আপনার ব্যক্তিগত জীবন, আপনার জন্ম, আপনার বিবাহ…এই আর কি।
রবার্টস সোজা হয়ে বসলেন। ছোটবেলায় আমি স্নো ভিউ হোটেলে থেকে লেখাপড়া করতাম। বাবা ডাক্তার ছিলেন। পনের বছর বয়স যখন আমার তখন বাবা মারা যান, দুবছর বাদে মাও মারা যান। আমি তাদের একমাত্র সন্তান, এখনো অবিবাহিত। ডাক্তারীতে ভালোই পসার আমার রুগীরাও সকলে অবস্থাপন্ন ঘরের। এই হচ্ছে আমার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত।
মিঃ ব্যাটেল বললেন, আপনার পরিচিত চারজন লোকের নাম বলুন, যারা আপনার সম্বন্ধে খোঁজখবর দিতে পারবেন।
ডাক্তার রবার্টস সাবলীল ভঙ্গিমায় প্যাডের পাতায় চারজনের নাম লিখে ব্যাটেলের দিকে এগিয়ে দিলেন। আপনি দরকার হলে সবকিছুই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমি আমার সেক্রেটারীকে আপনাকে সাহায্য করবার জন্য বিশেষ নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি। আমি এখন রুগী দেখতে বাইরে বেরিয়ে যাব। ডাক্তার রবার্টস চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, তাহলে আমি চললাম। কথা বলতে বলতে ডাক্তার রবার্টস ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
সুপারিন্টেন্টে ব্যাটেল প্রথমে দেরাজ খুলে তন্নতন্ন করে সবকিছু গ্রীক্ষা করলেন। ব্যাঙ্কের পাসবইটা দেখলেন খুঁটিয়ে। বিষের আলমারিটা পরীক্ষা করে বিফল হলেন। চিঠিপত্রের ফাইলটা দেখলেন সবই ব্যক্তিগত চিঠি। হতাশভাবে ব্যাটেল মাথা নাড়লেন। এবার ব্যাটেল ডাক্তার রবার্টসের সেক্রেটারীকে কিছু জেরা করবার জন্য ডাকলেন। তিনি বললেন, আচ্ছা শ্রীমতী বার্জেস, আপনি বোধহয় সমস্ত ঘটনাই শুনেছেন।
হ্যাঁ, ডাক্তার রবার্টস আমায় বলেছেন। সমস্ত পরিস্থিতিটা খুবই নোংরা এবং সাংঘাতিক। মিঃ ব্যাটেল মাথা নেড়ে বললেন, হ্যাঁ তা ঠিক কিন্তু আপনি একটু মনে করে বলুন যে শ্যাতানাকে কখনো দেখেছেন কিনা?
না, কখনো দেখিনি। ডাক্তার রবার্টসকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানানোর সময় তার নামটা শুনেছি মাত্র।
শ্ৰীমতী বার্জেসকে বাগে আনা খুবই কষ্টকর, মিঃ ব্যাটেল তা বুঝতে পারলেন। তবু তিনি চেষ্টার ত্রুটি রাখলেন না এবং নতুন করে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি তাহলে স্থির নিশ্চিত যে মিঃ শ্যাতানা ডাক্তার রবার্টসের কোনো পেশেন্ট ছিলেন না।
হ্যাঁ সেটা আমি জোরের সঙ্গেই বলতে পারি।
তবে আর কি করা যাবে। বিরস মুখে ব্যাটেল দরজার দিকে এগোলেন।
ডাক্তার রবার্টসকে বলবেন, আমি তার সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। আচ্ছা, নমস্কার শ্রীমতী বার্জেস।
.
১০.
ব্যাটেলের মুখে গভীর উদ্বেগ আর বিষাদের ছায়া।
পোয়ারা প্রশ্ন করলেন, তাহলে আপনার সকালের পরিশ্রমটা বৃথাই গেল মনে হয়?
ব্যাটেল মাথা নাড়লেন, খুবই জটিল সমস্যা, তবে আমার বিশ্বাস ডাক্তার রবার্টস ভদ্রলোক সত্যই একজন খুনী। কিন্তু শ্যাতানাকে তিনি খুন করেছেন বলে মনে হয় না। অন্তত আমার তাই বিশ্বাস।
তবে এটা তো আপনি বিশ্বাস করেন, তিনি আর কাউকে খুন করেছেন। একজন কেন, বহু লোককেই খুন করে থাকতে পারেন। তবে প্রমাণ পাওয়া শক্ত।
ভদ্রলোক অবিবাহিত তাঁর নামে কিছু স্ক্যাণ্ডাল রটেছিল। ভদ্রমহিলার নাম মিসেস ক্র্যাডাক। ভদ্রমহিলার স্বামীর অ্যানথ্রক্স রোগ হয়েছিল–বাজারে নিচুমানের একধরনের সেভিং ব্রাশ চালু ছিলো। তার মধ্যে কিছু ছিলো এই রোগের জীবাণুবাহী।
হত্যাকারীর পক্ষে এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ! পোয়ারো মন্তব্য করলেন।
ব্যাটেল কৌতূহলের সুরে প্রশ্ন করলেন, আপনি কোন পথ ধরে এগোবেন বলে ভাবছেন?
পোয়ারো উত্তর দিলেন, আমি সন্তর্পণেই অগ্রসর হবো। আমি কেবল তার সঙ্গে ব্রীজ খেলা সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করবো।
পোয়ারো চোখ মিটমিট করে ফিরে তাকালেন, কেন? আপনার কাজের ধারা কি রকম, মিঃ ব্যাটেল?
খুবই সোজা একজন কর্তব্যপরায়ণ পুলিস অফিসার যে রকম নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করে সত্য অনুসন্ধানে ব্রতী হয়, সেই রকম। হাসিমুখে পোয়ারো পানীয়ের গ্লাস তুলে ধরলেন।
লাঞ্চের পর তারা দুজনে যে যার পথ ধরলেন। ব্যাটেল পরবর্তী কর্মপদ্ধতি সম্বন্ধে নির্দেশ দেবার জন্য স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে ফিরে গেলেন।
পোয়ারো এগোলেন ডাক্তার রবার্টসের চেম্বারের দিকে। পোয়ারোকে দেখে ডাক্তার রবার্টসের ভ্রূ কুঞ্চিত হয়ে উঠলো।
ঠাট্টার সুরে বললেন, একদিনে দুজন টিকটিকির শুভাগমন! রকমসকম দেখে মনে হচ্ছে। সন্ধের মধ্যেই গ্রেপ্তারী পরোয়ানা বেরিয়ে যাবে।
পোয়ারো মৃদু হাসলেন, না না, আমি আশ্বাস দিতে পারি আমার দৃষ্টি এখনো আপনাদের চারজনের প্রতিই নিবদ্ধ।
রবার্টস বিনয়ে বিগলিত হয়ে বললেন, বলুন কিভাবে আপনার কাজে লাগতে পারি?
পোয়ারো মিনিট খানেক কোনো কথা বললেন না। তারপর তার কোটের পকেট থেকে নিখুঁত ভাঁজ করা তিনটে ব্রীজ খেলার স্কোরশীট বার করে টেবিলের ওপর রাখলেন। শান্ত সুরে তাঁর বক্তব্য ব্যাখ্যা করলেন, এই প্রথমটা হচ্ছে মিস মেরিডিথের হাতের লেখা। এখন আমার জিজ্ঞাস্য, এই স্কোরশীট দেখে কি স্মরণ করতে পারেন খেলাটা কিভাবে এগিয়েছিল?
এতদিন বাদে স্মরণ করা মুশকিল, আচ্ছা দাঁড়ান, দাঁড়ান ভাবতে দিন। হ্যাঁ মনে পড়েছে। স্পেডের খেলা ছিলো। ওঁরা একটা শর্ট দিলেন।
পরের তাসটা আমি আমার পার্টনার দুটো ডায়মণ্ডে খেলেছিলাম।
আচ্ছা কোনো উত্তেজনাপূর্ণ ডাক বা খেলার কথা আপনার মনে পড়ে না?