শ্ৰীমতী অলিভার বললেন, আমি ভেবেছিলাম ওরা শেকড়বাকড় নিয়ে নানাধরনের প্রক্রিয়া চালায় খুনের জন্য কিন্তু এখন দেখছি এটা সত্যি নয়।
সুপারিন্টেন্টে ব্যাটেল এ সম্বন্ধে তার বক্তব্য পেশ করলেন। তিনি বললেন, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে তারা সাধারণতঃ সাবেকী আর্সেনিকই পছন্দ করে। এটা অনেক সহজলভ্য তবে মহিলাদের মধ্যে অনেক প্রথম শ্রেণীর অপরাধী আছে যারা সাংঘাতিক জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও খুব মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে।
মিঃ শ্যাতানা হেসে বললেন, বিষই হচ্ছে মহিলাদের প্রধান অস্ত্র।
খুনের ব্যাপারে ডাক্তারদের সুযোগসুবিধা প্রচুর। শ্যাতানার চিন্তার কালোছায়া এই উক্তির জন্য ডাক্তার রবার্টস রাগত স্বরে বললেন, আমি এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করছি তবে ভ্রমক্রমে আমরা কখনো কখনো রুগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াই সেটা নিছকই দুর্ঘটনা।
মিঃ শ্যাতানা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, তবে আমি যদি কাউকে খুন করতে যাই তাহলে আমি সোজা রাস্তাই অবলম্বন করবো যেমন শিকার করতে গিয়ে ভুল করে অন্য কাউকে মেরে বসা; অথবা অন্যমনস্কভাবে কোনো অসুস্থ রোগীকে বিষাক্ত কোনো ওষুধ খাইয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
সারা ঘর নীরব হয়ে গেল।
.
০৩.
সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে ড্রইংরুমে ফিরে এলেন। বেয়ারা কফি দিয়ে গেল। শ্যানা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনারা সবাই আসুন সবাই মিলে ব্রীজ খেলা যাক। ব্রীজের জন্য টেবিল পাতা হলো। পার্টনার নির্বাচন করা হল এবং পুরোদমে তাস খেলা শুরু হয়ে গেল।
মিঃ শ্যাতানার চোখমুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। তিনি আজ মনে মনে ভাবলেন তার অতিথিরা তাকে অফুরন্ত আনন্দের ইন্ধন জোগাচ্ছে।
পোয়ারোকে উদ্দেশ্য করে কর্নেল বললেন, পাঁচটা ডায়মণ্ডের খেলা হলো, তার অর্থ গেম এবং রাবার, তবে ভাগ্য ভালো বলতে হবে, স্পেড লিড পড়লে কি হতো বলা যায় না!
কর্নেল রেস ঘড়িটার দিকে তাকালেন, রাত বারোটা বেজে দশ মিনিট একটা রাবার হতে পারে।
ব্যাটেল রাজী হলেন না। আমার বেশি রাত জাগা সহ্য হবে না।
ক্ষুণ্ণ চিত্তে কর্নেল রেস হিসাব কষতে বসলেন। ফলাফলে মহিলারা হারলেন মোট তিন পাউণ্ড সাত শিলিং।
শ্ৰীমতী অলিভার হাসিমুখে সব হিসেব মিটিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। এবার সবাই বিদায় নেবার জন্য উঠে পড়লেন, সকলেই মিঃ শ্যাতানার ঘরে একে একে প্রবেশ করলেন। তিনি পাশের ঘরে চেয়ারে চোখ বুজে শুয়ে আগুন পোহাচ্ছেন।
কর্নেল রেস শ্যানার চেয়ারের দিকে এগোলেন, বললেন, এবার আমরা বিদায় নেবো মিঃ শ্যাতানা। কিন্তু কর্নেলের কথার কোনো উত্তর দিলেন না মিঃ শ্যাতানা।
সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলেন। পোয়ারো এগিয়ে গিয়ে নিদ্রামগ্ন শ্যানার হাত অল্প তুলে ধরলেন। তারপর ব্যাটেলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনি একটু দেখুন। মিঃ ব্যাটেল শ্যানার কোটের ফাঁকে উঁচু হয়ে থাকা শক্ত জিনিষটা স্পর্শ না করে যতদূর সম্ভব খুঁটিয়ে দেখে অসহায় ভঙ্গিতে বললেন, খুবই দুঃখের সঙ্গে আপনাদের জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে গৃহস্বামী শ্যাতানা মারা গেছেন।
সবাই অস্পষ্ট আর্তনাদ করে উঠলেন, ভদ্রলোক যে প্রকৃতই মারা গেছেন সে বিষয়ে কি আপনি একেবারে নিশ্চিত। ডাক্তার রবার্টস প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন।
ব্যাটেল তাকে বাধা দিলেন, এক মিনিট, ডাক্তার রবার্টস। ইতিমধ্যে কে কে ঘরে প্রবেশ করেছেন।
রবার্টস প্রথমটা হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন। তার মানে?..আপনার কথার মর্মার্থ কিছুই আমি বুঝে উঠতে পারছি না।…আমরা কেউই বাইরে…যাইনি। ভেতরেও কেউ ঢোকেনি।
ব্যাটেল সকলের দিকে তাকিয়ে মাপা তালে মাথা দুলিয়ে বললেন, বুকে ছুরি বসিয়ে ভদ্রলোককে খুন করা হয়েছে। ব্যাটেল লক্ষ্য করলেন প্রত্যেকেরই শরীর ঈষৎ কেঁপে উঠলো। চোখ মুখে আতঙ্ক ভয় ও উত্তেজনার শিহরণ। মেজর ডেসপার্ড অল্প ইতস্ততঃ করে উঠে দাঁড়ালেন। তার দাঁড়াবার ভঙ্গীতে সৈনিকের দৃঢ়তা। আমার মনে হয় আমরা সকলেই কোনো না কোনো সময় ব্রীজ টেবিল ছেড়ে দরজার কাছে গিয়েছিলাম।
ব্যাটেল তাই মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, এই বিষয়ে আলোচনা করবার জন্যে আপনাদের পাশের ঘরে যেতে অনুরোধ করছি।
চারজন ব্রীজ খেলোয়াড় ধীরে ধীরে পাশের ঘরের দিকে এগোলেন।
ব্যাটেল ফোন তুলে হেড কোয়ার্টারে খবর পাঠালেন। স্থানীয় পুলিস বাহিনী এখনই এসে পড়বে। হেড কোয়ার্টারের নির্দেশ, আমি যেন এই তদন্তের ভার গ্রহণ করি।
তারপর পোয়ারোর দিকে ফিরে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, ভদ্রলোক কতক্ষণ আগে মারা গেছেন বলে আপনার মনে হয়।
পোয়ারো বললেন, আমার মনে হয় ঘণ্টাখানেক তো হবেই।
ব্যাটেল অন্যমনস্ক ভাবে বললেন, হত্যাকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্যই বা কি ছিল?
ইতিমধ্যে পুলিস বাহিনী এসে পড়েছে। দরজা ঠেলে ডিভিশনাল সার্জন ঘরে প্রবেশ করলেন। ডান হাতে ঝোলানো চামড়ার ব্যাগ তার পেছনে পুলিস ইনসপেক্টর, সঙ্গে ক্যামেরাম্যান। সবার শেষে পুলিস কনস্টেবল। রুটিন বাঁধা পুলিসী কাজ শুরু হয়ে গেলো।
.
০৪.
ইতিমধ্যে পুরো এক ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে।
মৃতদেহ পরীক্ষা করবার পর বিভিন্ন ভাবে তার ফটো নেওয়া হয়েছে। একজন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশারদও এসেছিলেন।
ব্যাটেল পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে বললেন, আচ্ছা ডিনার পার্টিতে মিঃ শ্যাতানা আপনাকে কি যেন বোঝাতে চেয়েছিলেন।