পোয়ারো উত্তর দিলেন, ভদ্রলোক ছিলেন অতিমাত্রায় দাম্ভিক। ভাবতেন শয়তানের শ্রেষ্ঠ অনুচর সেজে পৃথিবীর উপর প্রভুত্ব করে যাবেন। এই গর্বেই মারা পড়লেন।
ব্যাটেল মনে মনে বিড়বিড় করলেন, তাহলে মোট আটজন নিমন্ত্রিত–তার মধ্যে চারজনের ভূমিকা শুধু দর্শকের, বাকি চারজন হত্যাকারী।
দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ জানালেন মিসেস অলিভার, অসম্ভব! এর মধ্যে কেউ খুনী হতে পারে না। এখানে সকলেই বিশিষ্ট ভদ্রলোক।
ব্যাটেল ধীর ভাবে মাথা দোলালেন, এই বিষয়ে এখনই একেবারে নিশ্চিত হওয়া যায় না। খুনীরাও অনেক সময় আপনার আমার মতো পোষাক পরে থাকে। বাইরে থেকে তাদের বোঝা যায় না। মিঃ শ্যাতানা হয়তো আজকের ভোজসভায় কতিপয় খুনীদের এক অভূতপূর্ব সম্মেলন ঘটাতে চেয়েছিলেন।
পোয়ারো মাথা নাড়লেন, ভদ্রলোকের একটা খ্যাতি ছিলো। ক্ষমাহীন নিষ্ঠুরতায় ভদ্রলোকদের আর বেশিক্ষণ বসিয়ে রাখা উচিত হবে না। এবার তাদের জবানবন্দি নেওয়া প্রয়োজন।
তাহলে আমরা না হয় বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করি? কর্নেল রেস উঠে দাঁড়াবারা ভাব দেখালেন।
….ব্যাটেল সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, না, না, আপনারা সকলেই থাকতে পারেন।
ব্যাটেল উঠে দাঁড়িয়ে কর্তব্যরত কনস্টেবলকে ডাক দিলেন, পাশের ঘরে এণ্ডারসন ডিউটিতে আছে। ওকে গিয়ে বলবে অতিথিদের মধ্যে ডাক্তার রবার্টস যেন অনুগ্রহ করে একবার আমার সামনে হাজির হন।
ডাক্তার রবার্টস দ্রুতপায়ে ঘরে প্রবেশ করলেন, সত্যি সুপারিন্টেন্টে, কি সাংঘাতিক একটা ব্যাপারের মধ্যে আমরা জড়িয়ে পড়লাম, ছুরি মেরে কাউকে খুন করা…। না, এতোখানি দুঃসাহস আমার নেই। আর তাছাড়া ওনাকে ভালো করে আমি চিনি না পর্যন্ত সুতরাং ওনাকে খুন করবার পেছনে আমার বিন্দুবিসর্গ কারণ নেই।
ব্যাটেল নীরস ভঙ্গীতে মাথা নাড়লেন। আপনার কথা শুনে আশ্বস্ত হলাম, তবে আপনি জানেন আমাকে আইনমাফিক তদন্ত চালাতে হবে। ঘরের অপর অতিথিদের সম্বন্ধে কিছু জানেন?
না, দুঃখিত কিছু জানি না।
যাইহোক মিঃ ব্যাটেল সবাইকেই জেরা করলেন। জেরা করে জানতে পারলেন তিনজনই টেবিল ছেড়ে উঠেছিলেন কিন্তু মিঃ শ্যাতানার দিকে কেউই লক্ষ্য করেননি যে তিনি ঠিক তখন কি করছিলেন।
মিঃ ব্যাটেল বললেন, আপনি নিশ্চয় খুঁজে বার করতে পারবেন যে কে খুনী। তবে আপনার তিনজনের মধ্যে কাকে খুনী বলে মনে হয়?–মিঃ ব্যাটেল ডাক্তার রবার্টসকে জিজ্ঞাসা করলেন।
ডাক্তার রবার্টস থতমত খেয়ে বললেন, আমার মনে হয় মেজর ডেসপার্ডই হত্যাকারী। ভদ্রলোকের নার্ভ খুবই শক্ত একমাত্র তিনিই এই ঝুঁকি নিতে পারেন।
এখানে মহিলাদের কোনও ভূমিকা নেই, কারণ এই খুনের পিছনে দৈহিক শক্তির প্রয়োজন।
ব্যাটেল তাড়াতাড়ি বললেন, না, ওনাকে একটা লম্বা পাতলা ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ডাক্তার রবার্টস উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে ওঠলেন, কি সাংঘাতিক ব্যাপার!
ব্যাটেল পোয়ারোর দিকে ফিরে তাকালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কি বক্তব্য আছে তা প্রকাশ করুন।
পোয়ারো স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে হাত নাড়লেন এবং প্রশ্ন করলেন, আপনারা কটা রবার খেলেছিলেন?
রবার্টস চটপট জবাব দিলেন, তিনটে।
আমার আরও দুটি প্রশ্ন, এক হচ্ছে হারজিতের ভাগে কার কি রকম ভূমিকা এবং দুই ব্রীজ খেলোয়াড় হিসেবে এঁদের প্রত্যেকের সম্বন্ধে আপনার কী ধারণা?
মিসেস লরিমা একজন দক্ষ খেলোয়াড়। মিস মেরিডিথ এমন কিছু ভালো নয়।
আর আপনি?
হা…আমি সাধারণত হাতের তাসের তুলনায় ডাকটা বেশি দিয়ে থাকি। এতে আমার লোকসানের থেকে লাভ হয় বেশি।
পোয়ারো বিজ্ঞের মত হাসলেন। চেয়ার ছেড়ে রবার্টস উঠে দাঁড়ালেন, তবে আজ চলি, শুভরাত্রি, বলে দ্রুত পায়ে ডাক্তার রবার্টস ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন।
.
০৫.
ব্যাটেল এবার মিসেস লরিমাকে জেরা শুরু করলেন। মিঃ শ্যাতানাকে আপনি নিশ্চয় খুব ভালো করে চিনতেন?
না। ভদ্রলোকের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠ ভাবে কখনো মিশিনি।
তার সম্বন্ধে আপনার কি রকম ধারণা?
তাকে একজন প্রকৃত সৎ ব্যক্তি বলে মেনে নেওয়া কঠিন।
মাপ করবেন; একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হচ্ছি। মিঃ শ্যাতানার মৃত্যুতে আপনার কোনো স্বার্থসিদ্ধি ঘটবে না নিশ্চয়ই?
চিন্তিত চিত্তে মিসেস লরিমা বললেন, না সুপারিন্টেন্ডেন্ট, মিঃ শ্যাতানার মৃত্যুতে আমি কোনো লাভবান হবো না।
আপনার বাকি তিনজন সঙ্গী সম্বন্ধে কোনো কিছু বলতে পারেন?
ওদের সম্বন্ধে বিশেষ কিছু আমি জানি না।
আচ্ছা আপনি চেয়ার ছেড়ে ক বার উঠে গিয়েছিলেন?
একবার ডামি অবস্থায় আমি চেয়ার ছেড়ে ফায়ার প্লেসের কাছে গিয়েছিলাম। মিঃ শ্যাতানা তখন জীবিত ছিলেন।
লরিমাকে ব্যাটেল প্রশ্ন করলেন, এই তিনজনের মধ্যে কাকে আপনি খুনী বলে সন্দেহ করেন?
লরিমা বললেন, এ প্রশ্নটা আমার কাছে রীতিমতো অসঙ্গত বলে মনে হয়।
এর পর মিসেস লরিমাকে প্রশ্ন করলেন মিঃ পোয়ারো। আচ্ছা ম্যাডাম ব্রীজ খেলোয়াড় হিসেবে এঁদের প্রত্যেকের সম্বন্ধে আপনার কি ধারণা।
অসীম ধৈর্যসহকারে মিসেস লরিমা বললেন, মেজর ডেসপার্ড হিসেবী খেলোয়াড়।
ডাক্তার রবার্টসের হাতের খেলা খুবই ভালো, মিস মেরিডিথের খেলাও মন্দ নয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ ম্যাডাম, আমার আর কোনো প্রশ্ন নেই।
মিসেস লরিমা চারজনের সঙ্গে করমর্দন করে শুভরাত্রি বলে বিদায় নিলেন।