একটা ছিল সিরাপের বোতল। তিনি সেটা পান করতেন। আর একটায় ছিল টুপির পালিশ জিনিষটা। খুবই বিষাক্ত। যে বোতলে টুপির পালিশ ছিল সেই বোতলটি একদিন হাত থেকে পড়ে চিড় খেয়ে যায়। তখন ভদ্রমহিলা তার দাসীদের বলেন একটা খালি সিরাপের বোতলে যেন ওই টুপির পালিশটি ঢেলে উঁচু তাকে রাখা হয়।
ঘটনার দিন রাত্রে ভদ্রমহিলা একটা পাত্রে বেশ কিছুটা সিরাপ ঢেলে পান করেন। কিন্তু সেটা সিরাপ নয়, টুপির পালিশ। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে খবর পাঠানো হয়। কিন্তু ডাক্তার আসতে আসতে ভদ্রমহিলা মারা যান।
সুপারিন্টেন্টে ব্যাটেল আপন মনে চিন্তা করতে লাগলেন, ব্যাপারটা কতই সহজ, কত নিখুঁত, নিপুণ একটা খুন। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নটাই তাকে জটিল ধাঁধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
ব্যটেল তথ্যের জন্য আরো দু-চার জায়গায় ঘোরাফেরা করলেন কিন্তু কোনো প্রয়োজনীয় খবর সংগ্রহ করতে পারলেন না। যতখানি আশা নিয়ে ডেভনশায়ারে ছুটে গিয়েছিলেন ততখানি অবশ্য পূরণ হলো না। ব্যাটেল মনে মনে ভাবলেন মিসেস বেনসনের টাকা কড়ি, বিষয় সম্পত্তি কারা পেয়েছে? অ্যানা কি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবার উদ্দেশ্যেই ভদ্রমহিলাকে খুন করলেন। অ্যানা মেরিডিথ একসময় এখানে থাকতো সে কথাটাই বা গোপন করতে গেলো কেন? ব্যাটেলের সন্দেহ ক্রমশ ঘনীভূত হলো।
.
২৩.
সকালের ডাকেই পোয়ারোর আমন্ত্রণপত্র অ্যানার হাতে পৌঁছেছিলো, তার আসবার ইচ্ছা আদৌ ছিল না।
রোডাই একরকম জোর করে টেনে নিয়ে এলেন। রোডা অ্যানাকে বলল, সন্দেহভাজনদের মধ্যে তুইও একজন, অবশ্য বিচার করলে সন্দেহটা তোর ওপর সবচেয়ে কম।
অ্যানা ঠাট্টার সুরে বলল, রহস্য গোয়েন্দা উপন্যাসে দেখিস না, যার ওপর আদৌ কোনো সন্দেহ জাগে না সেই কিন্তু প্রকৃত অপরাধী।
তাহলেও সন্দেহভাজনদের মধ্যে তুইও একজন, রোডা তাকে ঠাট্টা করল।
অ্যানা তাকে বোঝাবার চেষ্টা করল যে এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই। পুলিসের কাছে আমি যে কোনো প্রশ্নের দিতে রাজী আছি। কিন্তু এরকুল পোয়ারো সে তো বাইরের লোক তবুও তাকে জবাবদিহি করতে যেতে হবে।
যাইহোক রোডা আর অ্যানা যখন পোয়ারোর বাড়িতে হাজির হলেন তখন বিকেল তিনটে। পোয়ারো তাদের ডেকে নিয়ে ঘরে বসালেন, সরবত দিলেন।
আপনারা আমার আমন্ত্রণ পাওয়া মাত্র হাজির হওয়াতে আমি খুব খুশী। যাইহোক এবার আসল কথায় আসা যাক।
শান্ত বিনয়ের ভঙ্গিতে কথা শুরু করলেন পোয়ারো। ম্যাডাম, আপনি একটু কষ্ট করে সেদিন সন্ধ্যায় মিঃ শ্যাতানার ড্রইংরুমটা স্মরণে আনার চেষ্টা করুন। সেখানে কি কি দেখেছেন, কোন কোন বস্তুর কথা সঠিক আপনার মনে পড়ছে, এই আর কি?
অ্যানা ভ্রু কুঁচকে বললেন, ব্যাপারটা খুবই কঠিন। সবটা মনে করতে পারবো বলে মনে হয় না তবুও বলতে চেষ্টা করছি। দেওয়ালে মাঝে মাঝে কাজ করা ছিলো, মেঝের ওপর অনেক মূল্যবান কম্বল পাতা ছিলো, একপাশে একটা বড় আকারের পিয়ানো ছিলো। হতাশভাবে মাথা নাড়লেন অ্যানা, না, আপাতত আর কিছু মনে পড়ছে না।
পোয়ারো মৃদুস্বরে জানালেন, মিঃ শ্যাতানা একজন বিখ্যাত সংগ্রাহক ছিলেন, জীবনভোর নানা, দুষ্প্রাপ্য জিকির জানালেন, মিঃ শসপাতত আর কিছু মন্ন আকারের পিয়ানেওপর
হ্যাঁ, নিশ্চয়। ঘরটা তো হাজার রকমের জিনিষপত্রে ঠাসা।
তাহলে আপনি এমন কোনো বস্তুর নাম করতে পারছেন না যা বিশেষভাবে আপনার নজরে পড়েছিলো।
অ্যানা নিচু গলায় বললেন, আশঙ্কা হচ্ছে আমিও হয়তো আপনার অভীষ্ট বস্তুটিকে ঠিকমতো নজর দিয়ে দেখিনি।
মৃদু হাসলেন পোয়ারো। তাতে কিছু যায় আসে না। হ্যাঁ, ভালো কথা, মেজর ডেসপার্ডের সঙ্গে সম্প্রতি আপনার সাক্ষাৎ হয়েছে?
অ্যানা বললেন, না, তবে ভদ্রলোক শীগগিরই একদিন এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন। পোয়ারো হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, চলুন মিস দোয়স, আপনাকে একটা জিনিষ দেখিয়ে আনি।
রোডা কৌতূহলী কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, জিনিষটা কি?
পোয়ারো নিচু স্বরে বললেন, একটা ছোরা, এই ছোরাটার সাহায্যে বারোজন লোককে হত্যা করা হয়েছিল। আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক হোটেলের মালিক আমাকে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে উপহার দিয়েছিলেন। আলমারী খুলে ছুরিটা দেখাতেই মিনিট তিনেক কেটে গেলো। তারপর রোডাকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় পাশের ঘরে হাজির হলেন। এইবার রোডা ও অ্যানা বিদায় নেবার জন্য উঠে পড়ল।
পোয়ারো তাদের আর এক পাত্র সিরাপ পানের অনুরোধ জানালেন। তারা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলেন সে অনুরোধ পোয়ারো হাসিমুখে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন।
.
২৪.
ব্যাটেল বেশি ভনিতা না করে সরল ভাষায় তার ডেভনশায়ার অভিযানের আগাগোড়া ইতিবৃত্ত খুলে বললেন।
এদিকে… মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন, আজ বিকেলে আমি একটা ছোট্ট পরীক্ষা চালিয়েছি। মিস মেরিডিথকে আমন্ত্রণ জানিয়ে পুরানো প্রশ্নই জিজ্ঞেস করলাম, শ্যাতানার ড্রইংরুমে কি কি দেখেছিলেন।
মিস মেরিডিথ খুবই সন্দেহপ্রবণ। সেইজন্য পোয়ারোকে চমৎকার ফাঁদ পাততে হলো। মেরিডিথ গয়নার বাক্সের কথা বলতেই আমি তার কাছে ছুরিটার বিষয় জানতে চাইলাম। এর বিপরীত দিকের টেবিলেই যে ছুরিটা পড়েছিলো, সেটা তার দৃষ্টিগোচর হয়েছিলো কিনা। সুকৌশলে আমার ফাঁদ এড়িয়ে গেলো মেরিডিথ। তবে তার কথাবার্তার মধ্যে একটা চারিত্রিক গড়নের আভাস পাওয়া যায়। যেমন সে গরীব কিন্তু সৌখিন সাজপোষাক করতে ভালোবাসে। ছোট ছোট সুন্দর বস্তুর ওপর দারুণ লোভ। মনের গড়নটা হত্যাকারীর নয়, বরঞ্চ চোরের সঙ্গেই বেশি খাপ খায়। মেরিডিথের চরিত্রে একটা দুর্বলতা আছে যে সে স্টেশনারী দোকান থেকে টুকিটাকি জিনিষপত্র চুরি করে।