শ্ৰীমতী অলিভার হতাশ হলেন, কিন্তু প্ল্যানটা খুবই চমৎকার ছিলো। যাইহোক আমি যদি আমার নিজস্ব পদ্ধতিতে অনুসন্ধান চালাই তাহলে নিশ্চয়ই আপনি বাধা দেবেন না।
মিঃ ব্যাটেল বললেন, না। তাতে আমার খুব বেশি আপত্তি থাকবে না। তবে এই সব খুনের মামলায় মাথা না গলানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
কিন্তু আমি আমার তদন্তের ফলাফল সম্পূর্ণ গোপন রাখবো।
কর্নেল রেস এবার বলে উঠলেন, আমি ডেসপার্ডের ব্যাপারে যাবতীয় খোঁজখবর এনে দেবো। তবে দু-চারদিন সময় লাগবে।
অজস্র ধন্যবাদ, এতেই আমাদের অনেক উপকার হবে। কি ধরনের অনুমান করতে পারছেন।
হ্যাঁ, অনুমান করতে পারছি। যেমন ভদ্রলোক কোনো শিকার দুর্ঘটনা বা ওই জাতীয় কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা ইত্যাদি।
ব্যাটেল মৃদু হাসলেন।
কর্নেল রেস মৃদু হেসে বিদায় নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
এবার মিঃ ব্যাটেল হঠাৎ পোয়ারোকে বলে উঠলেন, আচ্ছা আপনি এই চারজনের মানসিক গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে কি অভিমত পোষণ করেন?
পোয়ারো উত্তর দিলেন, এদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর প্রত্যেকের সম্বন্ধে আমাদের একটা ধারণা জন্মেছে। এই হত্যার ব্যাপারে দুটি জিনিষ খুব স্পষ্ট। প্রথমত খুনীর মনের জোর অসাধারণ, দ্বিতীয় আত্মম্ভরিতাও তার বিপুল। এবার ডাক্তার রবার্টসের ব্রীজ খেলার কথা চিন্তা করুন। ভদ্রলোক ভাওতা দিতে ওস্তাদ। বিপদে পড়লে ঝক্কি সামলাতে পারবেন।
আবার এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে সন্দেহের তালিকা থেকে মিস মেরিডিথকে বাদ দেওয়া যায় কারণ তিনি খুবই ভীত এবং নার্ভাস মহিলা। সুতরাং তার পক্ষে এই হত্যা ঘটানো অসম্ভব। এবার আসে মেজর ডেসপার্ড। চিন্তাশীল আত্মবিশ্বাসী মানুষ। অপরিহার্য মনে করলে যে কোনো রকমের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। সবশেষে মিসেস লরিমার বয়স ষাটের কাছাকাছি প্রখর বুদ্ধিমতী। স্বভাব বেশ শান্ত। তিনি যদি কোনো অপরাধ করেন তবে বেশ ভেবে চিন্তেই অগ্রসর হবেন। অঙ্কের মতো সবকিছু হিসেব করে চলেন। সেইজন্য আজকের খুনটা তার পক্ষে না করাই সম্ভব।
পোয়ারো খানিক দম নিয়ে আবার শুরু করলেন, তাহলে দেখতে পাচ্ছেন আমাদের সামনে এখন মাত্র একটা পথই খোলা–তা হচ্ছে অতীত।
ব্যাটেল বিড় বিড় করে বললেন, পরিস্থিতিটা খুবই জটিল। আমরা অনেক সময় কোনো গণ্ডগোলের ব্যাপার আঁচ করতে পারি, বুঝতে পারি কেউ কোনো চালাকি খেলছে কিন্তু নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া খুব কষ্টকর হয়।
এই মামলাটা অনেকদিন গড়াবে। অনেক ঝামেলা দেখা দেবে, প্রয়োজনীয় তথ্যাদি কিছুই প্রায় হাতের কাছে নেই। আমাদের খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। সবচেয়ে দুঃসাধ্য কাজ হচ্ছে চারজন খুনীর ইতিহাস সংগ্রহ করা। একজন দুজন হলে তবু না হয় চেষ্টা করে দেখা যেত। মানব প্রকৃতির মধ্যে মৌলিকত্বের একান্তই অভাব! দার্শনিক ভঙ্গিতে মন্তব্য করলেন পোয়ারো।
শ্ৰীমতী অলিভার প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলেন। মহিলাদের কথা সম্পূর্ণ আলাদা। কেবল তারাই নিত্য নব উপায় উদ্ভাবন করতে পারে। এক মুহূর্তকাল চুপ করে থেকে তার দুই চোখ নতুন ভাবনায় উদ্ভাসিত হলো। আচ্ছা যদি এই চারজনের মধ্যে কেউই মিঃ শ্যাতানাকে খুন না করে থাকে, হয়তো ভদ্রলোক প্ল্যান করে চারজন খুনীকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে তারপর মজা দেখাবার জন্য ঠান্ডা মাথায় আত্মহত্যা করে থাকেন!…
মৃদু হেসে মাথা নাড়লেন পোয়ারো। আপনার কল্পনা শক্তির ভূয়সী প্রশংসা না করে পারা যায় না। কিন্তু মিঃ শ্যাতানা আত্মহত্যা করবার মতো মানুষ নন। জীবন তার কাছে পরম প্রিয়। বস্তু।
তবে ভদ্রলোক যে খুব ভালো লোক ছিলেন না, সে কথাটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
পোয়ারো বললেন, সে যাইহোক এখন তিনি মৃত…নিহত সুতরাং খুনীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত, এখনও পর্যন্ত আমি সেই অভিমতই পোষণ করি।…আর সেই জন্যই বাঘের খাঁচার মধ্যেও আমি যেতে প্রস্তুত।
.
০৯.
ডাক্তার রবার্টস চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন। তার হাতের তালুতে এখনো কার্বলিক সাবানের গন্ধ ছড়িয়ে আছে।
আপনার তদন্ত কেমন এগুচ্ছে? খুনী ধরা পড়বে তো?
মিঃ ব্যাটেল উত্তর দিলেন, যেখানে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি। তবে কাগজে খবরটা প্রকাশ পায়নি এইটুকু বাঁচোয়া।
ইতিমধ্যে পোস্টমর্টেমের রিপোর্টও এসে পৌঁছেছে, সেই রিপোর্টটি ডাক্তার রবার্টসকে দেখতে দিলেন।
ভদ্রলোকের সলিসিটরের সঙ্গে উইল নিয়ে কথা হয়েছে। সিরিয়ায় তার এক আত্মীয়কে দানপত্র করে গেছেন।
ক্ষণিকের জন্য রবার্টসের মুখখানি কালো হয়ে গেল। মিঃ ব্যাটেল আরও বললেন, ভদ্রলোকের ব্যক্তিগত কাগজপত্রও আমরা ঘেঁটে দেখেছি।
রবার্টস নিজেকে সংযত করে নিলেন। ব্যাটেলের দিকে চোখ তুলে প্রশ্ন করলেন, আমার কাগজপত্রও নিশ্চয় পরীক্ষা করে দেখতে চাইবেন না।
ব্যাটেল উত্তর দিলেন, সেইরকমই বাসনা আছে।
আমি আপনাকে বাধা দেবো না, ডাক্তার রবার্টস বললেন। আপনাদের কাজে সহায়তা করা প্রত্যেক সৎ নাগরিকের কর্তব্য।
অজস্র ধন্যবাদ, ব্যাটেল বললেন, আপনার কর্তব্যবোধকে সম্ভ্রম না জানিয়ে পারা যায় না। আরও একটি ব্যাপার…আপনাকে গোটা কয়েক প্রশ্ন করবো আশা করি উত্তর দেবেন।
বেশ! কি জানতে চান বলুন?