মিস ব্রেইসের মোটেই পছন্দ নয় লেডি স্টাবস-এর এই এলোথলো, নিরাসক্ত ভাবটা। স্যার জর্জের বিবাহের আগে যদি মিস ব্রেউইস সেক্রেটারি হত, তাহলে আসন্ন নবাগতের আগমনে সে নিশ্চয়ই বিরক্ত হত। পোয়ারো অবাকভাবে এ কথা ভাবতে লাগলো। লেডি স্টাবস হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো এবং বলল সে, আমার মাথা ব্যথা করছে, আমার ঘরে শুতে চললাম।
তার হাতের রুমালটা ফেলে গেল লেডি স্টাবস চলে যাওয়ার সময়। রুমালটা তুলে নিলো পোয়ারো নিঃশব্দে তাকে অনুসরণ করার সময়। সে তার হস্টেসকে সিঁড়ির সামনেই ধরল–বলল, আপনার রুমালটা আপনি ফেলে এসেছিলেন ম্যাডাম।
লেডি স্টাবল রুমালটা হাতে নেবার পর বলল, তাই নাকি? আমি সেটা ফেলে এসেছিলাম? ধন্যবাদ আপনাকে।
পোয়ারো বলল, আমার খুবই খারাপ লাগছে যে, আপনি কষ্ট পাবেন এজন্য, বিশেষভাবে যখন আপনার খুড়তুলো ভাই আসছে।
সঙ্গে সঙ্গে যেন মিসেস স্টাকস উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, না না, কখনই আমি ইটিয়েনকে দেখতে চাই না। সে করতে পারে না এমন কুকাজ নেই। পোয়ারো চলে আসার সময় দেখলো লেডি স্টাবস-এর কাঁধে হাত রাখলো ছুটে এসে মিঃ জর্জ, তারপর তাকে নিয়ে তাদের ঘরে অন্তর্হিত হলো।
ভালোভাবে তাকিয়ে চতুর্দিকে পর্যবেক্ষণ করে দেখে নিল পোয়ারো, কেউ তার দিকে মনোযোগী নয়। নিজেকে আড়াল করে নেওয়ার এই সুযোগ আছে। সে বাড়ির এককোণে টেরেসের সামনে এল তারপর সে নতুন এক নাটকের দর্শক হয়ে গেল।
অনিশ্চিত চোখের দৃষ্টি নিয়ে দুটি মেয়ে অরণ্য প্রান্তর থেকে বেরিয়ে এসে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল, তাদের পরিধানে শর্টস এবং চকচকে ব্লাউজ। গতকাল সে যাদের গাড়িতে লিফট দিয়েছিল, মনে হল তাদের মধ্যে একজন, সেই ইতালি মেয়েটি। স্যার জর্জ লেডি স্টাবস-এর শয়ন কক্ষ-এর জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে উঠলো মেয়ে দুটিকে, তোমরা অনাহুত, কোন অধিকারে তোমার এখানে প্রবেশ করেছ।
একজন বলল–এই পথেই তো ন্যাসকম্ব যাওয়া যায়। দয়া করে যেতে দিন আমাদের, একটি মেয়ে অনুরোধ করল।
পুনরায় স্যার জর্জ চিৎকার করে উঠলো, অনাহূত তোমরা। তোমরা অনধিকার প্রবেশকারী। কোনো পথ নেই এখান দিয়ে যাওয়ার। যে পথে তোমরা এসেছ সেই পথেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে।
তারা নিজেদের মধ্যে কিছু একটা আলোচনা করল বিদেশী ভাষায়। শেষ পর্যন্ত মেয়েটির মাথায় জড়ানো ছিল রয়্যাল ব্লু স্কার্ফ, তার সাথীর উদ্দেশ্যে সে বলে উঠল, আবার হোস্টেলে ফিরে যেতে হবে?
পোয়ারোর সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হতেই স্যার জর্জ বলে উঠলো, আসল গেটে তালা ঝোলানো আছে। অরণ্যপথে বেড়া ডিঙিয়ে চালাকি করে এইসব বিদেশিনীরা রাস্তা সংক্ষেপ করতে চায়, আমার বাড়ির ভিতর দিয়ে।–এটা কি সাধারণের চলার পথ? আমাদের কথা এরা বুঝতেই পারে না কারণ এরা সবাই বিদেশিনী। হয়তো ডাচ্ কিংবা অন্য জাতীয় কিছু হবে। পোয়ারো বলল, ওদের মধ্যে একজন জার্মান আর অন্যজন ইতালির মনে হয়। গতকাল আমি ইতালির মেয়েটিকে দেখেছিলাম স্টেশন থেকে আসার সময়ে।
জর্জ এই কথা বলতে বলতে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল, আচ্ছা হ্যাটি এরা কি যে কোনো ভাষায় কথা বলতে পারে? মনে হল তুমি কিছু বললে? বছর চোদ্দ বয়সের একটি স্বাস্থ্যবতী মেয়েকে গাইডের ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় পোয়ারো দেখতে পেল, যখন সে ঘুরে দাঁড়িয়ে মিসেস অলিভারকে খুঁজছিল। মিসেস অলিভার পরিচয় করিয়ে দিলো–এর নাম মারলিন। মারলিন চপলভাবে হাসল। বলল মেয়েটি, আমি সেই ভয়ঙ্কর শব। তবে আমি আমার শরীর থেকে এক ফোঁটাও রক্ত ঝরতে দেব না।
তাই নাকি? বিস্মিত হলো পোয়ারো। কেবলমাত্র আমার গলায় ফাঁস লাগাবে, আমার দেহে বিদ্ধ হবে নকল ছোরা–ক্ষতস্থান থেকে লাল রক্ত ঝরে পড়বে, অবশ্য আসল রক্ত নয়, ব্যস, এইমাত্র ব্যাপার।
মিসেস অলিভার বলল, এটা খুবই বাস্তবোচিত ব্যাপার দেখাবে– ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন এটা ভেবেছে। মারলিন মুখ গোমড়া করে বলল, অবশ্যই রক্ত ঝরাতে হবে খুনের কেসে এটাই আমার মনে হয়। পোয়ারোর দিকে তাকালো সে ঔৎসুক্য ভরে। প্রশ্ন করলো পোয়ারোকে, অনেক খুনের কেসে হয়তো আপনি দেখেছেন, তাই নয় কি? মেয়েটি মিসেস অলিভারকে উদ্দেশ্য করে জানাল উনি বলেছেন।
পোয়রো নম্রভাবে জানাল, একটি অথবা দুটি। তখনই সে দেখতে পেল তাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে মিসেস অলিভার। জিজ্ঞাসা করল, ঘটনাটা কি সেক্স-ম্যানিয়াক? আমি তাদের কথাবার্তা শুনেই বলছি আর কি। নিশ্চয়ই তুমি ঐরকম একজনের সঙ্গে মিলিত হতে চাইবে না? পোয়ারো জানতে চাইলো, কখনোই না, জানেন কেন? বললো মেয়েটি, এখানে একজন সেক্স-ম্যানিয়াকের সন্ধান পেয়েছিলাম–এটা আমি বিশ্বাস করি।
জঙ্গলে একটা মৃতদেহ দেখতে পান আমার ঠাকুর্দা। তিনি পালিয়ে আসেন ভীষণ ভয় পেয়ে। মৃতদেহটি ছিলো একজন মহিলার। তার কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি, কারণ আমার ঠাকুর্দা ছিলেন একজন সুযোগসন্ধানী। এই মুহূর্তে তার বিশ্রামের প্রয়োজন এই কথা মনে করে পোয়ারো মেয়েটিকে এড়িয়ে কোনোরকমে সেখান থেকে চলে এলে।
উৎসব মেলার উদ্বোধন করার কথা বেলা আড়াইটের সময় একজন চিত্রতারকার। আকাশের মেঘ সরে যাচ্ছে, বৃষ্টির সম্ভাবনাও ক্রমশঃ মিলিয়ে যাচ্ছে। উৎসব প্রাঙ্গণ জমজমাট বেলা তিনটের সময়। একে একে সবাই প্রবেশ-ফি দিয়ে ভিতরে ঢুকছে–সারিবদ্ধ লম্বা লাইন দিয়ে বাইরে গাড়িগুলো রয়েছে। দলে দলে আসছে ইয়ুথ হোস্টেলের ছাত্র-ছাত্রীরা। ফলে গেল মিসেস মাস্টারটনের ভবিষ্যৎবাণী। শয়নকক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো লেডি স্টাবস আড়াইটের ঠিক একটু আগে সুসজ্জিত পোশাকে, কালো রঙ-এর বিকট একটা খড়ের টুপি মাথায় দিয়ে। প্রচুর হীরের অলঙ্কার পরেছে সে।