না, আনতে হবে না, একটু বিশ্রাম নিতে চাই আমি, হাঁপিয়ে উঠেছি এই টেন্টের মধ্যে। আচ্ছা বাইরে কি খুব বেশি ভীড় হয়েছে?
তারা মনে হয় চা-এর জন্য লাইন দিয়েছে, জানালো পোয়ারো। ভালো কথা। এই বলে শেলি পা বাড়ালো টি-টেন্টের দিকে। পোয়ারো বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল তারপর। যাকে সে আগের দিন লিফট দিয়েছিল, মাঝপথে গিয়ে দৃষ্টি পড়ল তার সেই ডাচ্ মেয়েটির দিকে। প্রশ্ন করলো পোয়ারো, দেখছি তুমি উৎসবে এসেছ, আর তোমার সেই বন্ধুটি কোথায়?
মেয়েটি উত্তর দিল, সেও বিকালে এসেছে। তাকে অবশ্য আমি এখনো দেখিনি, ফেরার সময় দুজন একসঙ্গে এখান থেকে বাসে করে ফিরব–গেটের মুখ থেকে বাস ধরব সোয়া পাঁচটায়। প্রথমে আমরা টরকোয়ের যাব, সেখানে আর একটা বাস বদল করব, প্লিমাউথ-এর বাস। পোয়ারো সেই ব্যাগটা ঝুলতে দেখল ডাচ্ মেয়েটির কাঁধে। মেয়েটি ঘর্মসিক্ত হয়েছিল ওজনের ভারে, তার সেই অবস্থা দেখে পোয়ারো অবাক হলো, সে বললো, তোমার বন্ধুটিকে আজ সকাল বেলায় দেখেছি। আচ্ছা, আপনি কি জার্মান মেয়ে এলসার কথা বলছেন অদুরে স্যার জর্জের দিকে তাকিয়ে ডাচ মেয়েটি পোয়ারোকে প্রশ্ন করল, আর কি বলব, এই বাড়ির মালিক যে ভদ্রলোক এলসার ওপর সকালে খুব রেগে উঠেছিলেন, রাস্তা শর্টকার্ট করতে চেয়েছিল বেচারা, এই বাড়ির ভিতর দিয়ে, নদীর ধারে যাওয়ার জন্য। উনি বাধা দিয়েছিলেন তাকে। তাহলেও উনি খুব নম্র এবং ভদ্র। তাকে পোয়ারো জানাতে যাচ্ছিল যে সকালে অনাহূত অতিথি, আর এখন আড়াই শিলিং-এর টিকিট কেটে আইনসম্মতভাবে ন্যাসে হাউসে প্রবেশ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। কিন্তু সে বলতে পারলো না যেহেতু ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন হাজির হলেন।
লেডি স্টাবসকে দেখেছেন, মঁসিয়ে পোয়ারো? তিনি বিচারক হয়েছেন ফ্যান্সি ড্রেস প্রতিযোগিতায়। কোথাও খুঁজে পেলাম না তাকে, জানতে চাইলেন ওয়ারবারটন। আমি ওকে প্রায় আধঘণ্টা আগে দেখেছিলাম ঠিকই-এবার চলুন দেখা যাক এখন তিনি কোথায়? ক্রুদ্ধ স্বরে ওয়ারবারটন বলল, অভিশাপ দিতে ইচ্ছে করছে ভদ্রমহিলাকে। বুঝতে পারছি না, কোথায় উধাও হয়ে গেছেন তিনি। এদিকে অপেক্ষা করছে বাচ্চারা। আর আমরা পিছিয়ে পড়ছি আমাদের নির্দিষ্ট কর্মসূচী থেকে। একবার দেখে নিলো চারিদিকে তাকিয়ে, কোথায় গেলই বা আমাদ্দা ব্রেউইস?
পোয়ারো অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো লেডি স্টাবস-এর সন্ধান করতে গিয়ে, মিসেস অলিভারই এসময় কোথায় গেলেন? একটি যুবককে জেটির পথ ধরে এগিয়ে আসতে দেখলেন পোয়ারো এসময়। খুবই কালো লোকটির গাত্রবর্ণ। ইয়টিং কস্টিউম পরনে। পোয়ারোর কাছে আসার পর তাকে একটু ইতস্তত করে বলল, মাপ করবেন আমাকে, আচ্ছা জর্জ স্টাবস-এর বাড়ি কি এটাই? হ্যাঁ এটাই বাড়ি, বলল পোয়ারো। যুবকটির দিকে তাকিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করলো সে তারপর জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা আপনিই কি লেডি স্টাবস-এর খুড়তুতো ভাই?
হ্যাঁ, আমি ইটিয়েন ডি সৌউসা–উত্তর দিল যুবকটি। পোয়ারো জানাল, আমি এরকুল পোয়ারো। তারপর তারা উভয়েই শুভেচ্ছা বিনিময় করল, পোয়ারো তাকে যখন উৎসবের বর্ণনা দিচ্ছিল, সেটা শেষ করতেই লন পেরিয়ে স্যার জর্জ তাদের দিকে এগিয়ে এলেন।
তিনি বললেন, তুমিই ডি সৌউসা, খুব খুশী হলাম তোমাকে দেখে। হ্যাটি তোমার চিঠি পেয়েছে আজ সকালে। আচ্ছা দেখা যাক্ ্যাটি কোথায়? কোথাও আছে নিশ্চিয়ই মনে হয়।
তুমি আমাদের সঙ্গে সন্ধ্যায় নৈশভোজ সারবে আশা করি। স্যার জর্জ একটু থেমে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি এখানে অনেকদিন থাকবে?
দু-তিনদিন হয়তো, সেটা নির্ভর করছে,কথাটা অসমাপ্ত রাখলো ডি সৌউসা। খুব খুশী হবে হ্যাটি তোমাকে দেখলে, কিন্তু ও কোথায় গেলো? লিকে খুঁজতে চলে গেলেন স্যার জর্জ। ডি সৌউসা তার (জর্জ দিকে তাকিয়ে রইলো। আর পোয়ারো দেখতে লাগল ডি সৌউসাকে। পোয়ারো অনেকক্ষণ পর জিজ্ঞাসা করল, কতদিন পরে আপনার জ্যাঠাতুতো বোনের সঙ্গে দেখা হচ্ছে?
আমি ওকে শেষ দেখেছিলাম যখন ওর পনেরো বছর বয়স। তখন ওকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফ্রান্সের একটা কনভেন্টে। ছোটবেলায় ও দেখতে বেশ সুন্দর ছিল, একথা জানাল ডি সৌউসা, তারপর জিজ্ঞাসু চোখে পোয়ারোর দিকে তাকালো সে।
পোয়ারো জানালো, এখন উনি দারুণ সুন্দরী মহিলা।
জানতে চাইল যুবকটি, উনিই কি ওর স্বামী?
ভদ্রলোককে দেখে তথাকথিত ভালোমানুষ বলে মনে হয়, তবে মনে হয় ওর বিশেষ চাকচিক্য নেই। হ্যাটির উপযুক্ত স্বামী খুঁজে পাওয়াও খুব মুশকিল ছিলো। বলল ডি সৌউসা। কোনো মন্তব্য করল না পোয়ারো, চুপ করে রইল সে। ডি সৌউসা হেসে উঠে বলল, কিন্তু এখন এটা কোনো গোপন কথা নয়, হ্যাটির মানসিক বিকাশ ঘটেনি পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত। ওর মনটা ভীষণ চঞ্চল ছিলো।
এখনো কি ও সেইরকম আছে?
সন্তর্পণে পোয়ারো বলল, হ্যাঁ মনে হয় সেইরকম আছে। স্যার জর্জ তাদের কাছে এসে দাঁড়াল–এই অবসরে মিস ব্রেউইসকে সঙ্গে নিয়ে। মিসেস স্টাবস যে কোথায় আছেন আমি তা জানি না স্যার জর্জ। জানালো মিস ব্রেউইস। তাকে আমি শেষবার দেখেছিলাম ভবিষ্যত বক্তার টেন্টের কাছে। হ্যাঁ, তাও আধঘণ্টা হয়ে গেল। আচ্ছা তিনি কি এখন বাড়িতেও নেই?
পোয়ারো বলল, আচ্ছা এমনটা নয়তো যে, তিনি দেখতে গেছেন মিসেস অলিভারের মার্ডার হান্টের কাজ কতদূর এগোল? এটাও হতে পারে, আমি যেতে পারছি না এখানকার শো ছেড়ে, আর খুবই ব্যস্ত আমাদ্দা। আর আমি এখানকার ইনচার্জ। দয়া করে আপনি একটু সন্ধান করুন না মঁসিয়ে পোয়ারো। এখানকার প্রায় সমস্ত জায়গাগুলিই আপনি চিনে গেছেন। অনুরোধ করলো পোয়ারোকে স্যার জর্জ। অথচ পোয়ারো কতটুকুই বা জানে। বিড়বিড় করে সে নিজের মনে বলতে লাগলো, টেনিস কোর্ট, ক্যামেলিয়া গার্ডেন ফলি, নার্সারি-গার্ডেন বোড হাউসে…।