিছু একটা ভেবে ব্লান্ড জিজ্ঞাসা করলো আবার, আপনার কি মনে হয়, যে এই ব্যাপারে কতজন লোক এসেছে? কয়েক শো তো হবেই, আরো অনেকে আসতে পারে–উৎসব বেশ সফল হয়েছে এটা বলা যায়। তবে খুবই দুর্ভাগ্যের কথা -বলে থেমে গেল স্যার জর্জ।
তার কথা সংশোধন করে ব্লান্ড বলল, যেহেতু একজন খুন হয়েছে, অতএব উৎসব সফল বলা যায় না।
ব্লান্ড চিন্তা করলো কয়েকশোলোক হয়েছে তাহলে মনে হয়, তাদের মধ্যে যে কেউ খুন করতে পারে। অবশ্য বুঝতে পারছি না, তাদের মধ্যে যেই হোক না কেন–খুন করার কারণটাই বা কি? আশ্চর্য, স্যার জর্জ জিজ্ঞেস করল, কে খুন করতে পারে মেয়েটিকে, বুঝতে পারছেন না?
কতটুকুই বা বলতে পারেন মেয়েটির সম্পর্কে সেটাই বলুন। শুধু জানতে পেরেছি সে স্থানীয় মেয়ে, তাই নয় কি?
জবাব দিল স্যার জর্জ, হ্যাঁ, মেয়েটি স্থানীয়। নদীর ধারে নিচে জেটির কাছেই একটা কটেজে থাকতো সে। একটা স্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্যাটারসনে মেয়েটির বাবা কাজ করে এটাই শুনেছি। বিকেল থেকে এই উৎসবে রয়েছে ওর মা। আমার থেকে আরও ভালোভাবে বোঝাতে পারবে আপনাকে, মিস ব্রেউইস আমার সেক্রেটারি।
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে ইনসপেক্টর বলল, তা অবশ্য ঠিক। ব্যাপারটা আমার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। বুঝলেন স্যার জর্জ, জানাল ইনসপেক্টর ব্লান্ড। তাহলে বোট-হাউসে কি করছিল মেয়েটি? শুনেছি ওখানে কি একটা উৎসব চলছিল, মার্ডার হান্ট অথবা ট্রেজার হান্ট?
স্যার জর্জ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো, তারপর বলল, ডেকে দেবো মিস ব্রেউইসকে? আমার থেকে সে আরো ভালোভাবে বলতে পারবে। যদি আরও কিছু আপনার জানার থাকে।
এখনই নয়, স্যার জর্জ-বললেন ইনসপেক্টর। তবে আপনাকে পরে আমি অনেক প্রশ্ন করতে পারি। তার আগে আমি অনেক লোকের সঙ্গে দেখা করতে চাই। যেমন স্বয়ং আপনি, লেডি স্টাবস এবং আর যারা এই মৃতদেহটি প্রথম দেখেছিল। এও আমি জানতে পেরেছি যে, তাদের মধ্যে একজন মহিলা ঔপন্যাসিক, অর্থাৎ আমাদের কথা অনুযায়ী তিনিই নাকি এই মার্ডার। হান্টের লেখিকা।
হ্যাঁ সেটা ঠিক কথা, তার নাম মিসেস এরিয়াডন অলিভার। বললেন স্যার জর্জ। আচ্ছা উনি, তাই নাকি? বলল ব্লান্ড, বেস্ট সেলার, আমি তার অনেক বই পড়েছি। স্যার জর্জ বলল, উনি এখন খুব ভেঙ্গে পড়েছেন। আপনি ওঁর জন্য অপেক্ষা করছেন, ওঁকে সেটা জানিয়ে দিচ্ছি। আমি ঠিক বলতে পারছি না আমার স্ত্রী এখন কোথায়?
হয়তো দু-তিনশো লোকের মাঝখানে রয়েছে সে। মনে হয় সে আপনাকে এ সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানাতে পারবে না, তাহলে আপনি প্রথমে কার সঙ্গে দেখা করতে চান? ব্লান্ড জবাব দিলেন, প্রথমে কথা বলব আপনার সেক্রেটারি মিস ব্রেউইসের সঙ্গে তারপর মেয়েটির মায়ের সঙ্গে। সম্মতি জানিয়ে স্যার জর্জ বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। লোকাল পুলিশ কনস্টেবল রবার্ট হপকিন্স দরজা খুলে দিল তার জন্য, আবার দরজা বন্ধ করে দিল সে বেরিয়ে যেতেই। সে একটা জবানবন্দী শুনলো তারপর–অবশ্যই স্যার জর্জের মন্তব্যের ধারাবিবরণী। সে বলল, লেডি স্টাবসকে চাই, উঠে এসো এখানে। তার কপাল টিপে ধরল সে। স্যার জর্জ এই জন্যই বলেছিলেন, তার কাছ থেকে বিশেষ একটা সাহায্য পাওয়া যাবে না। স্থানীয় মেয়েকে কি বিয়ে করেছিলেন তিনি? না, সে কালো চামড়ার মহিলা, বিদেশিনী অবশ্য কেউ কেউ তা বলে থাকেন, অবশ্য নিজে আমি কিছু মন্তব্য করতে চাই না। ব্লান্ড মাথা নাড়ল, নীরব হলো মুহূর্তের জন্য। তারপর এমন একটা প্রশ্ন করল সে যেটা স্পষ্টতই রেকর্ড-এর বাইরে। সে বলল, কে এ কাজ করেছে হপকিন্স? ব্লান্ড ভাবলো হয়তো হপকিন্স জানতে পারে। যার স্ত্রী গল্প করার মতো এবং তার কাছে অনেক খবর থাকে ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় কনস্টেবল হিসাবে। হপকিন্স বলল, যদি আপনি আমাকে প্রশ্ন করেন মেয়েটি বিদেশিনী কিনা; তার উত্তরে বলব–কেউ স্থানীয় নয়। টাকার ঠিক বলছি তো? তাদের ন-জনের পরিবার; তারা চমৎকার সম্মানিত, তাদের মধ্যে বড় দুটি মেয়ে বিবাহিত, একটি ছেলে নেভিতে, আর একজন আছে ন্যাশনাল সার্ভিসে আর একটি মেয়ে আছে টরকোয়ের হেয়ার-ড্রেসার। বাড়িতে যে তিনজন আছে, তাদের মধ্যে একটি মেয়ে, দুটি ছেলে। একটু থেমে কিছু একটা মনে করে হপকিন্স বলল আবার, অবশ্য তাদের মধ্যে কেউই উজ্জ্বল নয়। মিসেস টাকারের ঘর-বাড়ি খুব পরিষ্কার রাখে, সব থেকে ছোট সে এগারজনের মধ্যে, বৃদ্ধ পিতা তার সঙ্গে থাকে। ব্লান্ড এইসব খবর পেলো নীরবে বসে থাকা অবস্থায়। টাকারদের সামাজিক অবস্থানের নমুনা পাওয়া গেল, হপকিন্স-এর বৈশিষ্ট্যমূলক প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে। বলে চলল হপকিন্স, এ একজন বিদেশিনী–এই কারণেই আমি বললাম। হুডাউন হোস্টেলে এসে উঠেছে তাদের মধ্যে একজন। একবার তাদের মধ্যে সন্দেহের কারণ ঘটেছিল এবং মাঝে মাঝে অনেক কিছুই ঘটে। বনের মধ্যে তাদের আমি কি করতে শুনেছি দেখলে আপনারা আশ্চর্য হবেন। কানে আঙ্গুল দেবেন পার্ক করা গাড়িতে প্রতি মুহূর্তে কি ঘটেছে শুনলে। এরই মধ্যে পিসি হপকিন্স যৌন ক্রিয়াকলাপ সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। কথপোকথনের একটা দীর্ঘ তালিকা দিল সে সব কিছু শুনিয়ে।