অ্যানার চোখমুখ বিবর্ণ হয়ে উঠলো, সত্যিই এর কি কোনো প্রয়োজন আছে?
আমি বলব নিশ্চয় আছে, আইনের কত মারপ্যাঁচ আছে।
রোডা বললেন– এই নোংরা ঘটনাটা অ্যানাকে শেষ করে দেবে।
মেজর ডেসপার্ড ঘাড় সায় দিলেন, সত্যিই পাশবিক কাণ্ড! বিশেষ করে অল্পবয়সী তরুণীকে এর মধ্যে যদি টানা হয়।
রোডা আচমকা প্রশ্ন করলেন, আপনার কাকে সন্দেহ হয়? ডাক্তার রবার্টস না মিসেস লরিমা?
ডেসপার্ডের উত্তর, প্রমাণ না পেলে কোনো কিছুই বলা সম্ভব নয়।
রোডা সায় দিলো, আপনার কথা অস্বীকার করবো না। আচ্ছা সুপারিন্টেন্টে ব্যাটেল কিরকম লোক?
তিনি খুব বিচক্ষণ ব্যক্তি, কর্মদক্ষতাও অসাধারণ। ডেসপার্ড এবার উঠে দাঁড়ালেন, এবার আমি বিদায় নেবো।
অ্যানাও আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে করমর্দনের জন্যে হাত বাড়ালেন।
এবার অ্যানা একা ডেসপার্ডকে এগিয়ে দিতে গেলেন, যখন ফিরে এলেন রোডা তখন খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
শ্ৰীমতী অলিভারকে আমার একদম পছন্দ হয় না, ওঁকে দেখার পরেই মনে কেমন খটকা লেগেছে। গোপন কি উদ্দেশ্য নিয়ে যে উনি এখানে এসেছিলেন…?
মেয়েরা তো মেয়েদের সন্দেহ করবেই, এতো চিরকালের প্রথা! মেজর ডেসপার্ডও তো মাথায় কোনো মতলব নিয়ে এখানে আসতে পারেন?
নিশ্চয় না অ্যানা প্রতিবাদ করলেন, কিন্তু রোডা দেখেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠলেন।
.
১৪.
মিঃ ব্যাটেল মিস মেরিডিথের সঙ্গে দেখা করবার আগে তিনি এই অঞ্চলের আরো লোকের সঙ্গে দেখা করেছেন। আর এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য অ্যানার সম্বন্ধে খবর সংগ্রহ করা।
মিঃ ব্যাটেলের পক্ষে এই কাজটা কষ্টসাধ্য নয়। তিনি প্রকৃত পরিচয় সর্বদা গোপন করে নানারকম খবর সংগ্রহ করেন। এই মুহূর্তে তিনি একজন বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির লোক বলে পরিচয় দিয়েছেন।
ওয়েনডন কুটিরের কথা বলছেন? হ্যাঁ ঠিকই, সার্জারি রোডের ওপর, গেলেই আপনার নজরে পড়বে। ওখানে দুজন তরুণী বাস করেন একজন মিস দোয়স অপরজন মিস মেরিডিথ। দুজনে খুব ভালো মেয়ে, কথা প্রসঙ্গে মিঃ ব্যাটেল অবশেষে মিসেস অসওয়েলের সন্ধান পেলেন, তিনি ঐ কুটিরে ঠিকের কাজ করেন। ওয়েনডনকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, মেয়ে দুটির স্বভাবচরিত্র খুব ভালো, সবসময় নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টায় মেতে আছে।
মিঃ ব্যাটেল সম্ভাব্য সমস্ত স্থানেই ঘুরে বেড়ালেন। এদিক ওদিক থেকে খবর যা সংগ্রহ করলেন তাও খুব নিরাশ হবার মতো নয়। সমস্ত তিনি মনের মধ্যে গেঁথে রাখলেন। মাঝে মধ্যে দু-একটা রহস্যময় কথাও টুকে নিলেন তার ডায়েরীতে।
অবশেষে সন্ধ্যে আটটা নাগাদ কুটিরে হাজির হলেন। বেল টিপতেই একটি দীর্ঘাকৃতি মেয়ে এসে দরজা খুলে দাঁড়ালেন। পরনে কমলা রঙের ফ্রক। তন্বী এবং সুন্দরী।
মিস মেরিডিথ কি এখানে থাকেন? প্রশ্ন করলেন ব্যাটেল। তাকে বেশ গম্ভীর বলে মনে হলো।
হ্যাঁ…আপনি…?
দয়া করে তাকে গিয়ে বলুন, মিঃ ব্যাটেল একবার দেখা করতে চান।
আসুন, ভেতরে আসুন।
মিস দোয়সের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটেল ভিতরে প্রবেশ করলেন। মিঃ ব্যাটেল দেখা করতে এসেছেন, রোডা অ্যানাকে জানিয়ে দিলেন। অ্যানা এগিয়ে এসে করমর্দন করলেন।
তদন্তের কাজ কতদূর এগিয়েছে? তেমন আশাপ্রদ কিছু জানতে পারলেন?
খুব আশাপ্রদ বলা যায় না তবে এগোচ্ছে। আমরা ডাক্তার রবার্টসের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। মিসেস লরিমার সঙ্গেও কথাবার্তা হয়েছে, এখন শুধু আর মেজর ডেসপার্ড বাকি।
বলুন কি জানতে চান, অ্যানা মৃদু হেসে বললেন।
এই আপনার আত্মপরিচয় আর কি।
আমি নিজেকে ভদ্র সভ্য বলেই জানি। আমার জন্ম হয়েছিলো ভারতবর্ষের এক শহরে। কোয়েট্টায়। আমার বাবা মেজর মেরিডিথ। এগারো বছর বয়সে মা গত হলেন। বাবা যখন অবসর নিলেন আমার বয়স তখন পনেরো। আঠারো বছর বয়সে বাবা মারা যান। এরপর একটা চাকরি নিতে বাধ্য হলাম।
আচ্ছা মিঃ শ্যাতানার সঙ্গে কিভাবে আপনার পরিচয় হলো?
অ্যানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বলার মতো কিছু নেই, হোটেলের অন্যান্য ট্যুরিস্টদের সঙ্গে যেভাবে আলাপ হয় সেই রকমই। মিঃ শ্যাতানাকে আমি একদম পছন্দ করতাম না। কিন্তু তিনি আমার প্রতি খুবই ভদ্র ব্যবহার করতেন। এই মাত্রাতিরিক্ত ভদ্রতাই আমার অস্বস্তির কারণ।
আচ্ছা এবার আমি উঠি, শুভরাত্রি বলে মিঃ ব্যাটেল বিদায় নিলেন।
চেয়ারে বসে অ্যানা অলসভাবে হাই তুললেন।
.
১৫.
মেজর ডেসপার্ড হোটেল থেকে বেরিয়ে বাস স্টপেজে এসে দাঁড়ালেন তারপর একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়লেন।
জানলার ধারে একটা সীট দখল করলেন।
ডেসপার্ড বসে আছেন ইতিমধ্যে তিনি দেখলেন মঁসিয়ে পোয়ারে বসে আছেন। হাসিমুখে ডেসপার্ড ও মিঃ পোয়ারো কিছু কুশল বিনিময়ের পর আসল কথায় এলেন।
মেজর ডেসপার্ড বললেন, আপনার রেকর্ড তো মারাত্মক রকমের ভালো।
আচ্ছা মিঃ শ্যানার খুনের বিষয় কি তদন্ত করছেন?
না সরকারী ভাবে কেউ আমাকে নিয়োগ করেনি কিন্তু তবুও আমি নিজে থেকে কেসটা নিতে বাধ্য হয়েছি, কারণ হত্যাকারী আমার ক্ষমতাকে যে ব্যঙ্গ করে, এই ঘটনা তারই প্রকাশ।
কেবল আপনাকেই নয় গোটা স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের চোখের সামনে এই অপকীর্তি সাধিত হয়েছে।
ঠিক, আপনার মতো একজনকেই আমি খুঁজছিলাম, যার নজর তীক্ষ্ণ এবং স্মৃতিশক্তিও প্রখর। ডাক্তার রবার্টসকে আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম, কোনো ফল পাইনি। মিসেস লরিমাও আমায় হতাশ করেছেন। এবার আপনাকে চেষ্টা করে দেখি।