শ্ৰীমতী অলিভার অ্যানা মেরিডিথের বাড়িতে এলেন, ভালো আছেন তো, মিস মেরিডিথ? আমাকে চিনতে পারছেন নিশ্চয়?
নিশ্চয় পারছি! অ্যানা মেরিডিথ করমর্দনের জন্যে দ্রুত হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু তার চোখের তারায় পলকের জন্যে একটা আতঙ্ক ফুটে উঠলো। যাইহোক সংযত হয়ে বলে উঠলেন, এই হচ্ছে আমার বন্ধু মিস দোয়স আমরা দুজনে একসঙ্গে থাকি।
শ্ৰীমতী অলিভার মাথা নাড়লেন, তারপর মেরিডিথের দিকে ফিরে বললেন, আমার অনেক কথা আছে কোথাও বসতে পারলে ভালো হতো।
নিশ্চয় চলুন, ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসি। শ্রীমতী অলিভার একটি সৌখিন চেয়ারে গিয়ে বসলেন। এবার কোনো ভূমিকা না করে বললেন, গতদিনের সেই নৃশংস খুনটার সম্পর্কে আলোচনা করতেই আজ এখানে এসেছি। আমাদের এ ব্যাপারে কিছু করা উচিত। তিনি দৃঢ়স্বরে ঘোষণা করলেন, এই হত্যা ডাক্তার রবার্টসই করেছেন। এখন শুধু মাথা ঠান্ডা রেখে প্রমাণ খুঁজে বার করতে হবে।
কিন্তু সেটা কি উপায়ে? সংশয়ের সুরে মনের ভাব ব্যক্ত করলেন মেরিডিথ।
শ্ৰীমতী অলিভার বললেন, আপনি নিশ্চয়ই চান না আপনাকে কেউ খুনী বলে সন্দেহ করুক।
মেরিডিথ শান্ত কণ্ঠে বললেন, আমি এখনো বুঝে উঠতে পারছি না আপনি কেন আমার কাছে এসেছেন।
তার কারণ, আমার মতে অন্য দুজনের সম্বন্ধে কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু একজন সুন্দরী তরুণীর কথা সম্পূর্ণ আলাদা। তার নামে বাজে কথা রটলে অনেক খেসারত দিতে হবে। আর মেজর ডেসপার্ড তো পুরুষমানুষ আত্মরক্ষায় যথেষ্ট সক্ষম। যত চিন্তা কেবল আপনাকে নিয়ে।
আপনি সত্যিই ভারি দয়ালু!
ব্যাপারটা খুবই সঙ্কটময়। রোডা মন্তব্য করলেন।
নিশ্চয়ই সে কথা আর বলতে? শ্রীমতী অলিভার উত্তেজিত হয়ে বললেন। এইরকম প্রত্যক্ষ খুনের সংস্পর্শে ইতিপূর্বে আমি কোনোদিন আসিনি।
মিস কৌতূহলী হয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেন, আচ্ছা, আপনি এই কর্তৃত্বে থাকলে কি করতেন?
আমি সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার রবার্টসকে গ্রেপ্তার করতাম।
তা ঠিক! আচ্ছা কেনই বা ডাক্তার রবার্টস মিঃ শ্যাতানাকে খুন করতে যাবেন? এ বিষয়ে আপনার কি ধারণা?
শ্ৰীমতী অলিভার বললেন, অসংখ্যা ধারণা আমার। যেমন শ্যাতানা হয়তো রবার্টসের কোনো না কোনো আত্মীয়াকে পথে বসিয়েছিলেন। রবার্টস তার প্রতিশোধ নিলেন। আবার এমনও হতে পারে মিঃ শ্যাতানা হয়তো ডাক্তার রবার্টসকে অনেক টাকা ধার দিয়েছিলেন। এখন সেটা পরিশোধ করে দিতে বলেছিলেন সেইজন্য ডাক্তার রবার্টস খুন করেছেন। অথবা রবার্টস হয়তো গোপনে দুটি বিয়ে করে থাকবেন। শ্যাতানা হয়তো সেটা জানতে পেরে গেছেন। এই কারণে আরও দৃঢ় বিশ্বাস ডাক্তার রবার্টসই মিঃ শ্যানার হত্যাকারী।
ডাক্তার রবার্টস কোনো পেশেন্টকে বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে মারতে কোনো অসুবিধাই ভোগ করবেন না।
ইতিমধ্যে অ্যানা কথার মাঝখানে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন, মিঃ শ্যাতানা একবার কথা প্রসঙ্গে ল্যাবরেটরির বিষয়ে কি একটা মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এমন ধরনের অনেক বিষ আছে যা নাকি ডাক্তারী পরীক্ষাতেও ধরা পড়ে না।
বাইরের বাগানে কার পদশব্দ পাওয়া গেলো। শ্রীমতী অলিভার ঘাড় ফিরিয়ে সেদিকে তাকালেন। দেখা গেলো মেজর ডেসপার্ড মন্থর পদক্ষেপে এগিয়ে আসছেন।
.
১৩.
মেজর ডেসপার্ড একটু লাজুক ভঙ্গিতে বললেন, আসময়ে আপনাকে বিরক্ত করবার জন্য আমি খুবই দুঃখিত, মিস মেরিডিথ। এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তাই ভাবলাম আপনার সঙ্গে দেখা করে যাই।
না না, আপনার বিচলিত বোধ করবার কোনো কারণ নেই। অ্যানা বললেন, এই আমার বন্ধু রোডা।
রোডা করমর্দন করলেন ডেসপার্ডের সঙ্গে। আপনারা ভেতরে বসুন আমি চায়ের ব্যবস্থা করি। শ্রীমতী অলিভার মন্তব্য করলেন, কি আশ্চর্য যোগাযোগ, আবার আমাদের দেখা হয়ে গেল!
ডেসপার্ড ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন। শ্ৰীমতী অলিভার রহস্যময় কণ্ঠে বললেন, আমার বিশ্বাস, ডাক্তার রবার্টসই খুন করেছেন।
তিনজনই চুপচাপ, ঘরের মধ্যে গুমোট আবহাওয়া। ইতিমধ্যে রোডা চা নিয়ে ঢুকলেন, আতিথেয়েতার জন্য ধন্যবাদ। আমার কার্ড রইল লণ্ডনে গেলে আমার সঙ্গে দেখা করবে, তখন সমাধানের পথ খোঁজা যাবে।
রোডা বললেন, চলুন গেট পর্যন্ত আপনাদের এগিয়ে দিয়ে আসি।
অ্যানা হাত বাড়িয়ে অলিভারের সঙ্গে করমর্দন করলেন, শ্ৰীমতী অলিভার তার গাড়িতে স্টার্ট দিলেন। রোডা হাসিমুখে হাত নেড়ে তাকে অভিবাদন জানালেন।
রোডা হাসিমুখে বললেন, ভদ্রমহিলা খুব মজার তাই না? আমার খুব ভালো লাগলো আলাপ করে। উনি খুব বুদ্ধিমতী তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু উনি কি উদ্দেশ্যে এখানে এসেছিলেন?
অ্যানার কণ্ঠে চিন্তার সুর বাজে।
রোডা বিস্মিত দৃষ্টিতে বন্ধুর দিকে ফিরে তাকালেন, কেন! উদ্দেশ্যের কথা তো স্পষ্ট ভাষাতেই ব্যক্ত করলেন।
ওদিকে মেজর ডেসপার্ড ঘরে বসে অপেক্ষা করছেন। অহেতুক দেরির জন্য অ্যানা ক্ষমা চাইলেন।
মিস মেরিডিথ, এখন অত লৌকিকতার অবসর নেই। আমার আগমনের উদ্দেশ্যটা আপনাকে বুঝিয়ে বলি, কথাটা বলা হয়তো অশোভন হবে, কিন্তু আমার মনে হলো পৃথিবীতে আপনাকে সাহায্য করবার কেউ নেই। যদিও আমি জানি মিস দোয়াস আপনার দুর্লভ বন্ধু। তবু পুলিসের চোখে মিস মেরিডিথ সন্দেহভাজন ব্যক্তি, যাই যদি আপত্তি না থাকে তবে আমার সলিসিটর মিঃ মেহনের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।