তিনি রিসিভার তুলে ব্যাটেলকে ফোন করলেন, ব্যাটেল ভরাট কণ্ঠে বললেন, মিস মেরিডিথের সঙ্গে অনতিবিলম্বে একবার দেখা করা প্রয়োজন। এবং সেটা খুব জরুরী।
পোয়ারো চিন্তান্বিত চিত্তে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন। অবশেষে ভয় ভাবনা দূরে ঠেলে ঘুম চোখে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলেন।
আগামী প্রভাত তার সামনে কি রূপে দেখা দেবে সে সম্বন্ধে কোনো ধারণা করে উঠতে পারলেন না।
.
২৮.
ব্যাটেল পোয়ারোকে ফোন করলেন। হ্যালো মিঃ পোয়ারো, মিসেস লরিমার কি খবর জানেন? তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
নানাকারণে ভদ্রমহিলা ইদানীং খুব ভেঙে পড়েছিলেন। তার শরীরও ভালো যাচ্ছিল না। তিনি ডাক্তারের চিকিৎসা মত ঘুমের বড়ি খেতেন কিন্তু গতরাত্রে একসঙ্গে অনেকগুলো বড়ি খাওয়ার ফলে তার মৃত্যু হয়। তিনি আত্মহত্যা করবার আগে তিনজনকে তিনটি চিঠি লিখে যান। ডাক্তার রবার্টস, মেজর ডেসপার্ড, আর মিস মেরিডিথ।
তিনি তাদের জানান তিনিই শ্যাতানার হত্যাকারী আর এর জন্য যে তাদের নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তার জন্য তিনি প্রত্যেকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
মিনিট দুয়েক পোয়ারো কোনো কথা বললেন না। রিসিভার ধরে বসে রইলেন।
তাহলে এই হলো মিসেস লরিমার অন্তিম সিদ্ধান্ত। সত্যিই অসাধারণ মহিলা। মিসেস লরিমার প্রতি শ্রদ্ধা আরো নিবিড় হলো।
ব্যাটেলের কণ্ঠস্বরে পোয়ারোর ধ্যানভঙ্গ হলো, গত সন্ধ্যায় কি বলেছিলেন? ভদ্রমহিলাকে সন্দেহ করছি বলে কি কিছু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
পোয়ারো মৃদুকণ্ঠে বিড়বিড় করলেন। আমারই ধারণায় কোনো ভ্রান্তি ছিলো।
আপনি ভুল করেছিলেন, ব্যাটেল প্রশ্ন করলেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও প্রমাণ করবার ক্ষমতা আপনার ছিলো না।
ঠিক কি ঘটেছিলো পরিষ্কার করে খুলে বলুন তো?
সকাল আটটার ডাকে রবার্টস এই চিঠি পান। তিনি আর কালবিলম্ব না করে তাঁর নিজের গাড়িতে চড়ে মিসেস লরিমার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পড়েন। কিন্তু পরিচারিকার মুখে শোনেন ভদ্রমহিলা তখনো ঘুম থেকে ওঠেননি। তিনি দ্রুতপায়ে ঘরে গিয়ে দেখেন সব শেষ।
ডিভিশনাল সার্জেনেরও তাই মত। ঘুমের ট্যাবলেটই তার মৃত্যুর কারণ।
ডেসপার্ড শহরের বাইরে গেছেন; আজ সকালের ডাক তার হাতে পৌঁছয়নি।
আর মিস মেরিডিথ? অল্প আগে তাকে ফোন করেছিলাম, তিনি খবরটা শুনে দুঃখপ্রকাশ করলেন বটে তবে তিনি যে স্বস্তিবোধ করছেন এটা তার গলার স্বরে টের পাওয়া যায়।
পোয়ারো যখন অকুস্থলে হাজির হলেন রবার্টস তখন প্রস্থানের উপক্রম করছেন।
কি জঘন্য কাণ্ড মিঃ পোয়ারো। শান্ত স্বভাবের সম্ভ্রান্ত ঘরের মহিলা, তিনি যে এমন একটা কাজ করতে পারেন তা ভাবা যায় না।
তবে ঘটনাটা আপনাকে অনেকখানি হাল্কা করে দিয়েছে।
পোয়ারো মিসেস লরিমার দাসীকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন দাসী সবিস্তারে উত্তর দিল:
গতকাল আপনি বিদায় নেবার পর আর একজন অল্পবয়সী মহিলা তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। মনে হয় সেই কারণে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।
পোয়ারো দাঁড়িয়ে পড়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কতক্ষণ ছিলেন মহিলা।
প্রায় ঘণ্টাখানেক।
বসবার ঘরের টেবিলের ওপর ডাকে পাঠাবার জন্য গোটাকতক চিঠি পড়ে ছিলো।
সেগুলি নিয়ে আমি ডাকে ফেলে দিয়ে আসি। মোট তিনটে চিঠি ছিলো।
পোয়ারো গম্ভীর ভাবে বলল, ঘুমের বড়ির শিশিটা কোথায় থাকতো?
তার শোবার ঘরের ছোট জাল আলমারিটার মধ্যে।
ভাগ্য আমাদের বিরুদ্ধে নইলে ঘণ্টাদুয়েক আগে টের পেলে ভদ্রমহিলাকে বাঁচানো যেত। ডিভিশনাল সার্জেন হতাশভাবে বললেন।
ভদ্রমহিলা কি মিঃ শ্যাতানাকে খুন করেছিলেন তা জানি না, হয়তো কোনো সঙ্গত কারণ ছিলো।
তিনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামবার উদ্যোগ করলেন, এক মিনিট, ডাক্তার-ব্যাটেল ডেকে উঠলেন।
পোয়ারো শয়নকক্ষের দিকে এগিয়ে গেলেন, আমি কি ভেতরে ঢুকে মৃতদেহটা দেখতে পারি।
অবশ্যই। ব্যাটেল সম্মতি জানালেন। আমাদের পরীক্ষা শেষ।
প্রাণহীন দেহটা বিছানার ওপর পড়ে আছে। মৃতদেহের বাঁ হাতের মাঝখানে একফোঁটা বিবর্ণ রক্তচিহ্ন। সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালেন পোয়ারো, তিনি দ্রুত পায়ে ঘর ত্যাগ করে নিচে নেমে এলেন। পোয়ারোকে রীতিমতো উত্তেজিত মনে হলো। তিনি ব্যাটেলের হাত ধরে বললেন, চলুন এক্ষুনি উইলিংফোর্ড যাবার ব্যবস্থা করুন। আমি আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি মেরিডিথ তরুণী হলেও সাংঘাতিক এবং বিপজ্জনক। এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার।
.
২৯.
রোডা অ্যানাকে ডাকলেন। অ্যানা চেয়ারে সোজা হয়ে উঠে বসলেন, রোজা তাকে বলল, মিঃ ব্যাটেল এখানে আবার আসছেন।
তাকে বেনসনের ব্যাপারটা বলে দেওয়া ভালো, এটা লুকানোর কোনো দরকার নেই।
মেজর ডেসপার্ডও আসছেন বেশ মজাই হলো দেখছি। মেজর ডেসপার্ড এগারোটায় আসবেন বলে চিঠিতে জানিয়েছেন।
দশ মিনিট বাদেই মেজর ডেসপার্ড এসে পৌঁছোলেন। কিন্তু রোডা ও অ্যানা একটু বাইরে বেড়াতে গেছে শুনে বেশ অবাক হয়ে গেলেন।
এদিকে অ্যানার দাসী সবে কাজে হাত লাগাতে যাবে এমন সময় আবার কলিংবেল বেজে উঠলো। দাসী দরজা খুলে দেখেন দুজন ভদ্রলোক মেরিডিথের খোঁজে এসেছেন কিন্তু মেরিডিথ নেই শুনে কোথায় গেছে খোঁজ করলেন। এবং দাসীর মুখে শুনে সেই দিকেই যাওয়ার উদ্যোগ নিলেন।
পোয়ারো আর ব্যাটেল তখন বাঁ-হাতের পথ ধরে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন। পোয়ারোকে উত্তেজিত ভঙ্গিতে দ্রুত পায়ে হাঁটতে দেখে ব্যাটেল প্রশ্ন করলেন, অতো তাড়া কিসের মঁসিয়ে পোয়ারো? মনে হচ্ছে আপনি যেন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন?