তাই দ্বিতীয় পরীক্ষা হলো প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদা দেখা করা এবং তারা মিঃ শ্যাতানার ঘরে কি কি জিনিষ দেখেছেন বিশেষ করে ছুরিটা কার নজরে পড়েছে। তাছাড়া ব্রীজ খেলার তাসের সম্বন্ধে বলা, কিন্তু ডাক্তার রবার্টসের কাছে তাস খেলার কোনো খবরই পেলাম না কারণ তার খেলায় মন ছিলো না।
তাসের ব্যাপারে মিসেস লরিমার স্মৃতিশক্তি কিন্তু আশ্চর্যভাবে তীক্ষ্ণ এবং তিনি যে গভীর মনোনিবেশ সহকারে তাস খেলেন তাতে তার পাশে দাঁড়িয়ে একজন অন্যকাউকে খুন করলেও ভদ্রমহিলা চোখ তুলে দেখবেন বলে মনে হয় না। তার কাছে আমি আর একটি মূল্যবান সংবাদ পাই। ডাক্তার রবার্টস গ্র্যাণ্ডস্লামের ডাক দিয়েছিলেন, বলাবাহুল্য খুবই অযৌক্তিক ভাবে। এবং তিনি তার পার্টনার মিসেস লরিমার রঙেই ডাক দেন। যার ফলে ভদ্রমহিলাকেই তাসটা খেলতে হয়।
তৃতীয় পরীক্ষা, ব্যাটেল এবং আমি দুজনে গভীর ভাবে আলোচনা করছিলাম, সেটা হচ্ছে ওই চারজনের কর্মজীবনের কৃত অপরাধ সম্পর্কে সম্যকরূপে অবগত হওয়া। কোন পরিস্থিতিতে তারা তাদের হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেছিলেন বর্তমান ক্ষেত্রেও সেই পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটেছে কিনা সেটা লক্ষ্য করাই হলো আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।
তাদের পূর্বজীবনের ইতিহাস উদ্ধারের যা কিছু কৃতিত্ব তা সবই ব্যাটেল, কর্নেল রেস এবং শ্ৰীমতী অলিভারের প্রাপ্য, কিন্তু এর সাহায্যেও ব্যাটেল বর্তমান রহস্যের কোনো হদিশ খুঁজে পেলেন না। তার ধারণা পূর্ববর্তী খুনগুলোর বেলায় যে সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিলো তাদের কোনোটার সঙ্গেই বর্তমান খুনের কোনো সামঞ্জস্য নেই কিন্তু তা সত্য নয়। ডাক্তার রবার্টস আগে যে খুন করেছেন বলে আমরা জানি তার সঙ্গে বর্তমান খুনটার কোনো সাদৃশ্য নেই। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বুঝতে পারা যায় এদের মধ্যে চারিত্রিক মিল কত সুদৃঢ়।
রুগী পরীক্ষা করে দেখার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া সব ডাক্তারদেরই বিধি আর সেই সুযোগে একজনের সেভিং ব্রাশে অ্যানথ্রক্স রোগের দূষিত জীবাণু মাখিয়ে রেখে আসা কত সহজ। মিসেস ক্র্যাডককে খুন করা হলো টাইফয়েড রোগের প্রতিষেধক ইনজেকশন দেবার আছিলায়। এবার শ্যাতানাকে খুনের কথাটা চিন্তা করুন। ডাক্তার রবার্টস উপলব্ধি করতে পারলেন তিনি বিপদের জালে জড়িয়ে পড়েছেন তাই শ্যাতানার মুখ বন্ধ করা দরকার সুতরাং খুন তাকে করতেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মনস্থির করে ফেললেন তাকে একটা প্রচণ্ড ঝুঁকি নিতে হবে। অবশ্য ব্রীজ টেবিলে ঝুঁকি নেবার অভ্যাস তার আছে।
যখন আমি মনে মনে প্রায় নিশ্চিত হয়ে উঠেছিলাম যে, ডাক্তার রবার্টসই প্রকৃত অপরাধী ঠিক সেই সময় মিসেস লরিমা আমাকে ডেকে পাঠান এবং আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে স্পষ্ট জানান এই খুনটা তিনিই করেছেন। কিন্তু এটা তিনি করেননি সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম, কিন্তু এরপর তিনি যেটা বললেন সেটা আরও জটিল। তিনি বললেন তিনি নাকি অ্যানা মেরিডিথকে নিজে খুন করতে দেখেছেন।
পরের দিন সকালে বিছানায় শায়িত মিসেস লরিমার মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে আমি এই ঘটনার নিগূঢ় তাৎপর্য সর্বপ্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম। বাস্তবিক পক্ষে তিনি যা বলেছেন তাও যেমন সত্যি। আমার সিদ্ধান্ত ঠিক তেমনই অভ্রান্ত।
আসলে যা ঘটেছিলো তা এই। একবার ডামি থাকাকালীন মিস মেরিডিথ ঘুরতে ঘুরতে ফায়ারপ্লেসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় মিঃ শ্যানার দিকে নজর পড়ে এবং ভদ্রলোক যে মারা গেছেন সে কথাটাও বুঝতে তার দেরি লাগে না। মেরিডিথ তখন শ্যানার আরো কাছে এগিয়ে যায়। সেই মুহূর্তে তার হাত দুটোও মৃত শ্যানার কোটের বুকপকেটের কাছে উজ্জ্বল চকচকে বস্তুটার জন্য প্রলুব্ধ হয়ে ওঠে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বস্তুটি যে কি সেটা উপলব্ধি করতে পারে।
এই ঘটনায় হতচকিত হয়ে মেরিডিথ চেঁচিয়ে উঠতে গিয়েছিলো, কোনো রকমে সেটা সামলে নেয়। কারণ কিছু আগে ডিনার টেবিলে ভদ্রলোক যে মন্তব্য করেছিলেন সেটা তার স্মরণ আছে। তিনি হয়তো কাগজপত্রেও এই ঘটনা সম্বন্ধে কিছু লিখে রেখে যেতে পারেন। তাতে প্রমাণিত হবে শ্যাতানাকে হত্যার পিছনে অ্যানা মেরিডিথেরও কোনো উদ্দেশ্য ছিলো।
সকলে মনে করবে যে নিজেই শ্যাতানাকে খুন করেছে। ভয়ে এবং আশঙ্কায় কাঁপতে কাঁপতে সে তখন আবার ব্রীজ টেবিলে ফিরে আসে।
সুতরাং মিসেস লরিমা সত্যিকথাই বলেছেন, কারণ খুনটা তিনি স্বচক্ষে ঘটতে দেখেছেন বলে বিশ্বাস করেন, আর আমার সিদ্ধান্তও অভ্রান্ত।
ডাক্তার রবার্টস যদি এই ঘটনার পর চুপচাপ বসে থাকতেন, তাহলে এই ব্যাপারে তাকে অভিযুক্ত করা যেতো কিনা সে বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে। যদিও নিপুণ ভাওতা ও সুচতুর ফন্দি এঁটে আমরা তার মুখ থেকে প্রকৃত সত্য স্বীকার করিয়ে নেবার চেষ্টা করতাম। আমি অন্তত এতো সহজে হাল ছেড়ে দিতাম না তা ঠিক।
শ্যাতানাকে হত্যা করার পর ডাক্তার রবার্টস যে খুব অস্বস্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন তাতে কোনো দ্বিমত নেই।
এই রহস্যের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুলিস এই অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাবে। তার ফলে তারা হয়তো রবার্টসের পূর্বকৃত অপরাধের কোনো হদিশ খুঁজে বার করতে পারে। সেইজন্যে তিনি একটা চমৎকার মতলব আঁটলেন। তিনি বুঝতে পারলেন মিসেস লরিমা ভেতরে ভেতরে অসুস্থ তাই তার পক্ষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া খুবই সাধারণ। সেই জন্য তিনি কোনো উপায়ে ভদ্রমহিলার হস্তাক্ষর যোগাড় করে সেই লেখার নকলে তিনটে চিঠি লিখলেন। তারপর ভোরবেলা সেই ছুতো করে মিসেস লরিমার বাড়ি ছুটে এলেন। রওনা হবার আগে নিজের পরিচারিকাকে ডেকে পুলিসের কাছে খবর পাঠিয়ে দিতেও ভুললেন না। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম মিসেস লরিমার হাতের লেখার সঙ্গে তিনি পরিচিত কিনা তখন ভদ্রলোক খুব অপ্রস্তুত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন না তিনি পরিচিত নন।