পোয়ারো টেনিস কোর্ট-এর একজন মিলিটারি ভদ্রলোক ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেল না, ক্যামেলিয়া গার্ডেন-এর দিকে রওনা হলো সে। মিসেস অলিভারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ক্যামেলিয়া গার্ডেন-এ। সে বসেছিল বাগানের একটা বেঞ্চে। সে তার পাশে বসতে বলল পোয়ারোকে দেখে। একটা অদ্ভুত শব্দ করে সে বলল, এটা শুধু দ্বিতীয় কু, মনে হয় আমি তাদের অসুবিধায় ফেলেছি, এটা আমার মনে হচ্ছে। কেউ আসেনি এখনো পর্যন্ত। একজন যুবক এইসময় বাগানে ছুটে এসে প্রবেশ করে এবং উৎফুল্ল মেজাজে চিৎকার করে বলতে থাকে যে, সে পরবর্তী ক্লু আবিষ্কার করে ফেলেছে। অস্বস্তির সঙ্গে সে বলল, কর্ক গাছের ব্যাপারে জানে না অনেক ব্যক্তি, প্রথম ক্লু চতুর ফটোগ্রাফার আমি লক্ষ্য করেছি যে, সেটা একটা টেনিস নেটের অংশ, একটি কর্ক এবং বিষের একটি খালি বোতল সেখানে, এই ক্ল বোতলের পিছনে ছুটবে বেশির ভাগ লোক। অত্যন্ত জটিল ব্যাপার। কর্ক গাছ খুবই দুষ্প্রাপ্য, সেটা পৃথিবীর এই প্রান্তে। আমিও আগ্রহী ঝোঁপঝাড় আর গাছের ব্যাপারে। এবার দেখা যাক অন্য কেউ কোথায় যায়।
সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার হাতের নোট বই-এর দিকে। মনে হয় সেটা কোনো কাজে লাগবে না, পরবর্তী কু-আমি যেটা কপি করেছি।
সকলের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে বলল, আপনি কি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন?
না না, মিসেস অলিভার বললো আমরা নিতান্ত কিছু খুঁজছি।
ফলির দিকে যখন কোনো সুন্দরী মহিলা ঝুঁকে পড়ে…কোথায় যেন আমি এরকম শুনেছি এবং আমার ধারণা!
পোয়ারা উত্তর দিল, এটা একটা বহু পরিচিত উক্তি।
ফলি হয়তো একটা ইমারত হতে পারে সাদা সেই সঙ্গে অনেকগুলো স্তম্ভও থাকবে..অনেক আশা নিয়ে বলল মিসেস অলিভার। যুবকটি বলল, অজস্র ধন্যবাদ–অবশ্যই এমন একটা ধারণাও হতে পারে। সে আরও বলল, মিসেস অলিভারকে এখানেই কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে–ওরা বলছিল। তার ফটোগ্রাফ নিতে চাই আমি। আচ্ছা আপনি কি তাকে দেখেছেন?
মিসেস অলিভার দৃঢ়স্বরে বলল, না।
পোয়ারো, যুবকটি চলে যাবার পর মিসেস অলিভারকে বলল–আপনি এটা অন্যায় করলেন না তো-পরবর্তী কু-র ব্যাপারে তাকে সাহায্য করে?
অলিভার বলল, আমি তাকে উৎসাহ দিলাম কারণ একমাত্র এই যুবকটি ক্লু খুঁজে পেয়েছে।
পোয়ারো জানতে চাইলো, তবে তাকে আপনি ফটোগ্রাফ দিলেন না কেন?
এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, বলল মিসেস অলিভার-চুপ করুন মনে হচ্ছে কেউ যেন আসছে– না, যারা আসছে তারা শুধু দুজন মহিলা, কু হান্টার নয়। তারা উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে এসেছে টিকিট কেটে।
মিসেস অলিভার পোয়ারোর দিকে ফিরল, মেয়ে দুটির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে।
বিহ্বল দৃষ্টিতে পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে বলল, মনে করুন, কেউ যদি কখনো আমার দেহ খুঁজে না পায়।
পোয়ারো বলল, ম্যাডাম ধৈৰ্য্য ধরুন এবং সাহস সঞ্চয় করুন। অনেক দেরি আছে বিকাল শেষ হতে।
মিসেস অলিভার উজ্জ্বল মুখে উত্তর দিল-হ্যাঁ, ঠিক কথাই বলেছেন আপনি। এবার চলুন দেখি বাচ্চা মেয়ে মারলিন কি করছে?
এই মেয়েটিকে আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না বুঝলেন মিঃ পোয়ারো। যেহেতু দায়িত্বজ্ঞান নেই ওর। আমি ওকে মৃতদেহের ভূমিকায় ছাড়া আর অন্য কিছু ভাবতে পারি না। তারা এলোমেলোভাবে নদীর পথের দিকে এগিয়ে চলল, ফলি অতিক্রম করে। বোট-হাউসের ছাদ দেখা যাচ্ছিল নিচের দিকে। ধরুন যদি খুনের সন্ধান করতে গিয়ে বোট-হাউসে দেহটা পাওয়া যায়? মন্তব্য করলো পোয়ারো। সেটা কি মনে হতে পারে অস্বাভাবিক বলে? আমিও সেটা ভেবেছিলাম, জানালো অলিভার। শর্টকাটের নমুনা তো? আর সে জন্যই চাবিকাঠি হল শেষ ক্লু-টা। আপনি কিছুতেই তালা খুলতে পারবেন না সেই চাবিটা ছাড়া, কেবল মাত্র ভেতর থেকে খুলতে পারেন।
মিসেস অলিভার বোট-হাউসের সামনে এসে লুকোনো চাবিটা বের করে দরজা খুলল।
মিসেস অলিভার ঘরের ভিতরে ঢুকে বলল, তোমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এসেছি আমরা মারলিন।
একটু সন্দেহ ছিল মারলিনের সম্পর্কে।
যেভাবে মারলিন নিজের দেহটা সাজিয়ে রেখেছিল তা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। মারলিন তাদের ডাকে কোনো উত্তর দিল না। মাটির ওপর সে নিঃশব্দে পড়ে রইলো। হাওয়া প্রবেশ করছিল খোলা জানলা দিয়ে। হাওয়ায় লুটোপুটি খাচ্ছিল টেবিলে রাখা কমিক্স-এর পাতাগুলো।
মিসেস অলিভার অধৈৰ্য্য হয়ে বলল–বেশ তো সবই ঠিক আছে। অন্য কেউ কু-র ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি আপনি আর আমি ছাড়া।
পোয়ারো সন্দিগ্ধ হলো। মিসেস অলিভারকে আলতোভাবে সরিয়ে ঝুঁকে পড়ল মেয়েটির দিকে। সঙ্গে সঙ্গে পোয়ারোর কণ্ঠে একটা চাপা আওয়াজ বেরিয়ে এল। তারপরেই সে চোখ তুলে তাকাল মিসেস অলিভারের দিকে। সুতরাং…তাই ঘটলো শেষ পর্যন্ত আপনি যা আশা করেছিলেন, বলল পোয়ারো। আতঙ্কে মিসেস অলিভারের চোখদুটো বড় বড় হয়ে উঠলো-আপনি কি মনে করছেন?
এই কথা বলে সে একটা বাঁশের চেয়ার চেপে ধরে বসে পড়ল। আবার প্রশ্ন করল, আপনি কি মনে করছেন–সে মৃত নয়তো? পোয়ারো মাথা নাড়লো, জানালো, হ্যাঁ, মেয়েটি মারা গেছে, অবশ্য বেশিক্ষণ হয়তো সে মারা যায়নি। প্রশ্ন করল অলিভার, কিন্তু কি করে এটা হলো, মিসেস অলিভারকে মুখটা দেখানোর জন্য মেয়েটির মাথার ওপর থেকে স্কার্ফটা তুলে ধরল সে।