.
০৬.
পোয়ারোকে ব্যাটেল বললেন, ভদ্রমহিলা একটু প্রাচীন পন্থী, অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল। অবশ্য কিছুটা একগুঁয়েও।
পোয়ারো স্কোরের কাগজগুলো যত্ন করে টেবিলের উপর ছড়িয়ে দিলেন। এবং বললেন, আমরা এর ভেতর থেকে নিগূঢ় সত্যের ইঙ্গিত পেতে পারি। মিস মেরিডিথ অতিমাত্রায় বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন, শ্বাসপ্রশ্বাসও কেমন এলোমেলো। চোখে মুখে আতঙ্কের ছায়া।
মিঃ ব্যাটেল ত্বরিৎ পায়ে উঠে গিয়ে মেরিডিথের পাশে এসে দাঁড়ালেন। তাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিতে সাহায্য করলেন।
অযথা নার্ভাস হবেন না। আমি জানি এ ধরনের ঘটনাবলী স্নায়ুর ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
মিস মেরিডিথ বললেন, কি ভয়ঙ্কর একবার ভাবুন…আমাদেরই চারজনের মধ্যে একজন খুন করেছে।
আচ্ছা মিস মেরিডিথ মিঃ শ্যাতানার সঙ্গে আপনার কতদিনের পরিচয়?
মিস মেরিডিথ উত্তর দিলেন, সত্যি বলতে কি ওনার সাথে আমার তেমন পরিচয়ই নেই, ভদ্রলোককে আমি একটু ভয় করেই চলতাম।
যাক এবার আসল কথায় আসা যাক, আপনি কি ব্রীজ খেলার সময় কখনো নিজের আসন ছেড়ে উঠেছিলেন?
হ্যাঁ, একবার বোধহয় উঠেছিলাম।
ঠিক আছে, এবার বলুন, অপর তিনজনের সম্বন্ধে কিছু জানেন কিনা।
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না মেজর ডেসপার্ড এ কাজ করেছেন বা দলের অন্যান্যরাও একাজ করতে পারে না।
মিঃ ব্যাটেল এবার বললেন, তাহলে আর মিছিমিছি উদ্বিগ্ন হচ্ছেন কেন? এবার আপনি যেতে পারেন।
মিস মেরিডিথ বিদায় দিলেন। শ্রীমতী অলিভার লঘু অথচ গম্ভীর সুরে মন্তব্য করলে, আমার মনে হয় এই মেয়েটাই আসলে খুনী।
সুপারিন্টেন্টে ব্যাটেল কনস্টেবলকে আদেশ দিলেন মেজর ডেসপার্ডকে ডেকে দেবার জন্য।
.
০৭.
দ্রুত পায়ে মেজর ডেসপার্ড ঘরে প্রবেশ করলেন।
আপনাকে এতক্ষণ আটকে রাখবার জন্য আমি খুবই দুঃখিত।
যাক, মিঃ শ্যাতানার সঙ্গে আপনার অন্তরঙ্গতা কতটা ছিলো?
দেখুন ওনার সাথে মাত্র দুবার আমার দেখা হয়েছিলো।
এক মাস আগে বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রাখতে গিয়ে আলাপ হয়। আর একবার তিনি একটা ককটেল পার্টিতে আমাকে আহ্বান জানান।
ব্যাটেল আবার প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা মিঃ শ্যাতানাকে অপছন্দ করবার মতো আপনার কোনো কারণ আছে?
হা… অসংখ্য কারণ আছে। তবে হত্যা করার কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না।
ব্যাটেল জিজ্ঞাসা করলেন, মিঃ শ্যানার অপকীর্তি সম্বন্ধে কি জানেন?
মেজর ডেসপার্ড অবহেলা ভরে বললেন, এর ওর গোপন ব্যাপারে নাক গলাননা পরলোকগত মিঃ শ্যাতানার একটা স্বভাব ছিলো। উনি কোনো নারীঘটিত ব্যাপারেও জড়িত থাকতে পারেন।
ওসব কথা থাক। এঁদের মধ্যে কাকে আপনি হত্যাকারী বলে সন্দেহ করেন?
একাজ আমি করিনি আর মিস মেরিডিথ ও মিসেস লরিমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভবই নয়।
ব্রীজ খেলার সময় আপনার এবং অন্য সকলের গতিবিধির কথা কিছু স্মরণ করতে পারেন?
দুবার মাত্র আমি আসন ছেড়ে উঠেছিলাম। প্রথমবার সাড়ে দশটার সময় আর তার আধঘন্টা পরে দ্বিতীয়বার উঠেছিলাম। মিসেস লরিমা একবার উঠেছিলেন এবং মিস মেরিডিথ একবার ঘরের চারধারে পায়চারী করেছিলেন। তবে ডাক্তার রবার্টস প্রায়ই তার চেয়ার ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলেন।
মিঃ ব্যাটেল আর একটা প্রশ্ন করলেন–ব্রীজ খেলোয়াড় হিসেবে এই তিনজনের সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?
মিস মেরিডিথ ও মিসেস লরিমা সত্যিই ভালো খেলে। লরিমা তো একজন জাত খেলোয়াড়।
আপনি আর কোনো প্রশ্ন করবেন, ডেসপার্ড জিজ্ঞাসা করলেন।
না, আর কোনো প্রশ্ন নেই। আপনি আসতে পারেন, ব্যাটেল জানালেন।
ডেসপার্ড বিদায় নিলেন শুভরাত্রি জানিয়ে।
.
০৮.
সবাই নির্বাক। ব্যাটেলের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি প্রত্যেকের মুখের ওপর দিয়ে ঘুরে গেলো। শ্রীমতী অলিভার তার ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করতে এগিয়ে এলেন। তিনি বললেন, ওই মেয়েটা আর নয়তো ডাক্তার রবার্টস খুন করেছেন মিঃ শ্যাতানাকে। এই বিষয়ে তাদের কেউ কোনো মন্তব্য করতে আগ্রহ দেখালেন না।
মিনিট দুয়েক সকলেই নির্বাক। ব্যাটেল এবার আলোচনায় মুখর হলেন। প্রথমে ডাক্তার রবার্টসের কথা স্মরণ করুন, ভদ্রলোককে সন্দেহ করবার মতো যথেষ্ট কারণ আছে। বুকের ঠিক কোথায় আঘাত করলে সঙ্গে সঙ্গে অভিলাষিত ফল পাওয়া যাবে এটা তিনি বেশ ভালোই জানেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নেই। এবার আসছেন মেজর ডেসপার্ড। এনার মানসিক শক্তি খুবই সুদৃঢ়। ইনি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত। মহিলাদেরও সন্দেহ করবার মতো অবকাশ আছে। মিসেস লরিমার নার্ভ ভীষণ শক্ত তিনি একজন আদর্শবাদী মহিলা। তিনি কাউকে খুন করেছেন এটা কল্পনাতীত। সবশেষে মিস মেরিডিথ তার সম্বন্ধে কিছু আমাদের জানা নেই।
আলোচনা বেশ জমে উঠেছে হঠাৎ অতি উৎসাহের সুরে চেঁচিয়ে উঠলেন শ্রীমতী অলিভার, আমার মাথায় একটা মতলব এসেছে, সেটা হচ্ছে আমরা সংখ্যায় চারজন সবাই গোয়েন্দা বিভাগের ক্রিয়া পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত সুতরাং আমরা প্রত্যেকেই যদি আমাদের সন্দেহভাজন এক একজনের ওপর নজর রাখি আর তাছাড়া আমরা আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ চালিয়ে যাব।
ব্যাটেল এই প্রস্তাবে রাজী হলেন না। তিনি বললেন, পুরো তদন্তটা আমাকেই চালাতে হবে। এর মধ্যে আইনের প্রশ্ন জড়িত তাছাড়া ব্যক্তি নির্বাচনেও আমাদের মধ্যে মতান্তর দেখা দিতে পারে। তেমন ক্ষেত্রে কে কার ওপর নজর রাখবে সেটাও একটা সুবিপুল সমস্যার ব্যাপার।