তা ঠিক, কেন জানি না, আমি নিজে খুব অস্বস্তি বোধ করছি।
ব্যাটেল বলল, কিসের আশঙ্কা করছেন? কিছু একটা নিশ্চয় আপনার মাথায় আছে? তা না হলে সকাল বেলা এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে এখানে চলে এলেন কেন? এবং আপনার কথাতেই আমি কনস্টেবল টার্নারকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালাম, এ অঞ্চলের গ্যাস সরবরাহ যেন কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। মেয়েটা কিছু একটা করে বসতে পারে বলে আপনি সন্দেহ করছেন? তাছাড়া ভাবছি মেরিডিথ কি জানে যে তার বন্ধু মিসেস অলিভারের কাছে একটা গোপন তথ্য ফাস করে দিয়েছে?
পোয়ারো মাথা ঝাঁকালেন, সেই জন্যই বলছি, তাড়াতাড়ি চলুন। এক মুহূর্ত সময়ও এখন অনেক মূল্যবান।
দুজনে দ্রুত পায়ে হেঁটে চললেন। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে দুজনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন, একটা ডিঙিতে রোজা আর অ্যানা নদীর মাঝবরাবর বসে আছেন। তারা হেসে হেসে গল্প করছে। তাদের দৃষ্টি অন্যদিকে নিবদ্ধ।
ঠিক সেই মুহূর্তে সকলের চোখের সামনে অভাবনীয় একটা ব্যাপার ঘটে গেল।
অ্যানা দুহাত বাড়িয়ে সজোরে ধাক্কা মারলেন রোডাকে। রোডা জামার প্রান্ত ধরে টাল সামলাবার চেষ্টা করছে। ঝকানিতে উল্টে গেলো ছোট ডিঙি নৌকাটা। দুজনেই পড়ে গেলো নদীতে।
দেখুন দেখুন! চেঁচিয়ে উঠলেন ব্যাটেল। মিস মেরিডিথ ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরে বন্ধুকে জলে ফেলে দিলো। এটা নিশ্চয় তার চতুর্থ হত্যাকাণ্ড।
তাঁরা দুজনেই দৌড়তে শুরু করলেন, মেজর ডেসপার্ড ছিলেন তাদের আগে।
তিনি জলে আঁপিয়ে পড়লেন। মেয়েদুটি এখন আর এক জায়গায় নেই। স্রোতের টানে পরস্পরের কাছ থেকে তফাতে চলে গেছেন।
মেজর ডেসপার্ড সাঁতরে রোডার দিকে এগিয়ে গেলেন।
ব্যাটেলও ইতিমধ্যে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ডেসপার্ড ততক্ষণে রোডাকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে এসে শুইয়ে দিলেন, এবার অ্যানাকে খুঁজতে লাগলেন কিন্তু তার কোনো চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষে অনেক পরে ব্যাটেল আর ডেসপার্ডের প্রচেষ্টায় অ্যানাকে খুঁজে পাওয়া গেল। তারা ধরাধরি করে তাকে তীরে নিয়ে এলেন।
পোয়ারোর সেবা শুশ্রূষায় জ্ঞান ফিরে এসেছে রোডার। তার পাশেই অ্যানাকে শোয়ানো হলো। ব্যাটেল যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাসচালু করবার চেষ্টা করলেন। তাকে সাহায্য করবার জন্য মিঃ পোয়ারো দাঁড়িয়ে রইলেন।
মেজর ডেসপার্ড জিজ্ঞাসা করলেন, এখন কিছুটা সুস্থ আছেন তো?
রোডা স্বপ্নচ্ছন্ন কণ্ঠে উত্তর দিলেন, আপনি…আমায় বাঁচিয়েছেন! বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। ডেসপার্ডের চোখের সামনে একটা অলৌকিক ছায়াছবি ভেসে উঠলো।
.
৩০.
পোয়ারোর কণ্ঠস্বর গম্ভীর। তারা তখন লণ্ডনের সীমান্ত দিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে যাচ্ছিলেন।
তিনি রোডাকে বললেন, অ্যানা তোমায় ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা মেরে জলে ফেলে দিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত।
রোডা উত্তর দিলেন, কিন্তু…কিন্তু কেন?
পোয়ারো মিনিট দুয়েক কোনো উত্তর দিলেন না। অ্যানাকে প্ররোচিত করার পেছনে মেজর ডেসপার্ডের মন্তব্যের উদ্দেশ্য আছে তা তিনি জানেন।
মিঃ ব্যাটেল বললেন, আপনাকে প্রস্তুত হয়ে নিতে হবে, মিস দোয়স। এবার যা বলবো তাতে আপনি নিদারুণ আঘাত পাবেন। আপনার বন্ধু একজন খুনী। তিনি যে মিসেস বেনসনের বাড়ি কাজ করতেন তাকে সুপরিকল্পিতভাবে মিস মেরিডিথই হত্যা করেছিলেন।
এসব আপনি কি বলছেন? অ্যানাই বোতল দুটি বদলে রেখেছিলো? এ হতে পারে!
তার পেছনেও যুক্তি ছিলো, মিঃ ব্যাটেল এবার উত্তর দিলেন।
সে যাইহোক, অ্যানার ধারণা একমাত্র আপনি আমাদের কাছে এ ঘটনার হদিশ দিতে পারেন। তাই আপনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলো।
বন্ধু হিসেবে মিস মেরিডিথ যে খুব ভালো ছিলো না এতে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। গাড়িটা একটা বাড়ির দোরগোড়ায় এসে থামলো।
এটা হচ্ছে পোয়ারোর বাড়ি। চলুন আমরা সকলে এখানে সমস্ত বিষয়টা আলোচনা করি।
পোয়ারো ড্রইংরুমে ঢুকতে না ঢুকতেই শ্রীমতি অলিভার তাদের স্বাগত জানালেন। ইতিপূর্বে ডাক্তার রবার্টসও সেখানে হাজির হয়েছেন।
আসুন আসুন, শ্রীমতী অলিভার এমন অমায়িক ভঙ্গিমায় সকলকে আহ্বান জানালেন যাতে মনে হয় এটা যেন তারই নিজের বাড়ি, পোয়ারোর নয়। আপনার টেলিফোন পাওয়া মাত্রই আমি রবার্টসের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তারপর দুজনে একসঙ্গে এখানে হাজির হই।
পোয়ারো মৃদুস্বরে বললেন, এই রহস্যময় হত্যার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অবশেষে আমরা মিঃ শ্যাতানার হত্যাকারীকে আবিষ্কার করতে পেরেছি।
মিসেস অলিভারও আমাকে এই কথা জানালেন। সুন্দরী মেরিডিথই এই অপকীর্তির মূল সেটা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য। তাকে তো খুনী বলে আমি কোনোদিন ভাবতেও পারিনি।
আজকের দিনটা আমার ডায়রীতে একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে, রবার্টস বললেন। প্রথমে মিসেস লরিমার পত্র। সেটি নিশ্চয় জাল চিঠি, তাই না?
নিঃসন্দেহে; তিনটে চিঠিই জাল।
মিস মেরিডিথ কি নিজের নামেও একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন?
সেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। নকলটাও যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে করা হয়েছিলো। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয় এই ভাওতায় ভুলতেন না। আমার অযাচিত কৌতূহল মাপ করবেন মঁসিয়ে পোয়ারো। মিসেস লরিমার মৃত্যুটা যে আত্মহত্যা নয় সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড সে কথা আপনি প্রথম সন্দেহ করলেন কিভাবে? অ্যানা মেরিডিথ যে আগের দিন সন্ধ্যায় মিসেস লরিমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন এ খবর বোধহয় তার কাছ থেকে প্রথম জানতে পারেন।