অলিভার এবার প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা মিঃ ব্যাটেল, আপনি এই খুনের তদন্তের ব্যাপারে কিভাবে এগোচ্ছেন।
ব্যাটেল ধীরে ধীরে শুরু করলেন, প্রথমে আমি এই কথাই বলবো যে মিঃ শ্যানার হত্যাকারী কে তা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমার লোক সন্দেহভাজন চারজনের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। এবার মিঃ ব্যাটেল পোয়ারোকে জিজ্ঞাসা করলেন, এদের কারোর অতীত জীবন সম্বন্ধে কিছু জানতে পারলেন?
হা ডাক্তার রবার্টসের কোনো নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কারো আকস্মিক মৃত্যু ঘটেনি। তবে অনেক তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে একটিমাত্র ঘটনার সন্ধান আমি পেয়েছি যার সঙ্গে বর্তমান মামলার কোনো যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে। কয়েক বছর আগে ডাক্তার রবার্টস কোনো মহিলা পেশেন্টের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এবং এর জন্য সেই পরিবারে গণ্ডগোলের সূত্রপাত দেখা দেয়। ভদ্রমহিলার স্বামী অতিশয় ক্রুদ্ধ হয়ে রবার্টসকে খুব শাসিয়ে ছিলেন। ভদ্রলোক এই ঘটনার অল্প কিছুদিন বাদেই অ্যানথ্রক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
সন্দেহজনক একটিমাত্র সূত্র যা আমি পেয়েছি; ছোট হলেও তা খুব মূল্যবান।
ব্যাটেল এবার অন্যদের সম্বন্ধে বলতে লাগলেন, বছর কুড়ি হলো মিসেস লরিমা বিধবা হয়েছেন। ভদ্রমহিলা অধিকাংশ সময় লণ্ডনে বাস করেন। কোনো রহস্যময় মৃত্যুর সঙ্গে তার কোনো সংযোগ নেই। তার মতো সম্ভ্রান্ত মহিলার যেভাবে থাকা উচিত তিনি তাই করেছেন। ব্যাটেল হতাশভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর মিস মেরিডিথ তার পিতা সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন। মৃত্যুকালে মেয়ের জন্য কিছু রেখে যাননি ফলে তাকে নিজেই অন্নের সংস্থান করতে হয়।
প্রত্যেকেই মেয়েটির জন্য আন্তরিক দুঃখিত। মেজর ডেসপার্ডের কি খবর? তার সম্বন্ধে কতদূর কি জানতে পারলেন? প্রশ্ন করলেন শ্রীমতী অলিভার।
ব্যাটেল বললেন, আমার লোক তার উপর সবসময় নজর রেখে দিয়েছে। হ্যাঁ ভালো কথা ডেসপার্ড কোনো সুযোগই হাতছাড়া করতে রাজী নন। ইতিমধ্যে সলিসিটরের পরামর্শ নিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে তিনি বিপদের আশঙ্কা করেন।
পোয়ারো মন্তব্য করলেন, যে কোনো অবস্থার জন্য তিনি নিজেকে প্রস্তুত রাখেন।
সেইজন্যই তিনি কারো বুকে ছুরি বসাতে পারেন এটা ভাবা যায় না। মিঃ ব্যাটেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।
পোয়ারো মৃদু হেসে বললেন, আপনাদের একটা বিশেষ কথা জানাই। ডাক্তার রবার্টস এবং মিসেস লরিমার সঙ্গে আমি দেখা করেছি। মেজর ডেসপার্ডের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে। বাকি কেবল মিস মেরিডিথ। এই তিনজনের সঙ্গে কথা বলে আমি এইটুকুই জেনেছি ডাক্তার রবার্টস চারিদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেন।
মিসেস লরিমারের মানসিক একাগ্রতা মাত্রাতিরিক্ত বেশি।
পোয়ারো বললেন, এগুলি ক্ষুদ্র নগণ্য হলেও এগুলো তথ্য। হ্যাঁ, আমার তালিকায় সকলের শেষে মিস মেরিডিথের নাম।
মিঃ ব্যাটেল পোয়ারোকে একটি কাজের ভার দিলেন। কাজটা হচ্ছেঅধ্যাপক ল্যাক্সমোরের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। তিনি নিজে এই দায়িত্ব নিতে পারছেন না। কারণ আগামীকাল তাকে ডেভনশায়ার রওনা দিতে হবে। ব্যাটেল একটুকরো কাগজে একটা নাম ঠিকানা লিখে পোয়রোর হাতে দিলেন, এই হচ্ছে ল্যাক্সমোরের ঠিকানা। ভদ্রমহিলাকে একবার ভালো করে বাজিয়ে দেখুন। অধ্যাপক ল্যাক্সমোরের প্রকৃত মৃত্যুরহস্য আমি জানতে চাই।
পোয়ারো চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। কিন্তু মঁসিয়ে ব্যাটেল, এই নশ্বর পৃথিবীতে কেউ কি কখনো কোনো বিষয়ে প্রকৃত সত্য অবগত করতে পেরেছে?
.
মিঃ পোয়ারো একদিন মিসেস ল্যাক্সমোরের বাড়িতে গেলেন। পকেট থেকে কার্ড বার করে দাসীর হাতে দিলেন। এটা তোমার কত্রীর কাছে নিয়ে যাও।
কিছুক্ষণ বাদে দাসীটি হাঁফাতে হাঁফাতে ছুটে এসে পোয়ারোকে ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলো।
একজন সুন্দরী মহিলা আগুনের চুল্লীর কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি পোয়ারোর দিকে এগিয়ে এসে ধরা ধরা গলায় প্রশ্ন করলেন, আপনিই মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো?
পোয়ারো মাথা নত করে অভিবাদন জানালেন।
আমার কাছে আপনার কি প্রয়োজন?
ম্যাডাম আমি মাঝে মধ্যে বেসরকারী ভাবে অনুসন্ধানের কাজ করে থাকি।
হ্যাঁ, বুঝেছি আপনি বলুন?
পোয়ারো বললেন, আমি অধ্যাপক ল্যাক্সমোরের মৃত্যুর বিষয়ে কিছু তদন্ত করতে চাই।
ভদ্রমহিলা এবার চমকে উঠলেন এবং রীতিমত ভয়ে বলে উঠলেন, কিন্তু কেন?
পোয়ারো উত্তর দিলেন–আপনার কীর্তিমান স্বামীর জীবনকাহিনী নিয়ে একটা বই লেখা হচ্ছে তাই লেখক সমস্ত তথ্য অবগত হতে চান।
ভদ্রমহিলা এবার দ্রুত বলে ফেললেন, আমার স্বামী কালাজ্বরে মারা যান। আমাজন নদীর ধারে তাকে কবর দেওয়া হয়।
পোয়ারো গম্ভীর স্বরে বললেন, কিন্তু আমি পরলোকগত শ্যাতানার কাছ থেকে অনেকরকম খবর সংগ্রহ করেছি। আপনার স্বামী যে কালাজ্বরে মারা যাননি তা মিঃ শ্যাতানা ভালোভাবেই জানতেন।
অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে ভদ্রমহিলা শুরু করলেন, হ্যাঁ আমার স্বামী বন্দুকের গুলিতে মারা যান।
আমার স্বামী ছিলেন উদ্ভিদবিদ। তিনি তখন লতা গুল্ম নিয়ে একটি বই লিখছিলেন। তাই মেজর ডেসপার্ডের সাথে পরিচয় হলে আমরা সদলবলে ঐ অঞ্চলে যাত্রা শুরু করলাম।
মিসেস ল্যাক্সমোর ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, সত্যি কথা বলতে কি আমার স্বামী ছিলেন বয়সে আমার থেকে দ্বিগুণ বড়। আমার সাথে জন ডেসপার্ডের সম্পর্ক ছিল নীরব প্রেমের। আমরা ঠিক করে ছিলাম, বেদনায় হৃৎপিণ্ড পিষ্ট হয়ে গেলেও আমরা মুখ ফুটে সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর কথাটাকে উচ্চারণ করবো না।