একটা গ্র্যাণ্ডস্লামের কথা মনে আছে। আমার হাতের খেলা। একবার তিনটে নো ট্রাম্প ডেকে বিশ্রীভাবে অনেকগুলো শর্ট দিলাম। প্রত্যেকটা রঙের ডিস্ট্রিবিউশন এত খারাপ ছিলো যে কল্পনা করা শক্ত। বলতে গেলে আমরা কোনো পিটই পাইনি, তবে এটা শেষদিকের তাস। তখন আমার পার্টনার ছিলেন মিসেস লরিমা।
মিঃ পোয়ারো এবার প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা ডাক্তার রবার্টস, সেদিনের খেলার মধ্যে কি এমন কোনো ভুলভ্রান্তি নজরে পড়েছে সাধারণ দৃষ্টিতে যা বিস্ময়কর?
ডাক্তার রবার্টস মিনিট দুয়েক চিন্তা করলেন তারপর মাথা নাড়লেন, না তেমন কিছুই আমার মনে পড়ছে না। ইতিপূর্বে নতুন কোনো বক্তব্য নেই তবে মিসেস লরিমা প্রকৃতই একজন জাত খেলোয়াড়। গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত নিখুঁত খেলে। মেজর ডেসপার্ড ভালোই খেলেন, তবে বাইরে যেতে চান না। ঝুঁকি নেবার সাহস তার নেই।
বাকি মিস মেরিডিথ, তিনি মাঝে মধ্যে ভুল করে বসছিলেন। অন্যমনস্কতাই তার প্রধান কারণ।
সেইজন্য বিপরীত দিক দিয়ে প্রশ্নটা আমি আপনার কাছে রাখছি, সেদিন ডিনারের পর যে ঘরে বসে আপনারা তাস খেলেছিলেন তার একটা বিবরণ দিন।
রবার্টস দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিবরণ দিতে শুরু করলেন : হাতির দাঁতের কাজ করা একটা বড় টেবিল ছিলো, চার-পাঁচটা বড় বড় চেয়ার। আটটা কি নটা পার্সিয়ান কম্বল। খুব সুন্দর চাইনিজ আলমারি। বারোটা চেয়ারের সেট। ছটা ভালো জাপানী ছবি। একটা বড় পিয়ানো, পাঁচ-ছটা নস্যির কৌটো, হাতির দাঁতের কাজ করা ছোট ছোট মূর্তি, প্রথম চার্লসের শীলমোহর খচিত কিছু মুদ্রা।…
চমৎকার চমৎকার। আপনার স্মৃতিশক্তি খুবই তীক্ষ্ণ। আর কিছু ছিল কি?
হা, কিছু প্রাচ্যদেশীয় জিনিষপত্র সূক্ষ্ম রুপোর কাজ করা কতগুলো শিল্পবস্তু। কিছু অলঙ্কার। কতিপয় ছোট ছোট বস্তুর সমাবেশ। এবার ডাক্তার রবার্টস একটু থেমে মৃদু হেসে বললেন, আপনি যে জিনষটার কথা জানতে চান সেটা কি আমার তালিকার মধ্যে আছে?
পোয়ারো রহস্যময় হাসি হাসলেন, আমার ধারণা নির্ভুল হয়েছে; জানতাম আপনি সেটার কথা উল্লেখ করবেন না, তবে একটা কথা মনে রাখবেন, আজ আপনি আমাকে যা বললেন তা আমার পরবর্তী উদ্যোগে সহায়তা করবে।
দুজনে করমর্দন করলেন। পোয়ারো ডাক্তার রবার্টসের চেম্বার থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি ধরলেন।
২. মিসেস লরিমার বাড়ি
১১.
পোয়ারো এবার মিসেস লরিমার বাড়িতে এলেন। সুন্দর ছিমছাম বাড়ি। কলিংবেল টিপতেই এক বুড়ি দরজা খুলে দিল।
সে জিজ্ঞাসা করল, কাকে চান?
মিসেস লরিমাকে।
তাকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে বুড়ি ঝি মিসেস লরিমাকে ডাকতে গেল। পোয়ারো ঘরটির দিকে নজর বুলিয়ে নিল। প্রাচীন বনেদি ঢঙের আসবাবপত্র। চেয়ারগুলোয় দামী কুশন পাতা। দেওয়ালে টাঙানো পুরানো আমলের ফটোগ্রাফ, টেবিলের ওপর ফুলদানিতে গোলাপ শোভা পাচ্ছে।
মিসেস লরিমা ঘরে প্রবেশ করলেন। পোয়ারো মৃদু হেসে শান্ত কণ্ঠে বললেন, আমার বিশ্বস ম্যাডাম এই অযাচিত আগমনকে ক্ষমার চোখেই দেখবেন।
কিন্তু এই আগমনের সঙ্গে আপনার পেশার কি সম্পর্ক আছে?
পোয়ারো মাথা নাড়লেন। হ্যাঁ আছে।
কিন্তু আমি আপনাকে দশ মিনিটের বেশি সময় দিতে পারব না, আর তাছাড়া শখের গোয়েন্দার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই, মিসেস লরিমা বললেন।
মিঃ পোয়ারো উত্তর দিলেন, দশ মিনিটই যথেষ্ট।
যে ঘরে মিঃ শ্যাতানা নিহত হন, সে ঘরের একটা বর্ণনা আমায় দিতে পারেন?
গোটা কতক কাঁচের ফুলদানি ছিলো, আধুনিক ডিজাইনের দেখতে ও বেশ সুন্দর একগুচ্ছ ছোট ছোট রক্তিম টিউলিপ ফুল। ঘরটা এত বেশি জিনিষপত্রে ঠাসা যে প্রথম ঢুকে মনে হয়েছিল কোনো যাদুঘরে এসে পৌঁছেছি।
অল্প থামলেন লরিমা, আমি হয়তো আপনার কোনো কাজেই লাগতে পারলাম না। খুবই দুঃখিত, মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করিনি।
আর একটা প্রশ্ন বাকি আছে, পোয়ারো ব্রীজের স্কোরশীটগুলো বার করে টেবিলের ওপর রাখলেন।
লরিমা কাগজগুলো নিয়ে দেখলেন, এটা হলো প্রথম রাবার তখন আমার পার্টনার ছিলেন মিস মেরিডিথ। অপরপক্ষে ডাক্তার রবার্টস আর মেজর ডেসপার্ড। প্রথম ডিলে আমরা চারটে স্পেড ডেকেছিলাম। পরের তাসে দুটো ক্লাব ডাকা হয়েছিলো। তৃতীয় ডিলে খুব বেশি ডাকাডাকি চলে। আমার মনে আছে মিস মেরিডিথ পাস দিলে একটা হার্ট দিয়ে মেজর ডেসপার্ড ডাক শুরু করেন। আমি পাস দিলাম। ডাক্তার রবার্টস বীড দেন তিনটে ক্লাব। মিস মেরিডিথ মুখ খোলেন, তিনি ডাকেন স্পেড। মেজর ডেসপার্ড বলে চারটে ডায়মণ্ড। আমি ডবল দিই। ডাক্তার রবার্টস গোড়ার হার্ট রঙে ফিরে যান। কিন্তু চারটে হার্টসে একটা ডাউন দেন।
পোয়ারো সপ্রশংস কণ্ঠে বললেন, কি অদ্ভুত স্মৃতিশক্তি!
মিসেস লরিমা এবার উঠে দাঁড়ালেন, কিছু মনে করবেন না আমি এক্ষুনি বেরোব আর দেরি করা উচিত হবে না।
নিশ্চয় নিশ্চয়, আপনাকে দেরি করিয়ে দেবার জন্য সত্যিই আমি দুঃখিত।
পোয়ারো উঠে দাঁড়িয়ে করমর্দন করলেন। এবং রাস্তায় পা দিলেন।
.
১২.
অনেক কষ্টে শ্ৰীমতী অলিভার গাড়ি থেকে রাস্তায় নামলেন। এত অপরিসর জায়গায় গাড়ি থেকে নামতে উঠতে খুবই কষ্টকর–এইসব ভাবতে ভাবতে বিরক্তিতে তার মন ভরে উঠল। তার হাতব্যাগের মধ্যে গুটিকতক ম্যাপ, গোটা তিনেক রহস্য উপন্যাস এবং কিছু আপেল। গাড়ি থেকে নেমে তিনি ধীরে ধীরে ওয়েনডন কুটিরের দিকে এগোলেন।