মুখে আঙুল স্পর্শ করে অলিভার বলে উঠলেন, চুপ এদিকেই আসছে যেন কে
মিস ব্রেউইস এসে দাঁড়ালেন দরজার সামনে।
–তাই তো, আপনি এখানে মাঁসিয়ে পোয়ারো?
আর আমি চারিদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছি আপনাকে ঘর দেখানোর জন্য, বলল ব্রেউইস।
মিস ব্রেউইস পোয়ারোর ঘর দেখানোর সময় কথা প্রসঙ্গে বলল, মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার পছন্দ হয়েছে তো, দোতলার নদীর ধারে এমন সুন্দর ঘর। দারুণ পছন্দ হয়েছে, হাসতে হাসতে বলল পোয়ারো। ভাবছি আমার ধন্যবাদটা কাকে জানাব, আমার আকর্ষণীয় হোস্টেলকে না আপনাকে?
বেশ একটু তেতো গলায় মিস ব্রেউইস বলল, আকর্ষণীয়!
হ্যাঁ, তা ঠিক। লেডি স্টাবস তার বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেন নিজের সৌন্দর্য পরিস্ফুট করে তোলার জন্য।
মহিলা সাজসজ্জা-বিলাসী-কৌতুক-এর স্বরে বলল পোয়ারো।
পোয়ারোর চোখে দৃষ্টি স্থির রেখে নীরস কণ্ঠে বলল মিস ব্রেউইস, আপনার যেমন বক্তব্য…
লেডি স্টাবস বেশ ভালোভাবেই জানেন তিনি কি করছেন। আপনি যেমন বললেন, সাজগোজ-বিলাসী মহিলা, তাছাড়াও বেশ চতুর মহিলা তিনি!
যখনই মিঃ পোয়ারো তার দিকে বিস্মিত চোখে তাকাতে যাবে, তার পূর্বেই দ্রুত পায়ে মেয়েটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। পোয়ারো অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো, ব্রেউইস একজন রীতিমতো অভিজ্ঞ মেয়ে হয়ে তার মতো একজন আগন্তুক-এর কাছে কি করে খোলাখুলিভাবে সব কিছু বলল, বিশেষজ্ঞ লেডি স্টাবস সম্পর্কে? অভিজ্ঞতা থেকে সঙ্গে সঙ্গে পোয়ারো বুঝতে পারল যে, সে একজন বিদেশী। বিদেশীদের কাছে কিছু প্রকাশ করাটা ইংরেজরা ধর্তব্যের মধ্যে চিন্তা করে না।
মনোসন্নিবিষ্ট করে পোয়ারো ভাবছিলো, যেন হুঁশ ফিরে পেয়ে সে এসে দাঁড়ালো জানালার সামনে। এই সময়ে সে দেখল লেডি স্টাবস মিসেস ফোলিয়াটের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসছেন। কিছু দূরে ম্যাগনোলিয়া গাছের নিচে দুজনে কিছুক্ষণ কথা বলার পর মিসেস ফোলিয়াট মাথা নেড়ে বিদায় নিল তার কাছ থেকে। ফোলিয়াটের হাতে ছিল গ্লাভস এবং বাগান পরিচর্যা করার ঝুড়ি। অন্যমনস্কভাবে গাছ থেকে একটা ম্যাগনোলিয়া ফুল তুলে লেডি স্টাবস নদীর দিকে এগিয়ে গেল ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে। মাত্র একবার সে পিছন ফিরে তাকাল দৃশ্যের বাইরে চলে যাওয়ার আগে। মাইকেল ওয়েম্যানকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল ওদিকের ম্যাগনোলিয়া গাছের পেছন থেকে। থামল সে একমুহূর্তের জন্য তারপর এগিয়ে গেল নদীর দিকে।
পোয়ারো চিন্তা করল সুদর্শন এই তরুণটি, কর্মকুশলও বটে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে স্যার জর্জ স্টাবস-এর থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয়, ভাবলো সে। তাহলে এর অর্থ কি, যদি তাই হয়? এই যে বৈষম্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তাহলে তাদের জীবনের কি পরিণতি হতে পারে? স্বামী ধনবান, মাঝবয়স্ক, আকর্ষণহীন; আর স্ত্রী সুদর্শনা যৌবনবতী যার মানসিক বিকাশে এখনো পূর্ণতা আসেনি–এরকম এক রমণীর কাছে একজন বিচক্ষণ সুপুরুষ যুবকের যোগাযোগের কি অর্থ হতে পারে। এরকুল পোয়ারো মিসেস অলিভারের টেলিফোনে জরুরী তলবের পিছনে কিছু একটা ইঙ্গিত বহন অনুভব করল। মিসেস অলিভারের অনুমান ক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রখর তবুও…।
নিজের মনে অস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করে বলল পোয়ারো। কিন্তু যাই হোক, আমি কোনো পরামর্শদাতা নই এসব অবৈধ ঘটনার ব্যাপারে। কোথায় যেন একটা এলোমেলো কিছু ঘটতে যাচ্ছে এটাই অলিভারের ধারণা। সত্যিই কি অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে যাচ্ছে? মিসেস অলিভার নিজেই একা, সব কিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলে। এরকম লেখিকা যে কি করে নিপুণভাবে গোয়েন্দা কাহিনী লিখে থাকে, পোয়ারো একথাটা বুঝতে পারে না। তবুও হঠাৎ এক একটি সত্য উদঘাটন করে, মহিলাটি তাকে এক একসময় চমকে দেয়।
পোয়ারো স্বগতভাবেই বললো, সময় খুব সংক্ষিপ্ত।
২. অঘটন ঘটতে যাচ্ছে
এখানে সত্যিই কি কোনো অঘটন ঘটতে যাচ্ছে মিসেস অলিভারের বিশ্বাস মতো? আমার বিশ্বাস মতো, ঠিক সেটাই। কিন্তু সেই অঘটন কি ধরনের? এমন কে আছে এখানে যে এব্যাপারে আমাকে একটু ইঙ্গিত দিতে পারে? আমি ভালোভাবেই জানতে চাই এই বাড়ির লোকজনদের। এখানে কে কে আছে যারা আমাকে তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর দিতে পারে? পোয়ারো মাথায় টুপি চাপিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে শুরু করল কথাটা তার মনে প্রতিফলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। মাস্টারটনের গাঢ় কণ্ঠস্বর ভেসে এলো তার কানে ঠিক সেই সময়েই, সামান্য তফাৎ থেকে। স্যার জর্জের প্রেমাদ্ভুত উচ্চ কণ্ঠস্বর শুনতে পেল অনতিদূরে।
জর্জ বলছে, শোন শেলি, ওসব লুকোচুরি খেলার কথা ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে আনতে চাই আমার হারেমে অর্থাৎ অন্তঃপুরে। আগামীকাল আসব আমি। ভাগ্য গণনা করব।
কি বললে আমাকে তুমি? অভিনয়ের ভান করে বলল শেলি।
এগিয়ে আসতে শুনলো ওদের পায়ের শব্দ পোয়ারো, সুবিধামতো পাশের দরজার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো। ততক্ষণে তার বোঝা হয়ে গেছে স্যার জর্জ এবং মিসেস মাস্টারটনের গোপন সম্পর্কের কথা।
মিসেস অলিভারের আশঙ্কা যদি অবশ্য সত্যে পরিণত হয়, তবে এটা একটা আগাম ক্ল, সফল হল তার কৌশলী অভিযান। পোয়ারো এসে দাঁড়াল মিসেস ফোলিয়াট-এর পাশে একটা খুশীর আমেজ নিয়ে। যেন তার হাতের ঝুড়িটা নিতে যাচ্ছে এমন ভঙ্গিমা করে বলল সে, ম্যাডাম, যদি অনুমতি দেন…।