মঁসিয়ে পোয়ারো ধন্যবাদ, এটা কিন্তু বেশি ভারী নয়।
আপনার বাড়িতে এটা পৌঁছে দিই না কেন? প্রশ্ন করল পোয়ারো। কাছাকাছি থাকেন নাকি আপনি?
আমি থাকি সামনের গেটে পাশের লজ-এ। আমাকে অনুগ্রহ করে ভাড়া দিয়েছেন স্যার জর্জ বলল, মিসেস ফোলিয়াট।
পোয়ারো অন্য প্রসঙ্গে গেল, লেডি স্টাবস অনেক কমবয়সী তার স্বামীর থেকে তাই না?
হ্যাঁ, প্রায় তেইশ বছরের ছোট হবে, বললো মিসেস ফোলিয়াট। হ্যাটি বড় ভালো মেয়ে।
পোয়ারো এরকম একটা জবাব আশা করেনি। বলতে লাগলো মিসেস ফোলিয়াট, খুব ভালো করেই ওকে আমি জানি। ও কিছুদিন আমার কাছে যত্নেই ছিল। সেটা খুব করুণ কাহিনী। ওর অভিভাবকের এস্টেট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে। চিনির এস্টেট। সেখানে একবার দারুণ ভূমিকম্প হয়। তার ফলে শুধু ওদের ঘরবাড়িই ধ্বংস হয়নি। তখন ও ওর বাবা-মা ভাই-বোনদের হারায়। প্যারিসের একটা কনভেন্টে হ্যাটি তখন পড়াশোনা করত। হঠাৎ সে স্বজনবিহীন হয়ে পড়ে। তাকে পরামর্শ দেয় তার এক্সিকিউটররা। বিদেশে কিছুদিন কাটাবার পর সেখানে ফিরলে, তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় সেখানকার সমাজের কাছে। আমি তখন রাজী হয়ে যাই ওর দায়িত্ব নিতে। শুষ্ক হাসি হেসে মিসেস ফোলিয়াট আবার বলল, নিজেকে আমি প্রয়োজন হলে স্মার্ট করে তুলতে পারি। আমার যোগাযোগও ছিল বেশ কয়েকজন লোকের সঙ্গে প্রাক্তন গভর্নর আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, তোমার কাছে আমি সত্যি কথাই বলছি।
পোয়ারো বলল,-ম্যাডাম, সেটাই তো খুব স্বাভাবিক, কারণ আমার বোধশক্তি আছে।
মানিয়ে নিয়েছিলাম বেশ ভালোভাবেই তবে খুব কষ্টের মধ্যে সময় কাটছিল। আমার স্বামী মারা যান যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে। নেভিতে যোগদান করে আমার বড় ছেলে, সে তার জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দেয়। কেনিয়া থেকে ফিরে ছোট ছেলে কমান্ডের সঙ্গে যোগ দেয়, তারপর ইতালিতে সে খুন হয়। তার ফলে এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে হয়, এতগুলো মৃত্যুর ডেথ–ডিউটি দিতে গিয়ে। আমার তখন আর্থিক অবস্থা সংকটময় ছিল। আমার খুব প্রিয় ছিলো হ্যাটি। বেশ কিছুদিন যেতে না যেতেই, আমি বুঝতে পারলাম, হ্যাটির কোনো দৃঢ়তা নেই। মঁসিয়ে পোয়ারো বুঝলেন, তার কোনো অক্ষমতা ছিল না মানসিক দিক থেকে, অর্থাৎ সে সহজ সরল প্রকৃতির মেয়ে, গ্রাম্য মানুষেরা এরকমই বলে থাকে। ঈশ্বরের আশীর্বাদ ভাবলাম টাকা না থাকাটা। যদি সে তার বাবার অগাধ সম্পত্তির অধিকারিণী হত তাহলে অনেক অসুবিধা হত। সে পুরুষদের কাছে আকর্ষণীয়। তার দিকে অবশ্যই যে কোনো পুরুষ নজর দিতে পারে। হ্যাটি সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি বিক্রি করার পর দেখা যায়, আখের খেত খামার (যা থেকে চিনি তৈরি হত) নষ্ট হয়ে গেছে, তার দেনাই বেশি হয়ে গেছে কোম্পানির আয়ের থেকে। তার প্রেমে পড়ে যায় স্যার জর্জ আর তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়, এজন্যই তাকে ধন্যবাদ জানাতে হয়।
পোয়ারো বলল, যথাসম্ভব, নিশ্চয়ই এটা একটা সমাধান।
মিসেস ফোলিয়াট বলল, স্যার জর্জ, বিত্তবান এবং ভদ্রলোক অতএব সিদ্ধান্ত নেওয়া যাক। তাদের দুজনের বয়েসের যে বিরাট পার্থক্য, তাতে সে তার স্ত্রীর কাছ থেকে দেহ মনের মিলন চাইবে এটা আমার মনে হয় না। ওদিকে হ্যাটি দারুণ খুশী তাকে স্বামী হিসাবে পেয়ে, কারণ পোশাকের প্রাচুর্য্য, খুশীমতো অলঙ্কার সব সে পেয়ে যাচ্ছিল, আর সে তো এইরকমই চেয়েছিল। আমি খুব খুশী যেহেতু সে তার মনের মতো স্বামী হিসাবে জর্জ স্টাবসকে পেয়েছে, এটা আজ আমি স্বীকার করছি।
যদি স্বামী বয়স্ক বলে হ্যাটি সুখী না হতো, তবে তার দুঃখের সীমা থাকত না, আমার এই আশঙ্কা ছিলো। আপনাকে আমি আগেই বলেছি, ওর মতো সুখী, আর কে আছে পৃথিবীতে, সেটা এখন বুঝতে পারছি।
পোয়ারো মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল, আপনি উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছিলেন মেয়েটির জন্য আমারও তাই মনে হচ্ছে। ঠিক ইংলিশ রোমান্টিকের মতো বলছি না, বিয়ের ভালো ব্যবস্থা করতে হলে, সকলকে রোমান্স-এর থেকে অন্য আরো কিছু ভেবে দেখতে হবে। অত্যন্ত সুন্দর জায়গা এই ন্যাসে হাউস।
তাই তো! আমি খুব খুশী স্যার জর্জ এই বাড়িটা কেনাতে। বলল মিসেস ফোলিয়াট, থামল একটু, আবার বলল, তাদের জমি বাড়ি বিক্রি করে চলে যায় আমাদের প্রতিবেশী ফ্রেবারসরা। সেখানে এখন একটা ইয়ুথ হোস্টেল তৈরি হয়েছে। সেখানে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে স্কুলের ছেলেমেয়েদের।
তরুণ যুবক-যুবতীরা না আমাদের এখানে প্রবেশ করে আমাদের শান্তি নষ্ট করে ফেলে, এটাই আমার ভয়। ওদের এখানে ঢুকতে দেখলে স্যার জর্জ ভীষণ রেগে যায়। যদিও তারা এখানে ঢুকে বাগানের গাছপালা নষ্ট করে। তবুও একথা ঠিক যে, ওরা আসে ফেরি ধরার জন্য নদীর পথ সংক্ষিপ্ত করতে।
তারা এসে পড়েছিল মিসেস ফোলিয়াটের লজ-এর সামনে কথা বলতে বলতে। সাদা ছোট এভনো বাড়ি। তার হাত থেকে বাস্কেটটা ফিরিয়ে নিয়ে মিসেস ফোলিয়াট ধন্যবাদ জানালো। দুঃখ করে মিসেস ফোলিয়াট বললেন চলে আসার সময় আমরা এখন একজন যুবককে পেয়েছি প্রধান মালী হিসাবে, তার স্ত্রী যুবতী, আর নিশ্চয়ই ইলেকট্রিক আয়রন, আধুনিক কুকার আর টিভি আছে এই যুবতী মেয়েটির…সবাই সময়ের সঙ্গে তাল রেখেই চলে..সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখানে পুরনো দিনের এস্টেটের আগেকার খুব কম লোকই আছে এখন…সব নতুন মুখ এখানে।