পোয়ারো বলল, ম্যাডাম, আমি খুব খুশী। আপনি অবশেষে এখানে আপনার হাতে স্বর্গ পেয়েছেন।
মঁসিয়ে পোয়ারো এই পৃথিবী দয়ামায়াহীন আর এই পৃথিবীর লোকগুলো তার থেকেও বেশি খারাপ। আমি এসব কথা বলতে চাই না, কারণ তারা উদ্যম হারিয়ে ফেলবে। তবুও এটাই সত্যি এই পৃথিবী খুব নিষ্ঠুর এবং খারাপ।…মিসেস ফোলিয়াট তার লজে ঢুকে পড়ল পোয়ারোকে বিদায় জানিয়ে। তার বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে পোয়ারো তখন দাঁড়িয়ে রইল।
আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল এরকুল পোয়ারো কেতাদুরস্তভাবে। সে টয়লেট সেরে এসেছিল তার আগে বেশ ছিমছাম হয়ে। সে মনে রেখেছিল গোঁফে সুগন্ধী পমেও লাগাতে হবে। খুশী হলো সে আয়নার নিজের চেহারা দেখে তাকে এখন ঠিক তেমনই দেখাচ্ছে, যেমনটি সে আশা করেছিল। তারপর সে নিচে নামে সিঁড়ি বেয়ে। নিজের মনে ভাবলো সে যখন খানসামাকে দেখতে পেল-খানসামার লেখাও হতে পারে অথবা হাউস-কীপারের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেল করা চিঠি…। অবশ্য এ কথা মনে হয় যে খানসামার লেখা চিঠিও হতে পারে, অবাক হয়ে ভাবলো পোয়ারো, জীবন থেকে কি তার চরিত্রগুলি সৃষ্টি করেছে মিসেস অলিভার? যখন পোয়ারো মিস ব্রেউইসকে অতিক্রম করে আসছিল, তখন সে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় প্রশ্ন করলো, আচ্ছা, মিস আপনাদের এখানে কী হাউস-কীপার আছে?
না না, মিঃ পোয়ারো আমিই এখানে একাধারে সেক্রেটারি এবং হাউস-কীপার একথা বলতে পারেন। মেয়েটি তিক্ত হাসি উপহার দিলো।
পোয়ারো যেন কী চিন্তা করল, তারপর বলল, আচ্ছা আপনিই তাহলে হাউস-কীপার? সে ভাবলো, মেয়েটিকে দেখে ভাবা তো দূরের কথা; কল্পনাও করা যায় না যে সে লিখতে পারে ব্ল্যাকমেল করা চিঠি।
পরবর্তী প্রশ্ন পোয়ারোর, আপনাদের খানসামার নামটা বলুন তো?
মিস ব্রেউইস একটু অবাক হয়েই তার দিকে তাকাল, উত্তর দিল হেনডেন।
পেয়ারো তার মনের ভাব বুঝতে পেরে বলল, কেন জিজ্ঞাসা করছি জানেন, আমি যেন তাকে আগে কোথাও দেখেছি।
মিস ব্রেউইস উত্তর দিল–সেটা অবশ্য হতে পারে কারণ কেউ এক জায়গায় কখনো থাকে না চার মাসের বেশি।
তারা ড্রয়িংরুমে এসে উপস্থিত হলো। কেমন যেন একটু অস্বাভাবিক দেখাচ্ছিলো স্যার জর্জকে সেখানে ডিনার জ্যাকেট পরা অবস্থায়। যেন একটা বাতিল যুদ্ধ জাহাজ মিসেস অলিভারকে দেখে মনে হচ্ছিল।
ভোগ-এর ফ্যাশন-এর পাতায় মনোযোগ সহকারে লেডি স্টাবস ঝুঁকে পড়ে দেখছিল। ড্রয়িং রুমে তখন মিঃ আলেক, শেলি লেগি এবং জিম ওয়ারবারটন ছিলেন। স্যার জর্জ সকলকে সতর্ক করে দিয়ে বলল, অনেক কাজ এখনো বাকি, আগামীকাল সান্ধ্য উৎসবে ভবিষ্যৎবক্তার বড় কার্ড এবং এখনো অনেক নোটিস ছাপাতে হবে। আমরা যেন কি নাম দেব:
ম্যাডাম জুলেকা? এসমারাল্ডা নাকি রোমানি লেইগি অথবা জিপসি কুইন?
শেলি বলল, প্রাচ্যের স্পর্শ, জিপসির নাম শুনলে ঘৃণা করবে চাষবাসের জায়গায়।
বেশ মনোমতো নাম-জুলেকা।
আর বেশি পছন্দসই নাম হতে পারে ক্লিওপেট্রা জ্বলেকার তুলনায়।
হেডেন দরজার সামনে এসে দাঁড়াল এবং জানাল, ভদ্রমহিলাগণ, আপনাদের নৈশ ভোজ প্রস্তুত হয়ে গেছে। তারা ডাইনিংরুমে গিয়ে জমায়েত হলো। সারিবদ্ধভাবে মোমবাতি জ্বলছিলো লম্বা টেবিলে। তাদের হোস্টেস-এর দুপাশে বসে ছিল, আলেক আর ওয়ারবারটন। পেয়ারো স্থান নির্বাচন করেছিলেন মিসেস অলিভার আর ব্রেউইস-এর মাঝখানে। খুবই কম কথা বলছিল মিসেস অলিভার। আর লেডি স্টাবসও নীরব ছিল। তারা ডাইনিংরুম থেকে বেরিয়ে এলো নৈশভোজের পর।
লেডি স্টাবস তন্দ্রালু দৃষ্টিতে জর্জের উদ্দেশ্যে বলে উঠল, জর্জ আমি ভীষণ ক্লান্ত, আমি বিছানায় যাচ্ছি, তুমি কিছু মনে করো না।
হ্যাটি, ঠিক আছে, তুমি যাও একখানা সুন্দর ঘুম যেন তুমি উপভোগ করো। যাতে আগমীকালের জন্য সতেজ হয়ে ওঠো।
এই কথা বলে স্যার জর্জ হাল্কা চুম্বন করলো লেডি স্টাবসকে। সকলকে শুভরাত্রি জানিয়ে হাত নেড়ে ওপরে উঠে গেল লেডি স্টাবস।
ব্রেকফাস্ট-এর টেবিলে নিচে নেমে এল পোয়ারো পরদিন সকাল সাড়ে নটায়। সেখানে অন্যান্যরা পূর্বেই হাজির ছিলো।
ডাকে সেইমাত্র চিঠিগুলো এসে পৌঁছাল। অসংখ্য চিঠি মিস ব্রেউইস-এর সামনে। ব্যক্তিগত মার্কা স্যার জর্জ-এর চিঠিগুলো ছাড়া বাকিগুলো সে নিজেই খুলছিলো।
তিনখানা চিঠি লেডি স্টাবস-এর। বেশ কয়েকটা বিল পাওয়া গেলো দুটি খাম থেকে।
হঠাৎ সে অস্ফুট চিৎকার করে উঠল, আরেতৃতীয় খামটি খোলার পর। সবাই অবাক চোখে তার দিকে তাকাল এমনভাবে শব্দ করে উঠেছিল। বলল লেডি স্টাবস, ইটিয়েনের চিঠি। সে আমার খুড়তুতো ভাই, তার চিঠি। সে এখানে আসছে ইয়েট।
স্যার জর্জ চেয়ে নিল চিঠিটা লেডি স্টাবস-এর হাত থেকে, তারপর পড়ল চিঠিটা। এই ইটিয়েন ডি সৌসা কে? তুমি বললে না তোমার খুড়তুতো ভাই, জিজ্ঞাসা করল স্যার জর্জ।
হ্যাঁ আমার তাই মনে হচ্ছে, আমার দ্বিতীয় খুড়তুতো ভাই। অবশ্য বিশেষভাবে তার কথা আমার মনে নেই, কারণ আমি তখন ছোট ছিলাম। জানালেন মিসেস স্টাবস।
বলছ তোমার মনে পড়ছে না, তাতে কি হল? আমরা অবশ্যই তাকে অভ্যর্থনা জানাব, বেশ আন্তরিকভাবেই স্যার জর্জ জানালো, আবার বলল, এই উৎসবের দিনেই সে আসছে, তা ভালোই হলো।
আর কোনো কথাই বলল না লেডি স্টাবস, সে তার কফির পাত্রে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখলো। পোয়ারো তখন সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লেডি স্টাবসকে লক্ষ্য করছিলো, যখন সকলে আসন্ন উৎসবের আলোচনায় ব্যস্ত। এটাই তার বিস্ময় কোন লেডি স্টাবস-এর মনে এখন কোনো ভাবের খেলা চলছে। তাদের দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেল ঠিক সেই মুহূর্তেই। পোয়ারো চমকে উঠলো তার চোখের ধারালো দৃষ্টি দেখে। তবে চোখাচোখি হতে উধাও হয়ে গেল তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, এবার কোমল এবং সজাগ তার চোখের দৃষ্টি …