শ্ৰীমতী অলিভার নিশ্চিন্ত করলেন রোডাকে–তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি বলবো না তোমার বন্ধুকে।
টোস্ট আর কফি খেয়ে উঠে দাঁড়ালেন রোভা, এমনভাবে আচমকা হানা দিয়ে হয়তো আপনার কাজের ক্ষতি করলাম আর বেশি বিরক্ত করব না।
শুভ রাত্রি…বলে রোডা বিদায় নিলেন।
.
১৮.
মিসেস লরিমা দরজা পেরিয়ে পা-বাড়ালেন রাস্তায়। তার সারা মুখে এক অদ্ভুত অভিব্যক্তির ছাপ।
ঠিক সেই মুহূর্তে বিপরীত দিকের ফুটপাতে অ্যানা মেরিডিথের ওপর তার দৃষ্টি পড়লো। মিসেস লরিমা সামান্য ইতস্ততঃ করলেন। তারপর রাস্তা পেরিয়ে এগিয়ে গেলেন, কেমন আছেন, মিস মেরিডিথ?
অ্যানা চমকে ফিরে তাকালেন, ওঃ, আপনি! অনেকদিন বাদে আবার দেখা হলো।
মিস মেরিডিথের দৃষ্টি তখনো সেই ফ্ল্যাটবাড়ির দিকে নিবদ্ধ।
মিসেস লরিমা প্রশ্ন করলেন, ওদিকে ঘন ঘন তাকাচ্ছেন কেন?
অ্যানা ধরা পড়ে যাওয়ার কণ্ঠে বললেন, না, না, ও কিছু নয়। তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। তবে আমার বন্ধু রোডাকে এই বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দেখলাম তাই ভাবছি ও কি মিসেস অলিভারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল?
মিসেস লরিমা বললেন, ওসব থাক চলুন আমরা একটু চা খাই সামনের ঐ দোকানে বসে।
পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে তারা দুজন একটা রেস্তোরাঁয় এসে ঢুকলেন।
মিসেস লরিমা মাথা নাড়লেন। মঁসিয়ে পোয়ারো ছাড়া আর কেউ যাননি, কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে আবার প্রশ্ন করলেন অ্যানা, মিঃ ব্যাটেল তাহলে নিশ্চয় গিয়েছিলেন?
হা তিনি আমার সঙ্গে দেখা করে গেছেন। অ্যানা প্রশ্ন করলেন, ভদ্রলোক কি বিষয়ে জানতে চাইলেন?
মিসেস লরিমা ইতস্ততঃ করে বললেন, নিয়ম মাফিক তদন্ত আর কি।
আচ্ছা মিসেস লরিমা, আপনার কি মনে হয় শেষপর্যন্ত প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়বে?
তিনি শান্ত সুরে বললেন, ঠিক বুঝতে পারছি না সমস্যাটি বড় জটিল। একই সুরে তিনি বললেন, জীবন বড় জটিল, পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে গেলে দুটি জিনিষের একান্ত প্রয়োজন প্রথম হচ্ছে অফুরন্ত সাহস; দ্বিতীয়, অসীম সহ্য শক্তি, এবং শেষ লগ্ন সামনে এলে সকলেই ভাবে সত্যই এর কি কোনো প্রয়োজন ছিলো?
অমন ভাবে বলবেন না। ভীত কণ্ঠে বাধা দিলেন অ্যানা।
মিসেস লরিমা হেসে উঠলেন, জীবন সম্বন্ধে এ ধরনের অভিব্যক্তি হয়তো খুবই সাধারণ। তিনি বেয়ারাকে বিল মিটিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
উজ্জ্বল হাসি হেসে অ্যানা বললেন, ওই যে রাস্তার মোড়ে রোডা দাঁড়িয়ে আছে, আচ্ছা চলি নমস্কার। অ্যানা দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল রোডার দিকে।
রোডা তুই মিসেস অলিভারের কাছে গিয়েছিলি?
রোডা উত্তর দিল, হা গিয়েছিলাম।
অ্যানা বিরক্তি চেপে প্রশ্ন করলেন, কিন্তু কেন?
রোডা উত্তর দিলেন, তিনি তো আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছিলেন, তাছাড়া ভদ্রমহিলার মধ্যে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। এমন সুন্দর মহিলা আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি। এই দেখ আমাকে তার একটা বইও উপহার দিলেন। রোডা হাসিমুখে বইটা বার করে অ্যানাকে দেখালেন। রোডা এবার অ্যানাকে অন্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা তোর সলিসিটর ভদ্রলোককে কেমন দেখলি?
খুব কাঠখোট্টা গোছের, আইনের প্যাঁচ পয়জার সব একেবারে কণ্ঠস্থ।
আর মেজর ডেসপার্ডকে কেমন মনে হলো?
ভারী দয়ালু ভদ্রলোক, অ্যানা বলে উঠল।
তাহলে তিনি নিশ্চয় তোর প্রেমে পড়ছেন এতে আমার আর কোনো সন্দেহ নেই।
রোডার কথা শুনে অ্যানা মৃদু রাগত স্বরে রোডাকে বললে, আবোলতাবোল বকিস না।
ঠিক আছে, ঠিক আছে, সামনের ঐ বাসটা প্যাডিংটনে যাবে। চারটা পঞ্চাশে ছাড়বার কথা, চল আমরা এগিয়ে যাই।
.
১৯.
আমি সার্জেন্ট ওকোনার, ব্যাটেলের নির্দেশমতো আপনাকে ফোন করছি। সকাল এগারোটায় যদি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে তার সঙ্গে একবার দেখা করেন।
পোয়ারো সম্মতি জানিয়ে ফোন নামিয়ে রাখলেন।
ঠিক সাড়ে এগারেটায় ট্যাক্সি থেকে অবতরণ করলেন পোয়ারো। তারপর দুজনে সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে রওনা হলেন। ব্যাটেলের বসবার ঘরে সবাই বসলেন। ব্যাটেল এসে প্রত্যেকের সঙ্গে করমর্দন করলেন। তারপর তিনজনে তিনটে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন।
ব্যাটেল বললেন, আমার মনে হয় এখন আমাদের মধ্যে একবার আলাপ আলোচনা হওয়া দরকার। কিন্তু কর্নেল রেস এখনও এলেন না। বলতে বলতে দরজা ঠেলে কর্নেল রেস ঘরে ঢুকলেন।
আমি খুবই দুঃখিত; একটু দেরি করে ফেললাম। বলেই তিনি বলতে শুরু করলেন, মেজর ডেসপার্ডের বিষয়ে কিছু খবর সংগ্রহ করে এনেছি এই নিন। কর্নেল রেস কতকগুলি টাইপ করা কাগজ ব্যাটেলের দিকে এগিয়ে দিলেন। ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। শক্ত সমর্থ বলিষ্ঠ পুরুষ। সর্বদা সভ্য সমাজের আইনকানুন মেনে চলেন। বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন। দূরদৃষ্টি আছে এবং সবিশেষ নির্ভরযোগ্য।
এত প্রশংসাতেও ব্যাটেল তেমন বিচলিত হলেন না। জিজ্ঞেস করলেন, কোনো দুর্ঘটনা বা আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে কিনা? ব্যাটেল অধৈর্যভাবে মাথা নাড়লেন। মানুষ তার নিজের হাতে আইন তুলে নেবে এটা কখনোই সভ্য সমাজে চলতে দেওয়া যেতে পারে না।
কর্নেল রেস এবার উঠে দাঁড়ালেন, আপনাদের আলোচনায় বেশিক্ষণ যোগ দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আমার অনেক কাজ বাকি আছে। বিদায় জানিয়ে কর্নেল রেস চলে গেলেন। তিনি যে নথিপত্র রেখে গেছেন মিঃ ব্যাটেল তার মধ্যে চোখ ডোবালেন। আর মাঝে মাঝে নিজের প্যাডে পেন্সিল দিয়ে নোট করে নিলেন কিছু কিছু।